অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ - অনিয়মিত মাসিকের প্রতিকার ২০২৩
অনিয়মিত মাসিক? এই সমস্যা নিয়ে প্রচুর মহিলারা এখনো ভুগেতে দেখা যায়। এর মধ্যে কারো সমস্যা হলো, গত ৩-৪ মাস মাসিক হয় না। আবার কারো এক মাসে দুই বার মাসিক হয়। আবার অনেকের মাসিক রেগুলারি হয় কিন্তু দুটো মাসিকের মধ্যবর্তি যে সময়টা সে সময়ে অনিয়মিত ব্লিডিং হয়।
আবার যারা বিবাহীত দেখা যায় তাদের সহবাসের পরে রক্ত চলে আসে ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা মা-বোনদের হয়ে থাকে। নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আজ আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে এবং জানতে পারবেন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারন ও এর প্রতিকার সম্পর্কে।
অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
অনিয়মিত মাসিক সম্পর্কে যদি একদম সহজভাবে বলা যায় তাহলে বলতে হবে, সাধারনত একজন নারীর মাসিকটা হয় প্রতি ২৮ দিন অন্তর অন্তর। আমরা বলে থাকি, ২২-৩৫ দিন অর্থ্যাৎ কারো যদি ২২-৩৫ দিনের মধ্যে এবং এই দুরুত্বে মাসিক হয় তাহলে সেটা স্বাভাবিক। তাহলে ২১ অথবা তার আগে অথবা ৩৫দিন বা তার পর পর যদি কারো মাসিক হয় তাহলে এ দুটোকেই কিন্তু আমরা অনিয়মিত মাসিক বলে থাকি। অনিয়মিত মাসিক নিয়ে কিন্তু অনেকেই অনেক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। নারীদের জীবনে বিভিন্ন স্টেজ আছে।
বিভিন্ন সময় আছে, যেসময় গুলোতে মাসিক কিছুটা অনিয়মিত হতে পারে। এবং এই সময়গুলোতে অনিয়মিত হলে এটা নিয়ে আমরা অতো দুশ্চিন্তা করিনা। এসময়গুলো হলো: প্রথমতো যখন একজন নারীর মাসিক শুরু হয় অর্থ্যাৎ যেটাকে আমরা মেনারকি বলে থাকি। প্রথম দিকে দেখা যায়, মাসিক অতোটা নিয়মিত থাকেনা। হয়তো এখন মাসিক হলো? দুমাস বন্ধ থাকলো? আবার হয়তো দুমাস পরে হলো? অথবা মাসে দুবার হলো। প্রথম এক-দুই বছর এটা হতে পারে। এটা নিয়ে আমরা অতোটা দুশ্চিন্তা করিনা। অর্থাৎ মাসিক শুরু হওয়ার পর পর যে অনিয়মিত এটাকে আমরা কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই নিবো। আবার মনে করুন কারো বাচ্চা ডেলেভারি হয়েছে, ডেলেভারি হওয়ার পরবর্তী ৬ মাস সাধারনত যদি বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খায় তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু মাসিকটা বন্ধ থাকে।
তবে এ সময়ও কিন্তু অনেকের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। সেটাকে নিয়েও আমরা অতোটা দুশ্চিন্তা করিনা। ঠিক একই ভাবে মাসিক বন্ধ হওয়ার আগে অর্থ্যাৎ ম্যানুপোজের আগ দিয়ে দুই বছর দেখা যায়, অনেকেরই অনিয়মিত মাসিক হয়। এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এই জিনিসগুলো যদি সবসময় হয়, অর্থ্যাৎ কারো যদি মাসিক হওয়ার শুরু থেকেই মাসিকটা অনিয়মিত থাকে অথবা কারো বাচ্চা হওয়ার পরে মাসিক যেটা অনিয়মিত হয়েছিল সেটা অনিয়মিত ভাবেই চলতে থাকে তবে কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে হবে। মাসিকের সাথে আমাদের শরীরের ওজনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
আমরা দেখি, কারো যাদি হঠাৎ করে ওজন অনেক বেড়ে যায় অথবা ওজন কমে যায় তার কিন্তু মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। আবার ধরুন কেউ কোনকিছু নিয়ে অনেক টেনশনে আছেন, ডিপ্রেশনে আছেন, অথবা সামনে পরীক্ষার একটা টেনশন আছে তখনও কিন্তু মাসিকটা অনিয়মিত হয়।মহিলাদের একটা বড় ধরনের সমস্যা হলো: হরমনের সমস্যা । এটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আবার থাইরোডি সমস্যা হলেও কিন্তু মাসিক অনিয়মিত হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাসিক হচ্ছেনা, কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে।
আবার আরেকটা অসুখ আছে যেটা এখন খুবই পরিচিত সেটা হলো পলিসিস্টিক ওভারিসিনডো। এই সমস্যা হলে দেখা যায়, প্রত্যেক মাসে রেগুলার মাসিকটা হয়না। ডিম্বাসয়ের চারদিকে ছোট ছোট অনেকগুলো সিস্ট তৈরি হয় এবং এই সিস্টের কারণে ঠিকমতো ডিমটা ফুটতে পারেনা। কন্টিনিউয়াস একটা হরমোনের প্রভাবে দেখা যায়, মাসিকটা তিন চার মাস পর পর হয়। অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধও থাকতে পারে। আরো কিছু সমস্যা মেয়েদের হয়ে থাকে যেমন: হয়তো তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খাচ্ছেন, যেটাকে আমরা পিল বলে থাকি। কিন্তু দেখা যায় যে, পিলটা তিনি নিয়ম মতো খাচ্ছেন না। অথবা অন্য কোন হরমোন ঔষধ খাচ্ছে যেটা তার মাসিকটাকে অনিয়মিত করে দিচ্ছে।
আবার অনেক নারী আছে যাদের দুটো মাসিকের মধ্যবর্তী যে সময়টা, এই সময়টাতে অনিয়মিতভাবে ব্লিডিং হচ্ছে। এটার কারণ কি? এটার কারণ সাধারনত দেখা যায়, লোকাল সাইটার। অর্থ্যাৎ জরায়ু অথবা জরায়ুর মুখের কোন সমস্যা থাকলে এধরনের অনিয়মিত ব্লিডিং হতে পারে। জরায়ুর মুখে যদি কোন ইনফেকশন হয়ে থাকে অথবা জরায়ুর ভেতরে কোন ছোট পলিপ থাকে সেগুলোর কারনেও কিন্তু অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।
অনিয়মিত মাসিকের ঔষধের নাম
বর্তমান সময়ে অনেকেই রয়েছে অনিয়মিত মাসিকের ঔষধের নাম জানতে চেয়ে থাকে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু অনিয়মিত মাসিকের ঔষধের নাম নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- নরমেনস ট্যাবলেট
- মেনোরাল ট্যাবলেট
- নিসওয়ান
- রেহমিন
- সাধনা ঔষধালয়
- একমি আয়ুর্বেদিক
- ইবনে সিনা ইউনানী
- স্কয়ার হারলাল
- অপসোনিন হারবাল
অনিয়মিত মাসিকের প্রতিকার
অনিয়মিত মাসিক হলে আমরা কি করতে পারি? অনিয়মিত মাসিকের এই নানা কারণ অবশ্যই অত্যন্ত চিন্তার একটা বিষয়। এবং যদি মাসিকটা অনিয়মিত থাকে, স্বাভাবিকভাবে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে যায়। মাসিক একজন নারীর জন্য অত্যন্ত সেনসিটিভ একটা জিনিস। যেমন ধরুন: একজন নারী গর্ভবতী হয়, আবার একজন নারীরই কিন্তু মাসিক হয়! কিন্তু যখন দেখা যাচ্ছে যে, একজন নারীর মাসিক হচ্ছেনা, স্বাভাবিকভাবেই তিনি এটা নিয়ে অত্যন্ত অবসতগ্রস্থ হয়ে পড়েন এবং চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এখন মুল বিষয় হলো আপনার অনিয়মিত মাসিক হলে আপনি কি করবেন? এর সমাধান হলো: যদি মাসিক অনিয়মিত হয় আপনি দেরি না করে একজন গাইনোক্লোজিস্ট অভিজ্ঞ ডঃ পরামর্শ নিন। তার সাথে আপনার সমস্যা নিয়ে কথা বলুন। হয়তো হরমোনজনিত সমস্যা, অথবা পলিসিস্টিক অভারিসিনডম এটার জন্যও হয়তো আপনার মাসিকটা অনিয়মিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনার কিছু টেস্টের মাধমে মাসিকের এই সমস্যাটাকে দেখে আপনাকে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে এই সমস্যা থেকে আপনি ইনশআল্লাহ মুক্তি হতে পারবেন।
অনিয়মিত মাসিক? এটা কিন্তু একদমই ছোট খাটো সমস্যা না। আপনি যদি এই সমস্যাটাকে ছোট খাটো সমস্যা মনে করে অবহেলা করেন তাহলে এরজন্য কিন্তু আপনার জীবনে বড় কোন র্দূঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই অবহেলা না করে , পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজনদের কথাই কান না দিয়ে আপনি অবশ্যই ভালো অভিজ্ঞ একজন গাইনোক্লোজিস্ট অভিজ্ঞ ডঃ পরামর্শ নিবেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিবেন। আর এটা এমনি এমনি ভালো হয়ে যাওয়ার কোন বিষয় না তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা নিন আর সুস্থ থাকুন।
প্রিয় পাঠক মা ও বোনেরা, আপনারা নিশ্চয় উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে ও জানতে পেরেছেন যে, অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী এবং এই সমস্যা থেকে আপনি কিভাবে মুক্তি লাভ করতে পারেন। তাই এরকম অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url