কিভাবে সহবাস করলে দ্রুত গর্ভবতী হওয়া যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
দ্রুত গর্ভধারণ করতে হলে সহবাসের নিয়ম গুলো আমাদের সবার জানা খুবই জরুরী। আমরা অনেক সময় দেখতে পাই অনেক বিবাহীত স্বামী-স্ত্রী আছে যাদের বিয়ের অনেকদিন হওয়া সত্বেও তাদের কোন বাচ্চা হয়না। মূলত বাচ্চা দেওয়ার মালিক তো একজনই। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার মতো সঠিকভাবে কাজতো আমাদের কেই করতে হবে।
নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজ আমরা জানতে পারবো, গর্ভধারণ করতে হলে মিলন কখন করা উচিত, কিভাবে করা উচিত, কিভাবে সহবাস করলে দ্রুত গর্ভধারণ হবে, কতবার মিলন করলে দ্রুত গর্ভধারণ হবে, মিলনের পরে শুয়ে থাকা উচিত কিনা, মিলনের আগে ফোরপ্লে করার প্রয়োজন আছে কিনা, কোন পজিশনে মিলন করলে ভালো, এ ধরনের নানা প্রশ্নের উত্তর আজ আমরা বিস্তারিত জানবো।
দ্রুত গর্ভধারণ করতে হলে কতবার সহবাস করা প্রয়োজন
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক গর্ভধারণ করতে হলে কতবার মিলন করা প্রয়োজন। এটা মূলত নির্ভর করবে আপনার উপর। কোন কোন দম্পত্তি প্রতিদিন থাকেন, কেউ আবার দিনে দুই বারো মিলিত হন। তবে সত্যি বলতে কি কোন দম্পত্তিই প্রতিদিন বা দিনে দুই বার সহবাস করার মতো সময়, সুযোগ, বা এনার্জি পাই না এবং সহবাস করার মতো আগ্রহও দেখাই না।এর মধ্যে আবার সন্তানের জন্য চেষ্টা করার পরেও সন্তান হয়না তখনতো আরো মানসিক চাপে মিলনের প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে আপনি যদি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার মিলিত হন তাহলে তা গর্ভধারনের জন্য যথেষ্ট হিসাবে গণ্য করা হয়। আর যদি আপনি প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মিলিত হন তাহলে মাসিক নিয়মিত হোক বা অনিয়মিত, তাহলে আপনার গর্ভধারনের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় কোনটি
মূলত প্রতি মাসে তিনটি দিন থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই তিনটি দিন হলো গর্ভধারনের জন্য একদম উপযুক্ত সময়। একে বলা হয় ফারটেল পিরিয়ড বা উর্বরতম দিন। এসময় নারীদের ওভুলেশন হয় এবং স্বচ্ছ আঠার মতো ও পিচ্ছিল এক ধরনের চাপ নির্গিত হয়। গর্ভধারন করতে হলে এই তিনটি দিন মিলন করা বা শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুর মিলন হওয়াটা খুবই জরুরী। ওভুলেশনের সময় টাতে ডিম্ব থলি থেকে একটি পরিপক্ক ডিম্বানু বের হয় এবং শুক্রানুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
একজন পুরুষের শুক্রানু তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত একজন নারীর যৌনাঙ্গে জীবিত থাকতে পারে। মিলনের এই তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে যদি ডিম্বোস্ফুটন হয় তাহলে শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুটি মিলিত হয়ে গর্ভধারন ঘটে। মাসিক চক্রের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে থাকে এই ফার্টায়িল পিরিয়ড। এ কারনে মহিলাদের মাসিক শুরুর দিন থেকে শুরু করে দশতম দিন থেকে বিশতম দিন পর্যন্ত এক দুই দিন পর পর মিলন করতে হবে। যাতে গর্ভধারনের জন্য নারীর শরীরের এই উর্বর তিনটি দিন মিস না হয়ে যায়।
বিশেষ কোন পজিশন গর্ভধারনের জন্য জরুরী কিনা
বিশেষ কোন পজিশন এখানে জরুরী নয়। যেকোন পজিশনেই আপনি মিলন করুন না কেন, শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুর মিলন যদি হয় তাহলে গর্ভধারন হয়ে যাবে। তবে সবথেকে ভালো ও উত্তম পজিশন হলো পুরুষ উপরে এবং নারী নিচে থাকবে। এই পজিশনে সহবাস করলে দ্রুত শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুর মিলন ঘটে সেজন্য দ্রুত গর্ভধারন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাজেশন হলো বিভিন্ন পজিশনে মিলন করা। এতে আপনার সঙ্গিনীর মিলনেও আগ্রহ বাড়বে ও মানসিক চাপ থাকবে না এবং উভয়ই সময়টাকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন। আর গর্ভধারনের জন্য মিলনে আগ্রহ ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকা এবং মিলন উপভোগ করা পজিশনের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মিলনের পরে শুয়ে থাকলে কি দ্রুত গর্ভধারণে সহায়তা হয়
এই প্রশ্নের উত্তর হলো:- মিলনের পর দুই থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই সাধারনত শুক্রানু সারভিক্সে পৌঁছে যাই। স্বাভাবিক অবস্থায় মিলনের পর পরই আপনি শুয়ে থাকুন, বসে থাকুন বা হাটুন তাতে কোন সমস্যা নেই। শুক্রানু তার রাস্তা ধরে সাঁতরে ঠিকই তার গন্তব্যে পৌছে যাবে। কিন্তু অনেক নারীদের দাঁড়ানোর সাথে সাথেই ভেতর থেকে বীর্য বের হয়ে যায়, এ সকল নারীদের জন্য উত্তম কাজ হবে মিলনের পরপরই না দাঁড়িয়ে প্রায় ১০-১৫ মিনিট শুয়ে থাকা।আমাদের মধ্যে অনেক দম্পত্তি আছে যাদের কয়েক মাস বা বছর চেষ্টা করার পরেও গর্ভধারণ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাজেশন হলো:- আপনি যখনই গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা শুরু করেন না কেন মিলনের পরে সাথে সাথেই না উঠে, ১৫ থেকে ২০ মিনিট কোমরের নিচে পাতলা বালিশ দিয়ে শুয়ে থাকুন। যাতে সার্ভেক্সের মুখ যৌনিতার বরাবর থাকে এবং সহজেই জরায়ুর মুখ দিয়ে জরায়ুর ভেতরে শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে।
নারীদের অর্গাজম হওয়াটা দ্রুত গর্ভধারনের জন্য জরুরী কিনা
সাধারনত নারীদের অর্গাজম হওয়াটা দ্রুত গর্ভধারণের জন্য জরুরি নয়। তবে সম্প্রতি একটি স্টাডিতে দেখা গেছে, নারীদের অর্গাজম দ্রুত গর্ভধারণের সহায়তা করে। কারণ নারীদের অর্গাজম হলে যৌনাঙ্গের ভেতরে কনস্ট্রাকশন বা সংকোচন প্রসারণ হয় যা শুক্রাণুকে সহজেই সাঁতরে উপরে পাঠাতে সাহায্য করে।এতে গর্ভধারণের দ্রুত সহায়তা হয়।তবে এ বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। যেহেতু বৈজ্ঞানিক ভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত নয় সেহেতু নারীদের অর্গাজম হওয়া বা না হওয়া নিয়ে আমাদর মাথা না ঘামানোয় ভালো।আরেকটা বিষয় হলো মিলনের সময়ে লুবরিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে কিনা? যেকোন লুব্রিকেন্টই স্পাম বা বীর্যের জন্য ক্ষতিকর। লুব্রিকেন্ট ব্যবহারে স্প্যাম হেলদি থাকে না।মিলনের সময়টাতে অনেক সময় নারীদের যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে থাকে বা অনেক সময় মিলনে ইচ্ছাও থাকে না। এসব ক্ষেত্রে লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক এই পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা অনেকেই ফার্মেসী থেকে নিয়ে এসে ব্যবহার করে। কিন্তু লুব্রিকেন্ট ব্যবহারের কারনে শুক্রানু অনেক সময় মরে যায়। তাই লুব্রিকেন্ট ব্যবহার না করে এমনিতেই মিলন করার চেষ্টা করুন। প্রাকৃতিকভাবে থুথু, অলিভওয়েল বা নারিকেল তেল পিচ্ছিল করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন।
মিলনের সময় নারীদের ব্যথা লাগলে বা জলন হলে করনীয়
এক্ষেত্রে মিলনের আগে সঙ্গীকে ফোরপ্লে করতে হবে। যাতে সঙ্গীনির মিলনে আগ্রহ বাড়ে এবং মিলনরে সময়ে পূর্ণ মনোযোগ রাখতে হবে। মিলনের সময় অমনোযোগী হলে মিলনে পূর্ণ আগ্রহ আসে না। মিলনকে উপভোগ করতে হবে। এতে প্রাকৃতিক ভাবেই নারীদের যৌনাঙ্গ পিচ্ছিল হয়ে যায় । সেজন্য মিলনের সময় নারীদের ব্যথা লাগবে না এবং জলন হবেনা। যদি এসবেও কোন কাজ না হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা বা পরামর্শ নিতে হবে।অনেক সময় ইন্ড্রোমিন্ট্রিওসিস হলে ভ্যাজানাতে কোন ব্যাকটরিয়াল ইনফেকশন হলে এবং যৌনাঙ্গে প্রপার লুব্রিকেশন তৈরি না হলে নারীদের জলন বা ব্যথার সৃষ্টি হয়। মূলত এই সমস্যার কারনে নারীদের মিলনে অনাগ্রহ বা ভয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়গুলোকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে সমস্যাগুলোকে সমাধান করাই উত্তম।
উপরিউক্ত আলোচনা গুলো আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি কিভাবে সহবাস করলে দ্রুত গর্ভধারন হবে তা আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। তবে একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে সন্তান দেওয়ার মালিক হলো একজনই। তাই ভেঙ্গে না পড়ে ওপর ওয়ালার প্রতি ভরসা রেখে আপনি আপনার মতো কাজ করে যান। তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার কাজের ফল একদিন ঠিকই পাবেন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url