ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি - সুস্থ ছাগল চেনার উপায়
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ছাগল প্রজনন খামার না থাকায় মাঠ পর্যায়ে ছাগল সংগ্রহ করতে হয় বা পালন করতে হয়। ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন স্বল্প খরচে কিভাবে করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত এই আর্টিকেলে জানাবো। বাংলাদেশ মাঠ পর্যায়ে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন বেশি করে থাকে।
বর্তমান সময়ে ছাগলের খামার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই ছাগল পালনের মাধ্যমে অনেকেই কম খরচে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এই ছাগল পালনের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে অসচ্ছলতা দূর করে সচ্ছলতার দিকে ধাবিত করছে তাহলে আর দেরি না করে চলুন ছাগল মোটা করুন পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন - সুস্থ ছাগল চেনার উপায়
- ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন
- দুগ্ধ উৎপাদন / ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন
- ছাগলের দুধের উপকারিতা
- সুস্থ ছাগল চেনার উপায়
- ছাগলের পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা
- ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকারের নিয়ম
ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন
বাংলাদেশে আগের চাইতে এখনকার সময়ে প্রতিটা বাড়িতে কমবেশি ছাগল পালন করছে। বাংলাদেশে সঠিকভাবে ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন সম্পর্কে অবগত নয়। কেউ যদি লাভজনক ভাবে ছাগল পালন করতে চাই তাহলে তাকে অবশ্যই গুণাবলীর প্রয়োজন। দিন দিন ক্রমান্বয়ে ছাগল পালন গ্রামীণ অঞ্চলে বেড়েই চলেছে।
ছাগল পালন করে যদি লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথম কাজ করতে হবে উন্নত মানের ভালো ছাগল বাছাই করা। ছাগল কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে যেকোনো রোগ বালাই আছে কিনা। আপনি যদি ছাগলকে সঠিক ভাবে খাদ্য পরিবেশন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন তাহলে অবশ্যই ছাগল পালনে লাভবান হবেন। ছাগলকে অবশ্যই সঠিক সময়ে কৃমি মুক্ত পরিবেশ রাখতে হবে। এজন্য ছাগলকে প্রতি চার মাস পর পর ক্রিমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। আর তাই ছাগলকে রোগমুক্ত রাখার জন্য অবশ্যই সময়মতো সংক্রমণ রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কমলা চাষ পদ্ধতি - টবে কমলা চাষ সম্পর্কে জেনে নিন
ছাগলকে দ্রুত মোটা জাত করন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়কাল রাখতে হবে। ছাগল পালন করার সময় অবশ্যই আপনাকে ছাগলের খাদ্যভাস এবং ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এইজন্য ছাগলের প্রতি অত্যাধিক যত্নবান হতে হবে । কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া কেউ যদি প্রাকৃতিকভাবে সঠিক সময়ে খাওয়াতে পারে তাহলে ছাগল পালন করাতে বেশ লাভবান হওয়া সম্ভব।
ছাগল পালন করে লাভবান হওয়ার জন্য ভালো মানের বীজ সংগ্রহ একটি আসল বিষয়। ছাগল পালন করার পূর্বে ছাগলের শরীরে হাত দিয়ে দেখতে হবে রোগমুক্ত আছে কিনা। ছাগল পালনে লাভবান হওয়ার জন্য ছাগলের কৃমির দমন করা অতি কার্যকর বিষয়। ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং ছাগলকে মোটা জাত করনের জন্য বেশিরভাগ সময় ছেড়ে দিয়ে পালন করতে হবে। তাহলে ছাগল মোটা জাত করন ও দুগ্ধ উৎপাদন বেশি পাওয়া সম্ভব।
দুগ্ধ উৎপাদন / ছাগল মোটাজাতকরণ পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন
অনেকেই দুধ পনির এবং মাংসের জন্য গৃহস্থলী পরিসরে ছোট পারিবারিক খামার নিজ হাতে তৈরি করে থাকে। আর এটি যেমন পারিবারিক চাহিদা মিটায় তেমনি অর্থ উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম দুধ, পনির, মাংস বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণে মুনাফা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের গ্রামীণ সমাজে অনেকেই রয়েছে কিভাবে ছাগল পালন করতে হয় সেই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। ছাগল পালন শুরু করার জন্য আপনাকে তেমন কোন বড় পরিসরে খামার করার কোন প্রয়োজন নেই পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সেটি ক্রমান্বয়ে বাড়াতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে আপনার চাহিদা মতাবেক ছাগল নির্বাচন করতে হবে। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ছাগল কিনে থাকে। যেমন দুধের জন্য স্যানিন প্রজাতির ছাগল, লা মাঞ্চা, নিউ বাই ইন, আর মাংসের জন্য স্পেনীয় কিকো প্রজাতির ছাগল রয়েছে। এরপরে একটি ছাগল ক্রয় করতে পারবেন। আবারস্থলের জন্য ঠান্ডা থেকে এবং দৌড়দের তাপ থেকে বাঁচতে ছোট একটি ঘর করতে হবে। আর এদের আবাসস্থলের চারপাশে প্রয়োজনীয় বেড়া দেয়ালেও প্রয়োজন রয়েছে।
ছাগলকে যদি ঘের দিয়ে পরিবেশিত না রাখা যায় তাহলে অনেক সময় এরা ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পথ ভুলে হারিয়ে যায় এবং সেই শিকারি প্রাণীগুলো ছাগলদের মেরে ফেলতে পারে এজন্য আপনাকে অবশ্যই ছাগলের ঘর এমন জায়গায় করতে হবে যেন সেই জায়গা খাদ্য এবং সাধু পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দুধের জন্য ছাগল কিনতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই দুধ দহনের সরঞ্জাম এবং চক্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে কারণ বাচ্চা প্রসব করার পর থেকে নিয়ে মাত্র ১০ মাস পর্যন্ত আপনি একটি ছাগল থেকে দুধ দহন করাতে পারবেন। এরপর অবশ্যই সেই ছাগলকে বিশ্রাম দিতে হবে মাদী ছাগলটির স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর বিশ্রামকালের মেয়াদ নির্ভর করে থাকে। আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে দুধ দোহন চক্র চলছে এমন সময় কোন বকরিকে দিনে দুইবার দহন করা যায় একটি বকরি থেকে দিনে প্রায় এক গ্যালন দুধ পান করে থাকে।
ছাগির বাচ্চা প্রসবের সময় অবশ্যই বাড়তি পরিচর্যা করতে হবে। এমনকি এই সময় সাগীকে নরম বিছানার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শীতকালে শরীরের লোম পরিস্কার করুন। এতে করে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে যা দুধ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে কারণ এই সময় সাগীর প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। আর তাই সাগির পুষ্টির ওপর নির্ভর করে ছাগীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা এবং বাচ্চার দেহ গঠন প্রক্রিয়া।
আরো পড়ুনঃ মুলা চাষ পদ্ধতি - আধুনিক পদ্ধতিতে মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে এর কারণ হলো কাঁচা ঘাস দুধ উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আর এই জন্য সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কাঁচা সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে। কাঁচা ঘাসে বিভিন্ন ধরনের অক্সিডেন্ট এর উপস্থিতিতে বেশি পরিমাণে দুধ বাড়িয়ে থাকে।
ছাগলের দুধের উপকারিতা
সুস্থ ছাগল চেনার উপায়
- একটি সুস্থ ছাগলের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত 39.5 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হয়
- সুস্থ ছাগল সাধারণত দলবদ্ধভাবে চলাচল করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে
- সুস্থ ছাগলের চামড়া চকচকে এবং পশমগুলো মসৃণ দেখায়
- একটি সুস্থ ছাগলের চোখ উজ্জ্বল এবং তুলনামূলকভাবে বড় হয়ে থাকে
- একটি সুস্থ ছাগলকে বারবার বিরক্তি করলে সহজেই রেগে যায় এবং তেড়ে আসে কিংবা পালিয়ে যায়
- অসুস্থ ছাগলের চেয়ে সুস্থ ছাগল তুলনামূলকভাবে বেশি পানি খেয়ে থাকে
- সুস্থ ছাগলকে খেতে দিলে তাড়াহুড়া করে খেতে আসে
- সুস্থ ছাগলের রোগবালাই কম হয়ে থাকে
ছাগলের পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা
জীবনধারণের জন্য ছাগলের প্রতি কেজি জীবিত ওজনের জন্য শর্করা এবং শর্করা সমতুল্য ৭-৮ গ্রাম সরকার এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন। আমিষ জাতীয় খাদ্য খাওয়াতে হবে। প্রয়োজন মত পানি খাওয়াতে হবে। শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমনঃ ভুট্টা, গম, চাউলের কুড়া, মসুরের কুড়া, গমের ভুসি, কাউন, ইত্যাদি খাওয়াতে হবে
আমিষ জাতীয় খাদ্যঃ সয়াবিন মিল, তিলখৈল, শুটকি মাছ
চর্বি জাতীয় খাদ্যঃ এনিমেল ফ্যাট, ভেজিটেবল অয়েল, স্যার লিভার অয়েল
ভিটামিন জাতীয় খাদ্যঃ সবুজ ঘাস লতা পাতা, কৃত্তিম ভিটামিন
খনিজ জাতীয় খাদ্যঃ লবণ, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ঝিনুক
সর্বশেষ কথা হল ছাগল মোটা জাত করন পদ্ধতি ও দুগ্ধ উৎপাদন করার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতি মেনে চললে অবশ্যই একজন খামারি লাভবান হবে।
ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকারের নিয়ম
আমরা সকলেই জানি ছাগল একটি গৃহপালিত প্রাণী। অন্যান্য গৃহপালিত পশুর মতই ছাগলের বিভিন্ন রোগ হতে দেখা যায়। সাধারণত এই রোগ গুলো ব্যাকটেরিয়ার কারণে এবং নানা রকমের ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে। ছাগলের অন্যান্য রোগের মাঝেও আটাল, উকুন, কৃমি প্রধানত। নিচে ছাগলের কিছু রোগ রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার দেওয়া হলো।
ব্রুসেলোসিস
ব্রুসেলোসিস এটি একটি ছাগলের অন্যতম রোগ। এই রোগ ছাগলের হয়ে থাকলে ছাগলের শরীরে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এই রোগ শরীরে হলে লক্ষণ সমূহ হলো ছাগল যদি পুরুষ হয় তাহলে তার অন্ডকোষ ফুলে যায়। এছাড়াও অনেক পুরুষ ছাগলের যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ কলা চাষ পদ্ধতি - কলার বিভিন্ন জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রতিকার হিসেবে যদি কোন খামারে এই রোগ দেখা দেয় তাহলে রোগা আক্রান্ত ছাগলটিকে অন্য সব ছাগল থেকে সরিয়ে ফেলা। এবং এন্টোবায়োটিক দ্বারা দীর্ঘমেয়েদের চিকিৎসা করার ফলে সুস্থ করে তোলা।
ওলান পাকা বা মাস্টাইসিস
ছাগলের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণেই এই রোগ বাসা বাঁধে। ছাগলের বাচ্চা দেওয়ার কিছুদিন আগে কিংবা পরে এই রোগ বেশি দেখা দেয়। এছাড়া এই রোগ অনেক সময় ছোটখাটো ক্ষতের সৃষ্টি করে। এ রোগের লক্ষণগুলো হল ছাগলের গায়ে জ্বর থাকে, ছাগলের নাড়ির গতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, খাবার রুচি অনেক কমে যায়। এই রোগের প্রতিরোধ হিসেবে দুধ দোহন কালে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় যাতে করে কোন ক্ষত সৃষ্টি না হয় সেদিকে সদা লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত ছাগলের বাচ্চাকে আলাদা করে অন্য ছাগলের দুধ খাওয়ানো। ক্ষত সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের জায়গাটি পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তার ডাকতে হবে।
পাল্পি কিডনি ডিজিজ
এই রোগটিও এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত। অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খেলে ছাগলের ক্ষুধাান্ত্রে বিদ্যমান কোল্ডসট্রিডিয়াম জীবাণু দ্রুত বৃদ্ধি পায় যার ফলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ছাগল মারা যায়। আর এই রোগের লক্ষণ সমূহ হলো ছাগল দাঁড়ানো অবস্থায় চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে। শরীর কাঁপতে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। মারা যাওয়ার পরপরই শরীরের চামড়ার রঙ বিবর্ণ হয়ে পচন ধরতে থাকে। এ রোগ প্রতিকার হিসাবে আক্রান্ত ছাগলের মলমূত্র ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ছাগলের থাকার জায়গা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। যেহেতু হঠাৎ করেই মারা যায় যার ফলে সাধারণ কোনো চিকিৎসা করা যায় না। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এরূপ শনাক্ত করা গেলে অনেক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url