শেখ সাদীর জীবনী - শেখ সাদীর পোশাকের গল্প
প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমরা বিখ্যাত কবি শেখ সাদীর জীবনী সম্পর্কে জানব- এবং জানবো কিভাবে শেখ সাদীর পোশাকের গল্প লেখা হয়েছিল। শেখ সাদী বিখ্যাত একজন ইরানি কবি ছিলেন। শেখ সাদী ছিলেন বিখ্যাত একজন কবি।
তাই আর দেরি না করে আজকে আমরা শেখ সাদীর জীবনে সম্পর্কে জানব এবং তার জীবন দশায় কি কি করে গেছে তার সকল বিস্তারিত আজকের আলোচনায় বিস্তারিত জানবো কেননা শেখ সাদী বর্তমান সময়ে মানুষকে সুন্দর এবং সুগঠিতভাবে জীবন পরিচালনা করার একটি পন্থা অবলম্বন দেখিয়ে গেছে।
শেখ সাদীর জীবনী
শেখ সাদি জন্ম হয় ইরানের সিরাজে। তার জন্ম ৫৭৯ হিজরী মতান্তরে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে ও মৃত্যুবরণ করেন ১২৯৪ খ্রিস্টাব্দে। তার পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মোশাররফ উদ্দিন বিন মোসলেহ উদ্দিন আবদুল্লাহ সাদি সিরাজি। তিনি ইরানের সুপ্রসিদ্ধ ‘সিরাজ’ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আর সেেই দেশের রাজদরবারে তার বাবা চাকরি করতেন। সাদির বাবার নাম হলসৈয়দ আবদুল্লাহ। মাতার নাম মাইমুরা খাতুন। শেখ সাদীর জন্মের পরে কৈশরের আগেই তার বাবা মারা যান। যার কারণে কবির ছেলেবেলা কেটেছিল অনেক দুঃখ কষ্টে। তার মা তাকে নিয়ে বড় কঠিন বিপদে পড়ে যান। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের ভার অর্পিত হয় তার নানার ওপর। কিন্তু নানার অবস্থাও সচ্ছল ছিল না। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত মেধাবী এবং জ্ঞানী ছিলেন শেখ সাদী।
অভাব, দারিদ্র আর কষ্টের মধ্যে ছেলেকে কীভাবে মানুষ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান সাদির মা। উঠতি যৌবনে বেপরোয়া সময়টাতে একদিন মূর্খতাবশত মায়ের সামনে চিৎকার করে উঠলে মা কষ্ট ভরা হৃদয় নিয়ে ঘরের কোণে বসে থাকেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মনে হচ্ছে, তুমি তোমার শৈশব ভুলে গেছ, তাই তেজ দেখাচ্ছ কেন।
অভাব অনটনের কারণে ছোট্ট শেখ সাদি আর্থিক স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এক ধনী ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলে ভর্তি হয়। ছাত্র হিসেবে শেখ সাদী ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং পরিশ্রমী। ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ কথাটিতে অন্তরে লালন ও তার প্রগাঢ় বিশ্বাস ছিল। শেখ সাদী বাগদাদ নগরীতেই বেড়ে ওঠেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে শেখ সাদি একটি কবিতা লিখে বাগদাদের প্রধান বিদ্যালয়ের নিজামিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক আবুল ফাতাহ বিন জুজিকে দেন। সেই শিক্ষক তা পড়ে মুগ্ধ হয়ে শেখ সাদির মাসোয়ারার ব্যবস্থা করে দেন। ৩০ বছর বয়সে তিনি মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় ভালো মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হন। একই সঙ্গে ধর্ম, দর্শন আর নীতিশাস্ত্রে অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করে ও‘মাওলানা’ উপাধি লাভ করেন। পরিশেষে তিনি মক্কায় হজ করতে যান।
এখন পর্যন্ত শেখ সাদীর ২২টির মতো গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গুলিস্তাঁ, বূস্তাঁ, করিমা, সাহাবিয়া, কাসায়েদে ফারসী, কাসায়েদে আরাবিয়া, গযলিয়াত, ইত্যাদি।
মহাকবি শেখ সাদীর এসব অনন্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘গুলিস্তা’ বেশ সমাদৃত। আর এটি লেখা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত শ’ বছর আগে। পদ্য ও গদ্যের সংমিশ্রণে লিখিত গ্রন্থ ‘গুলিস্তা’-এ বিধৃত সৌন্দর্যসুষমা, নৈতিকতা, অলঙ্কার উপমা আভরণ যেভাবে শৈল্পিক বিন্যাসে শোভিত ও আয়ুষ্মান, তা সত্যিই অবিস্মরণীয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নিবেদিত অমর উজ্জ্বল পঙ্ক্তিমালার অনুরণন, শিহরণ বিশ্বমানবের প্রিয়তা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। শেখ সাদী তার গুলিস্তা গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন :
বালাগাল উলা বিকামা’লিহি
কাশাফাদ দুজা বি’জামালিহি
হাসুনাত জামিয়ু খিসালি’হি
সাল্লু আলাইহে ওয়া আ’লিহি।
শেখ সাদী এই কবিতা লিখে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ভালোবাসার পাত্র হয়ে ওঠে এছাড়াওবিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম নিয়মিত গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পাঠ করে থাকে। তাঁর লেখা বুস্তান বইটি সর্বকালের সেরা ১০০ বইয়ের মাঝে স্থান পেয়েছে। তিনি মাস্টার অফ স্পিচ, দ্য মাস্টার ইত্যাদি বহু খেতাব পেয়ে পরিচিত ।
শেখ সাদীর পোশাকের গল্প
আমরা অনেকেই শেখ সাদীর পোশাকের গল্প শুনেছি আর কেন শুনেছি তা আজকে জানবো। শেখ সাদী কে নিয়ে অনেক গল্প লেখা হয়েছে তাহলে চলুন জেনে নিই শেখ সাদীর পোশাকের গল্প এবং শেখ সাদীর জীবনী-
একাদা কোন এক সময়ে পারস্যের এ বিখ্যাত কবি দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে একবার গিয়েছেন অভিজাত এক ব্যক্তির বাড়ি। আর তখন
শেখ সাদীর পরনে ছিল সাদাসিধে পোশাক। এই পোশাকের কারণে শেখ সাদী কে তেমন কোন আপ্যায়ন করা হয়নি। সাধারণভাবে মুড়ি-মুড়কি খেয়েই বিদায় নিতে হয় শেখ সাদীকে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো কোনো এক সময় কোনো এক উপলক্ষে সাদী ওই বাড়িতে আবারও যান। এবার কবির পরনে ঝকঝকে চকচকে মূল্যবান পোশাক। আর সেই দিন আগের মত মরি-মুরিকে না খাইয়ে ভালো ভালো খাবার পরিবেশন করে। কিন্তু সাদী সব খাবার না খেয়ে আলখাল্লার জেবে ঢোকাতে লাগলেন। গৃহকর্তাসহ সবাই এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত! সাদী তখন ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘আমি তো কিছু নই। আমার সব সম্মান তো আমার পোশাকের জন্য। সেই বরং খাক এ সব খাবার!’কারণ এর আগে যখন আমি এখানে এসেছিলাম তখন সাধারণ পোশাকে তখন আমাকে এত খাবার পরিবেশন করা হয় নাই। কিন্তু যখন আমি ভালো কোন পোশাকে আসলাম তখন আমাকে অনেক মূল্যবান খাবার দেওয়া হলো
সবশেষে এটাই হলো শেখ সাদীর পোশাকের গল্প যদিও এটি শুধু গল্পই নয় এটির মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনে অনেক কিছু নির্ধারণ হয়। আমরা মানুষকে বিচার না করে তার পোশাক বা অবস্থানকে মূল্যায়ন করে যার পরিপ্রেক্ষিতে- শেখ সাদীপোশাক দিয়ে ব্যক্তির পরিচয় আর সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণের এই রীতি পাল্টে দিতেই তার এই নিরব প্রতিবাদ। সেই সময় শ্রেণী বৈষম্যকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পোশাকই মানুষের জীবন নির্ধারণ করতে পারেনা।
এই গল্পের মূল বাণী হচ্ছে- মানুষকে মানুষ হিসাবেই মর্যাদা দিতে হবে। তার অর্থসম্পদ বা পোশাক-আশাক দেখে নয়। মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে এর চেয়ে ভালো কোনও দৃষ্টান্ত আর কোনও লেখকের রচনায় মিলবে কিনা সন্দেহ। শেখ সাদীর অন্য গল্পগুলোও এমনই সব মহত্তর মানবিক ও নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url