কবিরা গুনাহ কি - ১০০ টি কবিরা গুনাহ
আমরা জানি খারাপ কিছু করা বা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামবিরোধী কোন কিছু করাই পাপের শামিল। তাই সকল মুসলমান ব্যক্তির উচিত কুরআন ও হাদিস মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। আমাদের জীবন পরিচালনার সময় অনেক গুনাহ করে থাকে কিন্তু আমরা জানিনা কোন কাজে কোন গুনাহ এবং গুনাহর পরিমাণ কতটুকু। আমরা সবসময় সত্যের পথে চলার চেষ্টা করব তাহলে পরকালে অবশ্যই শান্তির স্থান হিসেবে জান্নাত লাভ করতে পারব।
ইসলাম সবসময় একজন মানুষকে প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি করে গড়তে চাই। আর এই ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে গড়তে হলে অবশ্যই নিজের ভিতর কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান থাকতে হবে। আজকে আমরা গুনাহ সম্পর্কে জানব এবং কবিরা গুনাহ কি সেগুলো বিষয়ে আলোকপাত করব।
কবিরা গুনাহ কি
আমরা অনেকেই জানিনা কবিরা গুনাহ সম্পর্কে বলতে কী বোঝায়, তাই আজকে আপনাদের সামনে কবিরা গুনাহ কি এবং কোন গুনাহকে কবিরা গুনাহ বলা হয় তার সকল বিষয় জানাবো। কবিরা গুনাহ বলতে বোঝায় ওই সকল পাপকর্মগুলো যেগুলো অনেক বড় বড় গুনাহের শামিল যেগুলোর কথা আল্লাহতালা কোরান ও হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন আর তা হলো।
- যে সকল গুনাহের ব্যাপারে ইসলামে শরীয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে
- যে সকল গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড ও প্রয়োগের কথা রয়েছে
- যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়
- যে সকল কাজে আল্লাহ তা'আলা নবী ও রাসূল এবং ফেরেশতা মন্ডলী লানত দেন
- যে কাজে দিন নাই ঈমান নাই ইত্যাদি বলা রয়েছে
- অথবা এমন কাজ যা আল্লাহ তায়ালার সাথে যুদ্ধ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে
গুনাহের বিভিন্ন অপকার
আমরা মুসলমান ব্যক্তি হিসেবে সকলেই জানি যে বিষাক্ত সাপ যেমন কামড় দিলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনি গুনাহ করলেও অন্তরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও পরকালের জন্য ক্ষতি। এমনকি দুনিয়া ও আখিরাতে যত অকল্যাণকর কাজ রয়েছে তার মূলে রয়েছে গুনাহ ও পাপাচার। আর এর কারণেই মূলত আমাদের আদি পিতা আদম ও হাওয়া জান্নাত থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিল। আর আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে শয়তান ইবলিশ আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়েছে।
যখন পাপের চরমসীমায় পৌঁছে যায় তখন আল্লাহতালা বিভিন্ন প্রকার গজব নাযিল করেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে নূহ (আঃ) এর যুগে বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবন দেখা দেয় এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রাণী এবং বস্তু ছাড়া সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
লুত (আঃ) এর যুগে তারই আবাসভূমিকে উল্টিয়ে তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হয় এবং শুধু একজন ছাড়া তার পরিবারের সকলকেই রক্ষা করা হয় আর অন্যরা সবাই দুনিয়া থেকে একেবারে নির্মূল হয়ে যায়।
শুআইব (আঃ) এর যুগেও আকাশ থেকে আগুন বর্ষণ করা হয়েছিল। ফেরাউন ও তার বংশধররা লোহিত সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিল। এই পাপাচারের কারণে আল্লাহ তা'আলা বনি ইসরাইল তথা ইহুদীদের ওপর এমন শত্রু পাঠিয়ে দেন যারা তাদের এলাকায় ঢুকে তাদের ঘর বাড়ি ধ্বংস করে দেয় এবং তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করে ও তাদের মহিলা ও বাচ্চাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের সকল সম্পদ কেড়ে নিয়ে যাই আর এভাবে একবার নয় বরং দু-দুবার ঘটে পরিশেষে আল্লাহতালা তাদের সম্পর্কে কসম করে বলেন।
হে নবী তুমি স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন তোমার প্রভু ঘোষণা করলেন, তিনি অবশ্যই কিয়ামত পর্যন্ত ইহুদীদের প্রতি এমন লোক পাঠাবেন যারা ওদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। (আ’রাফ: ১৬৭)
গুনাহর অপকার সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন- হে গুনাহগার তুমি এই গুনাহর কঠিন পরিণাম থেকে নিশ্চিত হয় না তেমনিভাবে গুনাহের সঙ্গে যার সংশ্লিষ্ট তার ভয়াবহতা থেকেও। গুনাহর চাইতেও মারাত্মক এই যে তুমি গুনাহর সময় ডানে বামের লেখক ফেরেশতাদের লজ্জা পাচ্ছ না। তুমি গুনাহ করো এখনো হাসছো অথবা তুমি জানো না যে আল্লাহ তা'আলা তোমার সাথে কেয়ামতের দিন কি ব্যবহার করবেন। তুমি গুনাহ করতে পেরে খুশি হচ্ছ আবার গুনাহ না করতে পেরে ব্যথিত হচ্ছ গুনাহর সময় বাতাস তোমার ঘরের দরজা খুলে ফেললে মানুষ দেখে ফেলবে বলে ভয় পাচ্ছ অথচ আল্লাহতালা যে তোমাকে দেখছে তা তুমি ভয় করছ না বান্দা। তুমি কি জানো আইয়ুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি দোষ করেছেন যার ধরুন মহান আল্লাহতালা তাকে কঠিন রোগে আক্রান্ত করেন এবং তার সকল সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। তার দোষ এতো টুকুই ছিল যে, একা দেয় এক মজলুম তথা অত্যাচারিত ব্যক্তি জালিমের বিরুদ্ধে তার সহযোগিতা চেয়েছিল। তখন তিনি তার সহযোগিতা করেননি এবং অত্যাচারীর অত্যাচার তিনি প্রতিহত করেননি তাই মহান আল্লাহতালা তাকে উক্ত শাস্তি দিয়েছেন।
১০০ টি কবিরা গুনাহ
আমরা তো এতক্ষণ গুনাহ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি এবং গুনাহের অপকার সম্পর্কেও জেনেছি। এখন আমরা জানব কবিরা গুনাহগুলো কোনগুলো এবং কোন কোন কাজগুলোকে কবিরা গুনাহের শামিল হিসেবে ধরা হয় সে সম্পর্কে জানব।
কোন কিছুতে আল্লাহ তলার সাথে শিরক করা
নামাজ পরিত্যাগ করা
অন্যভাবে মানুষকে হত্যা করা
পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা
এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা
সতী সাধ্বী মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া
রোজা না রাখা
যাকাত আদায় না করা
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পালন না করা
জাদু-টোনা বিশ্বাস করা
প্রতিবেশীকে কষ্ট বা আঘাত দেওয়া
অহংকার করা
আত্মহত্যা করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করা
নেশা জাত দ্রব্য গ্রহণ করা অথবা সেবন করা
মদ তৈরি করা
জুয়া খেলা
তকদিরে অস্বীকার করা
অদৃশ্যের খবর জানার দাবি করা
গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া
পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করা
মিথ্যা কসম খাওয়া
মিথ্যা কথা বলা
মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দেওয়া
জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া
সমকামীতা ছড়ানো
মানুষের গোপন কথা আড়াল থেকে শোনা
চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করা
মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত আনা
মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে কান্দন করা
মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা
মুসলিমকে গালি দেওয়া
খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপ যোগ্য অস্ত্রের লক্ষ্য বস্তু বানানো
কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু যবেহ করা
ওজনে কম দেওয়া
ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
ইসলামের আইন অনুসারে বিচার ও শাসন কার্য পরিচালনা না করা
গীবত তথা অশাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা
সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখ মন্ডলের চুল তুলে ফেলা
পুরুষের নারী-বেশ ধারণ করা
অতিরিক্ত চুল সংযোগ করা
নারীর পুরুষ বেশ ধারন করা
পুরুষের টাকনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা
ডাকাতি করা
চুরি করা
সুদ লেনদেন করা
জুলুম অত্যাচার করা
প্রতারণা বা ঠকবাজি করা
সাহাবীদের গালি দেওয়া
মনিবের নিকট থেকে ক্রীতদাসের পলায়ন
ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলী রীতিনীতি প্রয়োগ করা
কোন দুষ্কৃতিকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া
বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া
স্বামীর অবাধ্য হওয়া
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা
অঙ্গীকার পূরণ না করা
বিশ্বাসঘাতকতা করা
বেশি বেশি অভিশাপ দেওয়া
ঋণ পরিশোধ না করা
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া
পরীক্ষায় নকল করা
ভেজাল কোন বিক্রয় করা
আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য পন্থায় বিচার ফায়সালা করা
দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে তিনি ইলম অর্জন করা
আল্লাহর রাস্তায় কোন কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url