শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - যক্ষা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিরোধ
নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। আর এই রোগ শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনো সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আজকে আমরা শিশুর নিমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানব। তাই অবশ্যই ধৈর্য সহকারে সম্পন্ন পোস্টটি পড়তে থাকুন। প্রত্যেকটা অভিভাবকের উচিত শিশুর বেড়ে ওঠার সময় নিউমোনিয়া সম্পর্কে যথাযথ সচেতন হওয়া।
সারা বিশ্বে পাঁচ মাস বয়সী শিশুদের মৃত্যুর শতকরা 16 ভাগের জন্য এই নিমোনিয়া দায়ী। বাংলাদেশের প্রতি বছর ২৫ হাজারের বেশি শিশু এই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সাধারণত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ফুসফুস ভাইরাস এবং ছত্রাকের আক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানি।
শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ইতিপূর্বে আমরা জানতে পেরেছি এটি একটি ফুসফুসের দ্বারা তৈরি রোগ। অত্যাধিক ঠান্ডা লাগলে এই রোগ হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। এই রোগ যে শুধু শিশুদের হয় এমনটা কিন্তু নয় এ রোগ শিশু বয়স্কদের জন্য মারাত্মক একটি রোগ। আর এই ধরনের রোগ ওই সকল শিশু বা বয়স্কদের হয়ে থাকে যারা চরম অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকে। যাদের বিভিন্ন ধরনের হাম, হুপিং কাশি তাদের এ রোগ হতে পারে। এছাড়া যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং জন্মগতভাবে হিট যন্ত্র ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত তাদের এ সকল রোগ হয়ে থাকে।
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
- সাধারণত রোগীর দেহে ফুসফুসে শ্লেষ্মা জাতীয় তরল পদার্থ জমে বুকে কফ সৃষ্টি করে
- কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে
- দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ শরীরে বেশি জ্বর অনুভব হয়
- চূড়ান্ত পর্যায়ে বুকের মধ্যে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয় এবং মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
- বুকে ব্যথা
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- পেশি ব্যথা করা
- মাথা ব্যথা করা
- ক্লান্তি ভাব অনুভব করা
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
- তরল ও গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে
- বেশি করে পানি পান করতে হবে
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ
- শিশু অথবা, বয়স্কদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে
- ধূমপান পরিহার করতে হবে
- আলো বাতাস পূর্ণ গৃহে বসবাস করতে হবে
- রোগীকে সবসময় সহনীয় উষ্ণতায় এবং শুষ্ক পরিবেশে রাখা
যক্ষা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
আমরা জানি যে যক্ষা একটি পরিচিত বায়ুবাহিত সংক্রমক জনিত রোগ। এই রোগ যেকোন বয়সের মানুষদেরকে যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে। যারা অধিক পরিশ্রম করে, দুর্বল, স্যাতসেতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বসবাস করে। এবং অপুষ্টিতে ভোগে কেবল তাদের ঐ এই রোগ দ্বারা সংক্রমিত হতে দেখা যায়। আমাদের অনেকেরই ধারণা যে যক্ষা শুধুমাত্র ফুসফুসের একটি রোগ, তবে ধারণাটি একেবারেই সঠিক নয়। কারণ যক্ষা দেহের যে কোন স্থানে যেকোনো সময় হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ যেমন-শরীরে অন্ত্র, হাড়ে, ফুসফুসে ইত্যাদি। যক্ষা মানুষের শরীরে আক্রমণ করলে প্রাথমিক অবস্থায় এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে অনেক দেরি হয় বা সহজেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। মানুষের শরীরে যক্ষা রোগ তখনই আক্রমণ করে যখন জীবাণুগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ও শ্বেত রক্ত কণিকাকে পরাস্ত করে ঠিক তখনই এই রোগ প্রকাশ পায়।
কারণ
Mycobacterium tuberculosis নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সংঘটিত হয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে অতি সহজেই এই রোগ জীবাণু বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
লক্ষণ
- যক্ষা রোগ হলে সাধারণত রোগীর ওজন কমতে থাকে
- আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হয়
- সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকে
- খুশখুসে কাশি হয় এবং কখনো কখনো কাশির সাথে হালকা পরিমাণে রক্ত বের হয়
- রাতে ঘাম হয় বিকেলের দিকে জ্বর আসে
- দেহের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ে না
- বুকে পিঠে ব্যথা হয়
- অজীর্ণ পেটের পীড়া দেখা দেয়
প্রতিকার
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা
- এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নিবারণের নিয়ম গুলো কঠিন ভাবে মেনে চলতে হবে
- রোগীকে হাসপাতালে বা স্যনাটরিয়ামে পাঠানো অধিক নিরাপদ
- রোগীর ব্যবহারে সবকিছু পৃথক রাখা উচিত
- রোগীর কফ বা থুত মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে
- রোগের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিমিত পুষ্টি খাবারের প্রয়োজন
- ডাক্তারের নির্দেশ ব্যতীত কোন অবস্থায় ওষুধ সেবন করা বন্ধ করা উচিত নয়
প্রতিরোধ
- এই মারাত্মক রোগের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে হলে অবশ্যই শিশুদের যক্ষা প্রতিষেধক বিসিজি টিকা দিতে হবে
- শিশুর জন্মের পর থেকে এক বছর বয়সের মধ্যে এই টিকা দেওয়া উত্তম
- বর্তমানে দেশের বিভিন্ন টিকা দান দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে
ব্রংকাইটিস রোগের প্রতিরোধ
শ্বাসনালীর ভিতরে আবৃত ঝিল্লিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে ব্রংকাইটিস বলে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ঝিল্লিগাত্রে প্রদাহ হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্যাতসেতে ধূলিকণা মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠান্ডা লাগাও ও ধূমপান থেকে এ রোগ সৃষ্টি হতে পারে। একবার ব্রংকাইটিস হলে বারবার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সাধারণত শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা এই রোগে আক্রান্ত বেশি হয়ে থাকে। ধূমপান ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দূষণ এ রোগের কারণ হিসেবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। যেমন কলকারখানার ধুলাবালি ও ধোয়াময় পরিবেশ।
লক্ষণ
- কাশি ও বুকে ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট হয়
- কাশির সময় রোগীর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে থাকে
- জ্বর হয়, রোগী ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে
- শক্ত খাবার খেতে পারে না
- কাশির সাথে অনেক সময় কপ বের হয়ে থাকে
প্রতিকার
- ধূমপান, মদ্যপান, তামাক ও সাদা পাতা খাওয়া বন্ধ করা লাগবে
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে
- রোগীকে সহনীয় উষ্ণতা ও শুষ্ক পরিবেশে রাখা
- পুষ্টিকর তরল ও গরম খাবার খাওয়ানো যেমন গরম দুধ, স্যুপ ইত্যাদি
- রোগীর পুনঃ বিশ্রাম নেওয়া
প্রতিরোধ
- ধূমপান মধ্যপান খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
- ধুলাবালি ও ধোয়া পূর্ণ পরিবেশে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
- শিশু ও বয়স্কদের যেন মাথায় ঠান্ডা না লাগে সেদিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে
ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ
সব ধরনের ক্যান্সারের মতে ফুসফুস ক্যান্সারের বাদুর ভাব বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে পুরুষদের ক্যান্সারের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ফুসফুসে ক্যান্সার। ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান ও অন্যতম কারণ হলো ধূমপান। বায়ু ও পরিবেশ দূষণ এবং বাসস্থান ও কর্ম ক্ষেত্রে দূষণ ঘটতে পারে এমন সব বস্তুর এ্যাসবেস্টাস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল, কঠিন ধাতুর গুড়া ইত্যাদি। আর এ সকল সংস্পর্শে আসার কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো যত দূরত্ব ও তার সাথে নির্ণয় করা যায় এবং এর চিকিৎসা প্রদান করা যায় তত বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিক অবস্থায় যেসব লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হল-
- দীর্ঘদিন ধরে খুশখুসে কাশি ও বুকে ব্যথা
- ভগ্নস্বর, ওজন হাঁস এবং খোদা মন্দ দেখায়
- হাঁপানি, ও ঘন ঘন জ্বর হয়
- বারবার ব্রংকাইটিস ও নিউমোনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়
- হাড়ে ব্যথা অনুভব, দুর্বলতা, কোন গ্রন্থি অবশ হয়ে যাওয়া জন্ডিস দেখা দেওয়া
প্রতিকার
- রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই অতি তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
- রোগ নির্ণয়ের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া
- প্রয়োজনে রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করা
প্রতিরোধ
- বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে যথা-
- ধূমপান ও মদ্যপান না করা
- অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- পরিমাণ মতো শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
সর্বশেষ কথা
আমরা ইতিমধ্যেই শিশুর নিমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, যক্ষা রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় এবং অন্যান্য রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি উপরোক্ত নিয়ম মেনে চললে অবশ্যই এ সকল রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। প্রিয় পাঠক আমাদের ওই ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক নানা পোস্ট আপলোড করা হয়ে থাকে তাই নিয়মিত আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url