এক্স-রে করার নিয়ম - সিটি স্ক্যান কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমরা এমন এক টপিক নিয়ে আলোচনা করব যে টপিকটা অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা এক্স-রে করার নিয়ম সম্পর্কে জানব। আপনারা যদি এক্স-রে করার নিয়ম না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়তে থাকুন।
আমরা অনেকেই পদার্থবিজ্ঞানের নাম শুনেছি। পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমান্বয়ে গতিশীলতার কারণে আজকের আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছি। মানবদেহের সকল কোষ শনাক্তকরণের জন্য দিনে দিনে পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশ লাভ হয়েছে তাহলে চলুন এক্স-রে করার নিয়ম ও সিটি স্ক্যান কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত সঠিক তথ্য জানি।
এক্স-রে কি
এক্স-রে বা বাংলা অর্থ রঞ্জন রশ্মি হলো একটি উচ্চ ভেদনক্ষমতা সম্পন্ন তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ, যা দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন দ্বারা কোনো ধাতব পাতকে আঘাত করে উৎপন্ন করা হয়ে থাকে।
এক্স-রে (X-ray) হল এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন যার একটি উচ্চ শক্তি স্তর এবং ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত করা হয়। যেমন: চিকিৎসা, শিল্প এবং গবেষণায় দৃশ্যমান আলোতে অস্বচ্ছ বস্তু এবং উপকরণগুলির মাধ্যমে দেখতে।
এক্স-রে এর আবিষ্কার
১৮৮৫ সালে উইলহেলোম রন্টজেন উচ্চ শক্তি সম্পন্ন এক ধরনের রশি আবিষ্কার করেন এবং যেটি শরীরের মাংসপেশি ভেদ করে গিয়ে ফটোগ্রাফিক প্লেটে ছবি তুলতে সক্ষম হত। কিন্তু এই রশির প্রকৃতি তখন জানা ছিল না বলেই তার নাম দেওয়া হয়েছিল এক্স-রে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা জানি যে এক্স-রে হচ্ছে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ তবে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আমাদের পরিচিত দৃশ্যমান আলো থেকে কয়েক হাজার গুন ছোটো আর এই জন্য তার শক্তি ও সাধারণ আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি। এবং এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনেক ছোট বলে আমরা এটি খালি চোখে দেখতে পাই না।
এক্স-রে প্রধানত দুই প্রকার:
১। ডায়াগনস্টিক এক্স-রে:
এগুলি চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয় চিকিৎসার অবস্থা নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য। ডায়াগনস্টিক X-ray সাধারণত শরীরের মধ্য দিয়ে অল্প পরিমাণে বিকিরণ পাস করার মাধ্যমে উত্পাদিত হয়, এমন একটি চিত্র তৈরি করে যা ডাক্তারদের অস্বাভাবিকতা বা আঘাত শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
২। থেরাপিউটিক এক্স-রে:
এগুলি ক্যান্সার এবং অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার চিকিত্সার জন্য বিকিরণ থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। ডায়গনিস্টিক X-ray থেকে ভিন্ন, থেরাপিউটিক X-ray ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলার জন্য এবং টিউমারকে সঙ্কুচিত করার জন্য উচ্চ মাত্রার বিকিরণ ব্যবহার করে।
এক্স-রে করার নিয়ম
বর্তমান সময়ে এক্স-রে অনেক ভাবে করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে কয়েকটি এক্সরে করার পদ্ধতি নিম্নোক্ত দেওয়া হলোঃ
- স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে ফাটল, ভেঙে যাওয়া হাড় ইত্যাদি খুব সহজেই সনাক্ত করা যায় এক্সরে এর মাধ্যমে
- দাঁতের ক্যাভিটি ও অন্যান্য ক্ষয় বের করার জন্য এক্স-রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে
- পেটের এক্স-রে অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করা হয়
- এক্স-রে দিয়ে পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথরের অস্তিত্ব খুঁজে বের করা যায় সহজে
- বুকের এক্স-রে করে ফুসফুসের রোগ যেমন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় করা ইত্যাদি
- এক্স-রে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সক্ষম আর তাই এটি রেডিওথেরাপিতে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়
এক্স-রের অপ্রয়োজনীয় বিকিরণ যেন শরীরে কোন ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর তাই কোন রোগীর এক্স-রে করার সময় এক্স-রে করা অংশটুকু ছাড়া বাকি সমস্ত শরীর সীসার তৈরি অ্যাপ্রোন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে গর্ভবতী মেয়েদের পেট বা তলপেটের অংশটুকু এক্স-রে করা হয় না। তাহলে আমরা এক্স-রে করার নিয়ম আবিষ্কার সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারলাম। এবার আমরা জানব সিটি স্ক্যান কিভাবে কাজ করে।
সিটি স্ক্যান কি
সিটি স্ক্যান শব্দটি ইংরেজি Computed Tomography scan এর সংক্ষিপ্ত রূপ। টমোগ্রাফি বলতে বোঝানো হয় ত্রিমাত্রিক বস্তুর একটি ফালির বা দ্বিমাত্রিক অংশের প্রতিবিম্ব ছবি তৈরি করা। CT scan এর পূ্ণরূপ হলো Computed Tomography । শরীরের ভেতরের যে কোন অঙ্গের ছবি নেওয়া হয় ,সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে । X-ray তে শুধু শরীরের ভেতরের হাড়ের ছবি পাওয়া যায়। কিন্তু CT scan এর মাধ্যমে MRI টেস্ট এর মতো শরীরের ভেতরের অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ, মাংসপেশী, রক্তনালি প্রভৃতির ত্রিমাত্রিক ছবি পাওয়া যায়।
সিটি স্ক্যান কিভাবে কাজ করে
১. সিটি স্ক্যান এর সাহায্যে শরীরের নরম টিস্যু রক্তবাহী শিরা বা ধমনী ফুসফুস ব্রেন ইত্যাদির পরিপূর্ণ ছবি তুলতে সক্ষম
২. যকৃৎ, ফুসফুস ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার সনাক্ত করার কাজে সিটি স্ক্যান ব্যবহার করা হয়
৩. সিটি স্ক্যানের প্রতিবিম্ব টিউমারকে সনাক্ত করতে পারে। টিউমারের আকার ও অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারে এবং সেটাকে টিউমারের আশেপাশের টিস্যুকে কি পরিমান আক্রান্ত করেছে সেটিও সঠিকভাবে জানাতে সক্ষম হয়।
৪. মাথার সিটি স্ক্যান এর সাহায্যে মস্তিষ্কের ভেতর যদি কোন ধরনের রক্তপাত হয়েছে কিনা বা ধমনী ফুলে গেছে কিনা অথবা কোন টিউমার আছে কিনা সেটা খুব সহজেই বলতে পারে।
সিটি স্ক্যানের সতর্কতা
সিটি স্ক্যান করার জন্য যেহেতু এক্স-রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই গর্ভবতী মহিলাদের সিটি স্ক্যান করা হয় না। ছবির কন্ট্রাস্ট বাড়ানোর জন্য যে ডাই ব্যবহার করা হয় সেটি কারো কারো শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে বলে সেটি ব্যবহার করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সিটি স্ক্যান করতে কত সময় লাগে
সাধারণত এমআরআই এর চাইতে সিটি স্ক্যান খুব সহজেই এবং অল্প সময়ে করা যায় সিটি স্ক্যান দিয়ে যা কিছু করা সম্ভব ঠিক এমআরআই দিয়ে সেগুলো করা যায়। সিটি স্ক্যান করতে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি সময় লাগে না কিন্তু এই ক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান এর চাইতে এমআরআই করতে তুলনামূলক সময় একটু বেশি লাগে। সিটি স্ক্যানে এক্স-রে ব্যবহার করা হয় বলে যত কমই হোক তেজস্ক্রিয়তার একটু ঝুঁকি থাকে কিন্তু এমআরআই এর কোন ঝুঁকি থাকে না যার কারণে এমআরআই এর চাইতে সিটি স্ক্যানে 5 থেকে 10 মিনিট সময় লাগে।
- সিটি স্ক্যানের প্রকারভেদ
- সিটি স্ক্যান এর প্রকারভেদ
- সিটি এনজিওগ্রাফি
- সিটি বোন স্ক্যান
- কার্ডিয়াক সিটি
- সিটি অ্যাবডোমেন
- সিটি স্ক্যান কিডনি
- হেড সিটি
- সিটি স্ক্যান অব দ্যা স্পাইন
- পেলভিক সিটি স্ক্যান
- সিটি নেক
- সিটি চেষ্ট
সিটি স্ক্যানের খরচ কত
যদিও বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে কম টাকায় সিটি স্ক্যান করা যায়। সিটি স্ক্যানের খরচ কেমন হবে বা সিটি স্ক্যানের খরচ কত তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে কোথায় এবং কোন মেডিকেলে করছেন। তবুও আপনাদের জানার স্বার্থে আনুমানিক একটা তথ্য তুলে ধরা হলোঃ
- Plain CT Scan for Brain ——————— 3500 Tk.
- City Brain and Orbit ——————— 7000 Tk.
- Brain Contrast ——————— 3500 + Contrast Cost.
- City Brain and PNS ——————— Rs.7000.
- Temporal Bone (HRCT) ——————— 5500 Tk.
- Facial Bone ——————— 5200 Tk.
- CT Cervical Spine ——————— 6000 Tk.
- CT Dorsal Spine ——————— 5500 Tk.
- City Neck Contrast ——————— 5200 Tk.
- CT Hepatic Angiogram ——————— Tk 12000.
- City Chest (Plain, Contrast, HRTC) ——————— Rs.5200.
- Abdomen (Upper and Lower) ——————— 5200 Tk.
- Abdomen (whole) ——————— 9500 Tk.
পাঠকের শেষ কথা / এক্স-রে করার নিয়ম - সিটি স্ক্যান কিভাবে কাজ করে
উপরোক্ত তথ্য পড়ে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুবান্ধবীদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url