নামাজ না পড়লে কবরে কি কি শাস্তি হবে - বেনামাজিদের শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজ আমরা নামাজ না পড়লে কবরে কি কি শাস্তি হয় এবং বেনামাজিদের শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আমরা অনেকেই রয়েছে যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে হোক নামায পড়িনা। আর আমরা জানি যে, নামায হলো বেহেস্তের চাবি।
তাই নামায আদায় করা যে একজন মুসলিম হিসাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা সবাই জানি। আর জেনে শুনেই প্রতিনিয়ত আমরা নামায কাযা করি। নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজ আপনি জানতে পারবেন, নামায না পড়লে কবরে কি কি শাস্তি হবে এবং বে নামাযীদের শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো
বেনামাজির শাস্তিঃ- নামাজ ত্যাগ করলে এবং রীতিমতো আদায় না করলে তার উপরে ১৫ টি আযাব নাযিল হবে। তার মধ্যে দুনিয়াতে ৬টি, মৃত্যুর সময় ৩টি, কবরের মধ্যে ৩টি এবং হাশরের মাঠে ৩টি। এখন আমরা ১৫টি আজাবের মধ্যে সর্বপ্রথম দুনিয়াতে যে ৬টি আযাবের কথা বলা হয়েছে সে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নামায না পড়লে দুনিয়াতে যে ৬টি আযাবের কথা বলা হয়েছে তা হলো:-
- বেনামাজির হায়াত কমে যাবে।
- বেনামাজির জীবনে বরকত হবে না।
- বেনামাজির চেহারায় কোন সৌন্দর্য থাকবে না।
- বেনামাজির কোন দোয়া রব্বুল আলামীনের দরবারে কবুল হবে না।
- বেনামাজির সব নেকি বরবাদ হবে।
- বেনামাজির নিকট হতে সব রহমতের ফেরেশতা চলে যাবে এবং এক সময় সে ইসলাম হতে খারিজ হয়ে যাবে।
নামায না পড়লে মৃত্যুর সময় যে ৩টি আযাবের কথা বলা হয়েছে তা হলো:-
- বেনামাজির মৃত্যুর সময় অপমানিত লাঞ্ছিত ও অতি কষ্ট দিয়ে তার জান কবজ করা হবে।
- বেনামাজি ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।
- বেনামাজির মৃত্যুর সময় এত পিপাসা লাগবে যে, তার মনে চাবে সাত দরিয়ার পানিও যদি তার মুখে ঢেলে দেয় তবুও তার পিপাসা মিটবে না।
নামায না পড়লে কবরে যে ৩টি আযাবের কথা বলা হয়েছে তা হলো:-
- বেনামাজির মৃত্যুর পর কবর তাকে দুই পাশ থেকে এমনভাবে পৃষ্ঠে থাকবে যে এতে তার এক পাঁজরের হাড় অপর পাঁজরের হাড়ের সাথে মিশে যাবে।
- বেনামাজির কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে।
- বেনামাজির কবরে বিরাট বিরাট সাপ এসে ভরে যাবে এবং এক ফেরেস্তা এসে তাকে জোরে জোরে গূর্জ মারতে থাকবে।
নামায না পড়লে হাশরের মাঠে যে ৩টি আযাবের কথা বলা হয়েছে তা হলো:-
- বেনামাজিকে আল্লাহ পাক গজবের সহিত ডাকবেন এবং বিরাট সাপ এসে তাকে খোঁজ করতে থাকবে।
- ৩০ হাজার বছরের পুলসিরাতের রাস্তা, যা হীরার চেয়ে ধারালো, চুলের চেয়ে চিকন এবং আমাবর্সার রাতের চেয়ে অন্ধকার। যখন সে পুলসিরাতের রাস্তার উপরে পা রাখবে তখন তার পা কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
- বেনামাজির জন্য “ওয়াইল” নামক একটি দোযখ আল্লাহ তায়ালা ঠিক করে রেখেছেন। যেখানে ফেরেশতা কেয়ামতের দিন তাকে ধাক্কা দিয়ে সেই দোযখে ফেলে দিবে।
উপরিউক্ত আযাবগুলো যখন বেনামাজিকে দেওয়া হবে তখন তারা বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে অনেক আকুতি মিনতি করতে থাকবে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, হে দুনিয়ার বেনামাজি বাদশা বলো, কেন তুমি দুনিয়াতে নামাজ আদায় করো নি। সে বলবে ব্যস্ততার জন্য সময় পাইনি। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, সোলাইমান (আঃ) সারা বিশ্বের রাজত্ব পেয়েও কোনদিন নামাজ ত্যাগ করেননি, তুমি মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছো। হে ফেরেশতারা ওকে জাহান্নামে নিয়ে যাও।
রোগী বলবে রোগের জ্বালায় নামাজ পড়তে পারিনি। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন আইয়ুব (আঃ) কে ১৮ বছর পোকায় খেয়েছেন তবুও সে নামাজ ছাড়ে নি। এই মিথ্যাবাদীকে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আর একজন বলবে, আমার সন্তান অনেক ছিল তাদের সেবায় আমি ব্যস্ত ছিলাম সেজন্য নামাজ আদায় করতে পারিনি। তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে বলবেন, ইয়াকুব (আঃ) এর ছেলেমেয়ে তোমার চেয়েও বেশি ছিল। ইউসুফের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবুও সে নামাজ ছাড়েনি। তুমি মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছো। সে ফেরেশতাগণ ওকে জাহান্নামে নিয়ে যাও।
বেনামাজি স্ত্রী লোককে হাজির করা হবে। সে বলবে স্বামীর কাজের চাপে তাহার ভয়ে নামাজ পড়তে পারিনি। তখন তাকে বলা হবে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়ার স্বামী বড় জালিম, নাকি তোমার স্বামী বড় জালিম? জালিমের বিবি হয়েও আছিয়া নামাজ ছাড়েনী। তুমি মিথ্যা অজুহাত দিচ্ছো। হে ফেরেশতাগণ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আমাদের নবী হযরত (সাঃ) বলেন, বেনামাজির দুই হাত জিঞ্জির দ্বারা বাধা হবে। অতঃপর ফেরেশতাগণ তার মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠে আঘাত করতে থাকবে।
তখন বেহেশত তাকে ডেকে বলবে, ওহে আল্লাহর শত্রু! আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। আমিও তোমার নই এবং তুমিও আমার নও। তখন দোযখ তাকে ডেকে বলবে, আসো! আসো! আমার নিকট আসো! আমি তোমার তুমি আমার। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিসে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, জাহান্নামে “লমলম” নামে একটি জায়গা আছে। যাহা দেখতে উটের গর্দানের মত এবং এক মাসের পথের ন্যায় এবং ভয়ঙ্কর সাপ দ্বারা ওই জায়গাটা পরিপূর্ণ।
সেখানে বেনামাজীদের কে ফেলে দেওয়া হবে। তখন লক্ষ লক্ষ ভয়ঙ্কর সাপ বেনামাজিদেরকে পেঁচিয়ে ধরে মনের আনন্দে দংশন করতে থাকবে। তাই আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এখনো সময় আছে দোযখের আজাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে, আল্লাহ পাকের কাছে পানাহ চান এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করুন। আর আমাদের নবী রাসূলগণরা যেভাবে জীবন পরিচালনা করেছে সেই পথে নিজের জীবনকে পরিচালনা করুন।
নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে কোন এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, দোযখের মধ্যে “জুব্বুল হুযুন” নামে বিরাট আকারের একটি ময়দান আছে। যা শুধু বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ণ। এক একটি বিচ্ছু খচ্চরের মতো উঁচু ও মোটা। বেনামাজিদের কে দংশন করার জন্যই উহাদিগকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে নামাজ আদায় করে আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাচিল করার তৌফিক দান করুক (আমিন)।
প্রিয় পাঠকগণ উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, নামাজ না পড়লে কবরে কি কি শাস্তি হবে। তাই এরকম অজানা তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url