গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি - সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি ২০২৩

 

একটু সচ্ছল সুন্দরভাবে চলাচল করতে কে না চায়? নিজের কাজের পাশাপাশি ছোটখাটো একটা কিছু করেও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। অনেকেই বুঝতে পারে না কি করব কিভাবে করব? এ সকল চিন্তা মাথায় সব সময় ঘুরতে থাকে এজন্য অবশ্যই আপনারা যদি গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন তাহলে খুব অল্প সময়ে সামান্য পুঁজিতে লাভবান হতে পারবেন।

গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি - সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি ২০২৩

আপনারা যদি গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি এবং সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একটু জ্ঞান থাকে তাহলে খুব সহজেই ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আর এই কবুতর পালন করার সুবিধা হল অন্যান্য পশু পাখির চাইতে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে এবং রোগ বালাই কম হয়। আজ আপনাদের সামনে গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি এবং গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি - সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি ২০২৩

গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি

দেশীয় কবুতরের মতোই একটি জাত হল গিরিবাজ। আর এই গিরিবাজ কবুতর দেশী কবুতরের মতই লালন পালন করতে হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে দেশী কবুতরের মতন হলেও এরা খাওয়া এবং ওড়ার ব্যাপারে বেশি যত্নশীল হয়। গিরিবাজ কবুতর পোশাক কবুতরের একটি সুন্দরতম জাত। আর এই জন্য কবুতর পালনকারী ব্যক্তিদের কাছে গিরিবাজ কবুতর একটি অন্যতম জাত হিসেবে পরিচিত। গিরিবাজ কবুতরের উৎসাহ কোথা থেকে এটির সঠিক উত্তর এখনো অজানা তবে, অন্যান্য কবুতরের মতোই এটিও ভূমধ্যসাগর বা চীনের মধ্যবর্তী অঞ্চলের স্থানীয় একটি জাত।

সম্প্রীতি এক গবেষণায় 1945 সালে ইংল্যান্ডে গিরিবাজ কবুতর প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং সেইখান থেকেই গবেষণা শুরু হয়। গিরিবাজ কবুতরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা অনেক সময় ধরে আকাশে উদয়ন করতে পারে। এবং উড়ন্ত অবস্থায় আকাশে ডিগবাজি মারে। গিরিবাজ কবুতর উড়তে উড়তে এমন সময় মেঘের মধ্যে ঢুকে যায়। আর এই জন্য এই কবিতর প্রতিদিন অন্তত একবার আকাশে দীর্ঘ সময় ওড়াতে হবে। প্রতিনিয়ত পুষ্টিকর খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে ও সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। কবুতর যেন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত না হয় সেদিকে সদা খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত কবুতরকে ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য পশু পাখি থেকে দূরে রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ হাঁস পালন পদ্ধতি - হাঁস পালনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি অন্যান্য কবুতর পালন পদ্ধতি একই রকম যার জন্য অন্যান্য জাতির কবুতর যেমন ভাবে লালন পালন করা হয় ঠিক তেমনি গিরিবাজ কবুতরকে একইভাবে লালন পালন করতে হয়। ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে গোলা কবুতরের মতই খোপ খোপ আকারে ঘর তৈরি করতে হবে এবং এই খোপের মধ্যে কবুতর থাকার পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা থাকতে হবে।

গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায়

কবুতর পালনে যারা নতুন তারা অনেকেই আছে যারা বাজারে কবুতর কিনতে গেলে গিরিবাজ কবুতর চিনতে পারেনা তাই আজকে এই পোস্টটি তাদের জন্য যারা গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায় জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন যে গিরিবাজ কবুতর চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল তাদের চোখ। তাদের চোখ দেখে খুব সহজেই চেনা যায়। আসল গিরিবাজ চিনতে হলে আপনাকে অবশ্যই কবুতরের চোখ দেখতে হবে কারণ গিরিবাজ এর চোখের মনি সেকেন্ড সেকেন্ডে ছোট এবং বড় হতে দেখা যায়। আসন গিরিবাজ কবুতর চেনার কিছু উপায় জেনে নেই।

  • চোখের মনির অবস্থান সবসময় ভিতর দিকে থাকে
  • কবুতরের পাখনা লেজের সমান হয়
  • দূর থেকে চোখের দিকে তাকালে মনে হয় যে চোখে পানি ভাসছে
  • গিরিবাজ কবুতরের বুক সর্বদা উঁচু থাকে
  • অনেক গিরিবাজের চোখের মনির চারিদিকে নীলচে বা কালো বর্ণ দেখা যায়
  • দুই পাখা দিয়ে পায়ের রানের শেষ পর্যন্ত ঢাকা থাকে
  • চোখের চারিদিকে হালকা কালো রাউন্ড দেখা যায়
  • এরা অনেক ওপরে উঠতে পারে এবং উপরে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে সক্ষম
  • এরা আকাশে উড়তে উড়তে চলন্ত অবস্থায় অনেক ডিগবাজি মারে
  • এরা ওড়ার সময় বাম পাকনা কোন না কোন এঙ্গেলে ও ডানপাখা পুরোটা মেলে ওপর-নিচ করে চলাচল করে যাওয়া অনেকটা বাজ পাখির মত দেখায়

গিরিবাজ কবুতরের দাম ২০২৩

এখনকার সময়ে সাধারণত রানিং জোড়া 600 থেকে 700 টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এবং বাচ্চা গিরিবাজ কবুতরের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রেস খেলায় পারদর্শী বা ভালো জাতের গিরিবাজ এর দাম বর্তমান সময়ে ৫,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে। আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছে যে শখের দাম লাখ টাকা এজন্য শখ করে মানুষ লাখ লাখ টাকা দিয়েও কবিতর পালন করছে।

অনেকেই শখের বসে নানা জাতের কবুতর হাজার হাজার টাকা দিয়ে কিনে পালন করছে। কবুতরের দামের তালিকা থেকে দেখা যায় যে ময়ূরী, এবং সাদা গিরিবাজ এর দাম অত্যাধিক বেশি হয়ে থাকে এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি অপরূপ তাদের বাহিক্য সৌন্দর্য। গিরিবাজ কবুতর দ্বারা ঢাকা শহরে এবং ঢাকা শহরের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় রেসলিং এর প্রতিযোগিতা করা হয়।

সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি

ফেন্সি বা বিদেশি জাত হিসেবে সিরাজী কবুতর এখন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়া ব্যবসা কিংবা শখের বসে স্বল্প মূল্যে এই সৌন্দর্য পূর্ণ সিরাজী কবুতর কিনা সম্ভব। বর্তমানে ঢাকা শহরে পাখিদের দোকানে কবুতরের প্রচুর জাত দেখা যায়। বর্তমান সময়ে গ্রামীণ সমাজকে পাল্লা দিয়ে শহরেও বাসাবাড়ির ছাদে কবুতর পালন করে আসছে। এই কবুতর আমাদের বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ার সাথে বেশ মানানসই। সিরাজী কবুতর বছরের প্রায় ১০ থেকে ১১ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। সিরাজী কবুতর অন্যান্য কবুতরের চাইতে ডিমে তা দেওয়া এবং বাচ্চার যত্ন নিতে বেশ পারদর্শী।

সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি বেশ কঠিন কোন কাজ নয়। আপনাদের যদি সামান্য পরিমাণ কবুতর পালনের জ্ঞান থাকে কেবল তাহলেই খুব সহজে কবুতর পালন করতে পারবেন। ইতিপূর্বেই আমরা জেনেছি সাধারণ দেশি কবুতরের মতই কবুতরের ঘর খোপ খোপ আকারে তৈরি করতে হবে। কেউ যদি ঘরের ভেতরে পালন করতে চাই তাহলে অবশ্যই খাঁচা বড় করে তৈরি করতে হবে। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো কাঠের তৈরি করা ঘর। এতে কবুতর নিরাপদে থাকতে পারে। খামার অথবা বাণিজ্যিকভাবে পালনের ক্ষেত্রে কবুতরের প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন সর্বদা প্রদান করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ গরু মোটাজাতকরণের পদ্ধতি - গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা

সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি অবলম্বনে অবশ্যই জোড়ায় জোড়ায় এক একটি খোপের মধ্যে রাখতে হবে। সিরাজী কবুতর যখন ডিম বা বাচ্চা ফুটাবে ঠিক সেই মুহূর্তে আপনারা কৃত্রিমভাবে বাসা তৈরি করে দিতে পারেন। আর যদি কবুতর মুক্ত ভাবে পালন করে থাকেন তাহলে কৃত্রিমভাবে বাসা তৈরি করে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কবুতর চারণ ভূমিতে চরণ কালে তারা নিজেরাই ডিম পাড়ার সময় খরকুটো নিয়ে এসে ডিম পাড়ার জায়গা প্রস্তুত করে। বাচ্চা ওঠানোর পরে অবশ্যই কবুতরকে বেশি বেশি খাবার দিতে হবে। এই সময় কবুতর এবং কবুতরের বাচ্চার জন্য বেশি পরিমাণে খাবার লাগে।

সিরাজী কবুতর চেনার উপায়

ভালো কবুতর চেনার উপায় জানা থাকলে কিনতে গিয়ে ঠকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আগেকার সময়ে মানুষ গ্রামে কবুতর পালন করতো কিন্তু বর্তমান সময়ে শহর অঞ্চলে বাড়ির ছাদে কবুতর পালন করছে। পৃথিবীতে কবুতর পালনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। মিশরের রাজা প্রজা থেকে শুরু করে ভারতীয় উপমহাদেশের মোঘলরা অনেকেই কবুতর পালন করতো এবং কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করত। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সিরাজী কবুতর চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিই

  • সিরাজী কবুতরের চোখগুলো উজ্জ্বল হবে
  • গায়ের পালক সুন্দর ও চকচক করবে
  • মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক পর্যন্ত পাখার রঙিন থাকে
  • আকারে অনেক বড় হয়
  • পা লম্বা বালকে আবৃত থাকে
  • সাধারণত সিরাজী কবুতর কালো, লাল, এবং রূপালী রঙের হয়ে থাকে
  • এছাড়া সিরাজী কবুতরের চোখ উজ্জ্বল এবং মোটা হয়

সিরাজী কবুতরের দাম ২০২৩

লাহোরী সিরাজী কবুতর এর দাম অন্যানো ফেন্সি কবুতরের তুলনায় অনেকটা কম হয়ে থাকে। লাহোরী কবুতরের বয়স অনেক ক্ষেত্রে আকার ও সৌন্দর্য ভেদে দামের মতপার্থক্য বিদ্যমান। বিভিন্ন কবুতরের হাট এবং অনলাইনে কবুতরের দাম 1200 টাকা থেকে 3000 টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া একজোড়া সিরাজী কবুতরের দাম সাধারণত ৩০০০-৫০০০ হয়ে থাকে। এবং সিরাজী বাচ্চা কবুতরের দাম ১০০০-১২০০ টাকা জোড়া বিক্রি হয়। বর্তমান সময়ে বাজারে কালো সিরাজের চাইতে লাল, হলুদ, সিলভার, বুলু ও ছাই কালার এর সিরাজী কবুতর বেশি চাহিদা ও দামে বিক্রি হচ্ছে।

সিরাজী কবুতরের খাবার

কবুতরের সুস্থ দেহ এবং সময়মতো বাচ্চা উৎপাদনের জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। খাঁচায় কিংবা ঘরে সব সময় খাদ্য ও পানি রাখার সুব্যবস্থা রাখতে হবে। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য খনিজ উপাদানের ঘাটতি যেন না থাকে সেদিকে সাদা সতর্ক থাকতে হবে। সিরাজী জাতের কবুতরের সুষম ও দানাদার খাবার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কেবল কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

কবুতরের খাদ্যে প্রতিনিয়ত গম, ভুট্টা, ধান, চাল, মটরশুটি, ট্রিটি কাম এস্টিভাস সরিষা, খেসারি, খাদ্য খেতে দিতে হব। আর কবুতরের খাদ্যে ১৫-২০% প্রোটিন থাকা অবশ্যই জরুরি। কবুতরের নিয়মিত খাবারের সাথে ঝিনুকের খোসা, চুনাপাথর, হাড়ের গুড়া, লবণ এছাড়া সালফার মিশ্রিত উপাদান খাওয়ানো প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন - সুস্থ ছাগল চেনার উপায়

ঝিনুক চূর্ণ 40%, চুনাপাথর গুঁড়ো ৪৫%, কয়লার চূর্ণ ১২%, হাড়ের গুড়া 6%, ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ১%। এ ছাড়া গম ভাঙ্গা ৫০%, সরিষার দানা ২৫%, মাসকলাই ১০%, খেসারি ভাঙ্গা ১৫% সরবরাহ করতে হবে।

পাঠকের শেষ কথা

এতক্ষণ গিরিবাজ কবুতর পালন পদ্ধতি এবং সিরাজী কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আর এই সকল পদ্ধতি অবলম্বন করে কবুতর পালন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই লাভবান হতে পারবেন। আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এবং নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url