গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ - ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
আজকের আর্টিকেলে আমরা গোসলের ফরজ ও সুন্নত সম সম্পর্কে জানব। অনেকেই আছে যারা গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ সম্পর্কে অবগত নয়। কোন কাজে গোসল ফরজ হয় এবং ফরজ গোসল কি সেই সম্পর্কে সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে। অনেক গোসল রয়েছে যেগুলো মুস্তাহাব। তাই গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ জানতে হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
শরীরের অপবিত্রতা দূর করার জন্য বা পবিত্রতার জন্য প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসল করার তাগিদ দিয়েছেন। গোসলের রয়েছে তিনটি ফরজ ও ছয়টি সুন্নত।মুমিন মুসলমানরা ফরজ সুন্নতলো ঈমানের সহিত একনিষ্ঠভাবে পালন করে থাকেন। আর তাই যথাযথভাবে এসব ফরজ পালন না করলে- ফরজ গোসল ঠিকমতো হয় না। যার জন্য গোসল করার পরও গোসলকারী অপবিত্র থেকে যায়।
ফরজ গোসল কি
গোসল হল আরবি শব্দ। একেক অঞ্চলভেদে গোসল করাকে কেউ স্নান বলে, কেউ আবার নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। আরবি গোসল শব্দের অর্থ হল পুরো শরীর ধৌত করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় প্রবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্য পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল করা বলা হয়।
অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক যে গোসল করতে হয় তাই হল ফরজ গোসল। তিন অবস্থায় এই গোসল ফরজ হয় এ অবস্থায় গোসল না করলে অপবিত্র থাকতে হয়। পবিত্রতার ফজিলত উপকারিতা অনেক রয়েছে। আজকে আমরা গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানবো।
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ
গোসল ফরজ হওয়ার প্রধানত কারণ হলো চারটি যথাঃ
১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হয়ে গেলে
২. নারী পুরুষ মিলনে বা সহবাসে বীর্যপাত হোক বা নাই হোক গোসল করা ফরজ
৩. মেয়েদের হায়েয-নিফাস শেষ হলে
৪. ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে বা নব মুসলিম হলে
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি
অসুস্থ ব্যক্তির ওপর আবশ্যক হলো ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওযু করা এবং বড় নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অবশ্যই পানি দ্বারা ফরজ গোসল করে নেওয়া। পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে অপারগতার কারণে অথবা রোগ বেড়ে যাবে এ আশঙ্কার কারণে অথবা ভয় করে সুস্থ হতে দেরি হয়ে যাবে বলে তবে এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই তায়াম্মুম করতে হবে।
রোগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে তবে অন্য ব্যক্তি তাকে অজু বা তাইয়াম্মুম করিয়ে দিবে। আজুবা গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখন থাকে আর পানি দিয়ে ধৌতো করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে সে স্থানে মুছে দিতে হবে। জমিনের ওপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে অথবা যে বস্তুতে ঢোলা আছে তা থেকে তাইয়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র অথবা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে হবে তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করতে হবে।
অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হল সকল প্রকার নাপাকি থেকে শরীরকে পাক পবিত্র রাখা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট নাপাকি নিয়েই সালাত আদায় করতে হবে। পবিত্র কাপড় নিয়ে সালাত আদায়ের করা ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কোন মানুষ যদি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত থাকে তবে সে সালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন অজু না করে। যখন সালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেধে দিবে যাতে প্রসাব কাপড় বা শরীরে সরিয়ে না যায়। তারপর অজু করে সালাত আদায় করতে হবে। আর এগুলো অবশ্যই প্রত্যেক ফরজ সালাতের সময় করতে হবে।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
ফরজ গোসল করার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম রয়েছে। আর এই সকল নিয়মের মধ্য দিয়ে ফরজ গোসল করা উত্তম। তাই আর দেরি না করে গোসলের ফরজ সমূহ এবং গোসল ফরজের সঠিক নিয়ম গুলো জেনে নিই।
১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে। গোসলের সময় বাড়তি কোনো আরবি শব্দ উচ্চারণ করে নিয়ত করা বিদআত।
২. প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে।
৩. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটা ধুতে হবে
৪. বাম হাত কে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে
৫. অজুর নিয়মের মত করে অজু করতে হবে তবে দুই পা ধোয়া যাবে না
৬. অজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে
৭. সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে তারপর তিনবার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন শুকনো না থাকে
৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা তিন বার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
৯. পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে
১০. এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর অজুক করতে হবে না যদি ওযু না ভাঙ্গে
গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ
একজন প্রকৃতই ঈমানদার ব্যক্তি সবসময়ই শারীরিক পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখে। ঠিক একই সাথে অযুর পাশাপাশি তাকে সময় সুযোগ ও সুবিধা মত ফরজ গোসল করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ অপবিত্র দূর করার জন্য গোসল করার তাগিদ দিয়েছেন। গোসলের তিনটি ফরজ ও ছয়টি সুন্নত রয়েছে, প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিরা এগুলো এক নিষ্ঠভাবে পালন করে থাকে যথাযথভাবে এসব ফরজ পালন না করলে ফরজ গোসল ঠিকমতো হয় না এতে গোসলকারী অপবিত্র থেকে যায়। তাহলে চলুন গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানি।
গড় গড় সহ কুলি করা
গোসলের প্রথম খরচ হল গড়গড় সহ কুলি করা মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের কনা জমে থাকে। এছাড়া কফ ও জমে থাকে। আর এই জন্য গড় গড় সহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভিতরে জমে থাকা খাবারের কনা দূর হয়ে যায়।
নাকে পানি দেওয়া
গোসলের আরেকটি ফরজ হলো নাকের ভেতরে পানি দেওয়া। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওনাকে পানি দিয়েছেন।
সারা শরীরে পানি দেওয়া
এমনভাবে গোসল করতে হবে যেন শরীরের কোন অঙ্গ শুকনো না থেকে এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন গোসল করতেন তখন তার শরীরে সব অংশ ভেজে থাকতো।
গোসলের সুন্নত ছয়টি
গোসলের যেমন ফরজ রয়েছে ঠিক তেমনি গোসলের কিছু সুন্নত রয়েছে। ইতিপূর্বেই আমরা গোসলের ফরজ সম্পর্কে জেনেছি এখন আমরা গোসলের সুন্নত সম্পর্কে জানব-
১. গোসল শুরুর আগে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পাঠ করা
২. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা
৩. দুই হাতের কব্জি অজুর মত তিনবার পরিষ্কার করা
৪. কাপড় অথবা শরীরে কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু থাকলে গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা
৫. গোসলের আগে ওযু করা গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা
৬. ডানদিকে তিনবার বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপরে তিনবার পানি ঢালা
সর্বশেষ কথা / গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ - ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
আজকে আমরা গোসলের ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। এই পোস্টটি আপনারা পড়ে উপকৃত হলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জনের মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url