গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানুন
মুসলমান জাতি হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত নানা প্রকার গুনাহে লিপ্ত রয়েছি বা প্রতিনিয়ত গুনাহ করছি। গুনাহ হওয়া বা পাপ ইসলামী পরিভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। কেননা আল্লাহর নির্দেশনই পরিপন্থী হয় এমন সকল কাজকেই মুসলিমরা গুনাহ হিসেবে বিবেচনা করে এবং ধর্মীয় আইন লংঘন করাকে অধার্মিকতা হিসেবে ধরা হয়। তাই আমরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানব কেননা, আমরা জানি মুসলিম জাতির ইহকাল এবং পরকাল বলে দুইটি জগত রয়েছে।
এমন সকল কাজ যেগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য ইসলাম কোরআন ও হাদিসে বর্ণনা করেছে। আর ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে কেয়ামতের দিন আল্লাহতালা প্রতিটি মানুষের ভালো খারাপ কাজ গুলোর পরিমাপ করবেন আর সেই সকল আমলগুলো এবং খারাপ কাজগুলো মিজানের পাল্লায় উঠানো হবে। আর সেই দিন যার পাল্লা বেশি হবে সেই অনুযায়ী সে দোযখ অথবা জান্নাতে লাভ করবে। কারো যদি গুনাহর পাল্লা তথা পাপের পাল্লা ভারী হয় তাহলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, এবং যার আমল তথা ভালো কাজের পাল্লা ভারী হয়ে হবে সে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করবে।
পোস্ট সূচিপত্র: গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানুন
- গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়
- দৃঢ় সিদ্ধান্ত
- আল্লাহর সাহায্য কামনা করা
আমরা প্রতিনিয়ত গুনাহ করছি। একটা ভালো কাজের বিপরীতে দশটা খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আর এর জন্য আমাদের উচিত ইহকাল এবং পরকালের জন্য ভালো কাজে ধাবিত হওয়া এবং সব সময় ভালো কাজ করা। একজন মানুষ গুনাহ করতে করতে পাপের চরমসীমায় পৌঁছে যায় তখন সে আর ভালো কাজ করতে পারে না বা তার দ্বারা ভালো কাজ করা সম্ভব নয় এজন্য সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অবশ্যই ইসলামের পথে অনুসরণ করতে হবে এবং আল্লাহর পবিত্র কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে জানতে হবে ও শিখতে হবে। আমরা জানি, গুনাহ দুই প্রকার কবিরা গুনাহ, সগিরা গুনাহ।
সূরা আল নিসা, বর্ণিত আছে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারো তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের লোহিতার পাপ গুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো। গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই আমাদের কিছু নিয়ম এবং পদ অনুসরণ করতে হবে। কারণ কেউ যদি গুনাহ অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরকালে তার জন্য রয়েছে কঠিন জাহান্নাম। আর এই জন্য আমাদের উচিত সকল গুনাহ পৃথিবীতেই মুছে দিয়ে সঠিক ঈমান ও আমল নিয়ে মৃত্যুবরণ করা।
আরো পড়ুন: স্ত্রীকে দ্রুত তৃপ্তি দেওয়ার উপায় - বিছানায় স্ত্রীকে দ্রুত উত্তেজিত করার কৌশল
পবিত্র রমজান মাসে আমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কিছু গুণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করা উচিত যা আমাদেরকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে এবং যদি চলার পথে কোন সগিরা গুনাহ হয়ে থাকে তাহলে নিজের মধ্যে গুনাহ মাপের অনুশোচনা জাগ্রত হবে এবং রমজানের ভেতরে তার শুধরে নেওয়া সক্ষম হবে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন গুনাহ মাপের কিছু দিকনির্দেশনা জেনে নেই।
১. দৃঢ় সিদ্ধান্ত: গোণা থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই আপনার প্রয়োজন দৃঢ় সিদ্ধান্ত। আর আপনি যদি দৃঢ় সিদ্ধান্তে অটল থাকতে না পারেন বা দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সময় বিবেকহীন ভাবে কাজ করার মাধ্যমে গুনাহ করে ফেলি এবং তওবার ওপর অটল থাকতে পারিনা যে কারণে বারবার গুনাহ হওয়ার সম্মুখীন হয়। এজন্য আমাদের উচিত গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য প্রধান এবং অন্যতম কাজ হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
২. আল্লাহর সাহায্য কামনা করা: আপনি যখনই যে অবস্থাই থাকুন না কেন সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে এবং মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ বলে পৃথিবীতে কেউ আছেন এবং তার দ্বারা সকল কিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। নামাজের সময় সিজদা অথবা মোনাজাতের সময় আমরা আমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে প্রার্থনা করতে পারি যেন তিনি আমাদেরকে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত অটল থাকার শক্তি দান করেন। আমরা যেন আন্তরিকভাবে তওবা করতে পারি এবং তিনি যেন আমাদের তওবা কবুল করে নেক হায়াত দান করেন।
আর এই জন্য প্রকৃত ঈমানদারের কাজ হল সবসময় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা ও সাহায্য কামনা করা। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে আদর্শ নবী ও রাসূলগণ আর তারাও গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে সবসময় সাহায্য কামনা করতেন এবং প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাইতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে: ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবা ঘরের প্রাচীর নির্মাণ করছিল তখন উভয়ের দোয়া করছিল এই বলে যে হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের এই কাজ তুমি কবুল করো তুমি নিশ্চয়ই সবকিছু শুনতে পাও এবং সব কিছু জানো। হে আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের দুজনকেই তোমার ফরমানের আনুগত বানিয়ে দাও। আমাদের বংশ হতে এমন একটি জাতির উত্থান কর যারা হবে তোমার আনুগত মুসলিম, তুমি আমাদেরকে তোমার ইবাদতের পন্থা বলে দাও এবং আমাদের দোষ ক্ষমা করো নিশ্চয়ই তুমি অতি ক্ষমাশীল এবং অনুগ্রহকারী। { সূরা আল বাকারা: আয়াত নং ১২৭-১২৮}
আরো পড়ুন: হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩
৩. হতাশা পরিহার করা: আমরা অনেক সময় কোন কিছু করার ক্ষেত্রে একবার সফল না হলে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন কোন কিছু একবার না হলে অবশ্যই তোমরা ধৈর্য ধারণ কর আল্লাহতায়ালা বলেছেন মুসলমানদের জন্য নিরাশ হওয়া নিষেধ। এবং আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হয় না। হতাশা থেকে বাঁচতে মহানবী সাঃ এর একটি হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন তুমি যদি এমন মানুষ হও যে কখনো পাপ করেনি, তাহলে আল্লাহ তোমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেবেন এবং অন্য কাউকে তোমার জায়গায় স্থলব্ধ করবেন যে গুনাহ করবে এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাবে এবং আল্লাহ তাকে মাফ করতে পারবেন। {সহীহ মুসলিম- ২৮৪৯} অন্য আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে যে সমস্ত আদম সন্তানই গুনাহগার। কিন্তু তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গুনাহগার হল তারা যারা অনুতপ্ত।
৪. বেশি বেশি নেক আমল করা: গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমলের চেষ্টা করতে হবে এবং কুরআন ও হাদিস মোতাবেক চলতে হবে। সকল মানুষেরই নেক আমল করার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা চাইলে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও নেক আমল করতে পারি। যেমন বেশি বেশি নামাজ পড়া কোরআন তেলাওয়াত করা রোজা যাকাত প্রদান করা এছাড়া অন্যান্য কাজের মাধ্যমেও নেক আমল করা সম্ভব। নেক আমলের মধ্যে পিতা মাতার সেবা করা এবং অন্যদেরকে সাহায্য করাও যায় আর এভাবে যতটা সম্ভব ভালো কাজের মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে তাহলে গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব।
৫. আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আন্তরিক হওয়া: আমরা সবসময় আমাদের আল্লাহর প্রতি আন্তরিক হব এবং বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবো তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের সবকিছু সহজ করে দেবেন। মহান আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন তা পবিত্র আল-কোরআনে উল্লেখ করেছেন এরপর বলেছেন তাদেরকে ছাড়া যারা তওবা করেছে নিজেদেরকে শুধরে নিয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছে আল্লাহর জন্য কেবল এবাদত বন্দেগী করেছেন তারা ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহ ঈমানদারদেরও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। আর এজন্য আমাদের উচিত আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের প্রতি আন্তরিক হওয়া এবং আনুগত্য পোষন করা।
পরিশেষে বলা যায় যে, গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলার সকল নির্দেশ মেনে চলতে হবে এবং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পবিত্র আল-কোরআন নাজিল করেছেন আর এই পবিত্র আল-কোরআন একজন মানুষ কিভাবে বেড়ে উঠবে তার সকল দিক কোরানের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। আমরা প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য নবী-রাসূলের দেখানো পথ অনুসরণ করব সব সময় সত্যের পথে চলবো। আল্লাহতালা ভালো কাজের জন্য পরকালে রেখেছে জান্নাত এবং খারাপ কাজের জন্য রেখেছেন কঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নাম। তাই অবশ্যই আমাদের উচিত ভাল কাজ করে আল্লাহর ডাকে পরকালে সারা দেওয়া, এবং জীবনে চলার পথে গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করা। ইহকালে ভালো কাজ করলে অবশ্যই পরকালের শান্তির স্থান হিসেবে পাওয়া যাবে জান্নাত।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url