মেয়েদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান
নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজ আমরা জানতে পারবো সঠিক এবং সহিহ ভাবে মহিলাদের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নারী ও পুরুষের নামাজের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা সেই সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানব।
মেয়েদের নামাজ পড়ার নিয়ম
নারী এবং পুরুষের নামাজের মধ্যে দুইটি নিয়ম আছে। প্রথম নিয়ম অনুযায়ী:- নারী-পুরুষের নামাজ একই রকম।নারী পুরুষের নামাজের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য নেই। কেননা সহিহ বুখারীর ৬০০৮ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমরা আমাকে যেমন ভাবে নামাজ আদায় করতে দেখেছো তোমরাও ঠিক তেমনভাবে নামাজ আদায় করো। আর আমরা জানি যে, রাসুল (সাঃ) নারী -পুরুষ সকলের জন্য আদর্শ। তাই সহিহ বুখারীর হাদিস দ্বারা আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে পারলাম নারী-পুরুষের নামাজের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য নেই। সেজন্য রাসূল (সাঃ) যেমন ভাবে নামাজ আদায় করেছেন ঠিক তেমনভাবে আমাদের নামাজ আদায় করতে হবে। এটা হলো প্রথম নিয়ম।
আবার পুরুষেরা যেমন, ইমামের পিছনে সব মুক্তাদি দাঁড়াই এটা পুরুষের ক্ষেত্রে নিয়ম কিন্তু নারীরা ইমামতি করলে মুক্তাদীদের সাথে একই কাতারে সমান হয়ে দাঁড়াতে হবে। এছাড়াও সহিহ বুখারীর ১২১৮ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, পুরুষের নামাজে ইমামের ভুল হলে লোকমা দিতে হবে সুবহানাল্লাহ বলে। আর সুবহানাল্লাহ বললে ইমাম বুঝবে যে তার নামাজে ভুল হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ইমামের ভুল হলে আমরা লুকমা দেই আল্লাহু আকবার বলে। যেহেতু সহিহ হাদিস দ্বারা সুবহানাল্লাহ বলে লুকমা দেওয়া প্রমাণিত হয়েছে তাই নামাযের মধ্যে যদি ইমামের ভুল হয় তাহলে আল্লাহু আকবার না বলে সুবহানাল্লাহ বলা উচিত। কারণ এটাই গ্রহণযোগ্য মত যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
আর নারীদের ক্ষেত্রে জামাতের নামাজে যদি ইমামের ভুল হয় তাহলে তারা লুকমা দেবে হাতে তালি দিয়ে। যেমন নারীরা বুকের উপরে হাত বাঁধে তাদের ডান হাত দিয়ে বাম হাতের পিঠের উপরে তালি দেবে। কারণ নারীদের কন্ঠেরও পর্দা আছে। এজন্য তারা হাতে তালি দেবে। আর একই জামাতে নারী-পুরুষ উভয়ই থাকলে ইমামের ভুল হলে পুরুষরা লুকমা দেবে সুবহানাল্লাহ বলে। আর পুরুষরা যদি ইমামের ভুল বুঝতে না পারে, নারীরা যদি বুঝতে পারে তাহলে নারীরা হাতে তালি দিবে। আর এইভাবে হাতে তালি দিলে ইমাম বুঝতে পারবে যে তার ভুল হয়েছে। তখন তিনি তার ভুল শুধরে নিবেন।
পুরুষ ও নারীর নামাজের পার্থক্য
আর পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করাই উত্তম। এই প্রসঙ্গে কেউ বলেছেন ফরজ, কেউ বলেছেন ওয়াজিব আবার কেউ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। এককথায় ফরজ নামাজ আদায় করা আমাদের উপর যেমন বাধ্যতামূলক ঠিক তেমনি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করাও পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক। আর আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে জামাতের নামাজ ত্যাগ করতে পারবেন না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত প্রদান কর এবং উপকারীদের সাথে রুকু কর (সূরা বাকারা, আয়াত নম্বর ৪৩)।
আর পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করাই উত্তম। এই প্রসঙ্গে কেউ বলেছেন ফরজ, কেউ বলেছেন ওয়াজিব আবার কেউ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। এককথায় ফরজ নামাজ আদায় করা আমাদের উপর যেমন বাধ্যতামূলক ঠিক তেমনি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করাও পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক। আর আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে জামাতের নামাজ ত্যাগ করতে পারবেন না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত প্রদান কর এবং উপকারীদের সাথে রুকু কর (সূরা বাকারা, আয়াত নম্বর ৪৩)।
সহিহ বুখারীর ৬১৭ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কোন মুমিন বান্দা যদি একা নামাজ না পড়ে জামাতে এসে নামাজ আদায় করে তাহলে সে ২৭ গুণ সওয়াব বেশি পাবে। এবং ৬১৮ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে এসে নামাজ আদায় করলে ২৫ গুন বেশি সওয়াবের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। এছাড়াও কোন কারন ছাড়াই যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জামাত পরিত্যাগ করে তাহলে তার কি কি শাস্তি হবে সে সম্পর্কেও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেল পুরুষেরা ইচ্ছাকৃতভাবে জামাত পরিত্যাগ করতে পারবে না। কিন্তু নারীদের জন্য ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম।নারী পুরুষের নামাজের মধ্যে এগুলোই পার্থক্য রয়েছে।
মেয়েদের নামাজ পড়ার নিয়ম
আবার কিছু পার্থক্য রয়েছে যেমন, পুরুষেরা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। আর নারীদের ক্ষেত্রে সারা দেহ ঢেকে রাখতে হবে। তিরমিজি শরীফের ১১৭৩ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, নারীরা হলো গোপনযোগ্য। সে যখন বাইরে বের হয় শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। অতএব রাসূল (সাঃ) নারীদেরকে নামাজে এবং নামাজের বাহিরে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও হানাফী মাযহাব এবং হাম্বলী মাযহাব মেয়েদের নামাযে আরো কিছু পার্থক্যের কথা বলেছেন। যেমন তারা বলেছেন:- নারীরা একটু জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াবে। তারা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে এবং বুকের উপরে হাত বাঁধবে।
তাদের পা গুলোকে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদায় গেলে তাদের দেহকে জমিনের সাথে লাগিয়ে দেবে। কারণ পুরুষদের তুলনায় নারীদের দেহের গঠন আলাদা। যার কারণে তারা এই মতগুলি পেশ করেছেন। নারী এবং পুরুষের নামাজের মধ্যে এই দুটি পার্থক্য রয়েছে। কেউ বলে নারী পুরুষের নামাজের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য নেই। আবার কেউ বলে নারী পুরুষের নামাজের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। প্রথম পক্ষ বলেছেন নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আর দ্বিতীয় পক্ষ বলেছেন, যেহেতু নারী পুরুষের দেহের গঠন আলাদা সেহেতু মুসান্নাফ ইবনে আবু শাইবা এবং মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক এগুলির মধ্যে নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য হাসান হাদিসগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। সেটাকে তারা গ্রহণযোগ্য বলেছেন। আমরা প্রথম মতটিই গ্রহণ করতে পারি। কেননা রাসুল (সাঃ) সকল মুসলমানের জন্য আদর্শ স্বরূপ। আর আমরা দ্বিতীয় নিয়মটিও গ্রহণ করতে পারি। কেননা নারী পুরুষের দেহের গঠন আলাদা। সেহেতু নারীরা যদি পুরুষের মতো নামাজ আদায় করে তাহলে তাদের পর্দার ক্ষতি হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যেন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করেন (আমিন)।
প্রিয় পাঠক উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজ আমরা খুবই পরিষ্কারভাবে জানতে পারলাম মেয়েদের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নারী ও পুরুষের নামাজের মধ্যে কি কি পার্থক্য থাকা প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। তাই এরকম অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং নিয়মতি আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url