আমরা সকলে চর্মরোগ সম্পর্কে কম-বেশী জানি। কিন্তু চর্মরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকে জানি না। এই আর্টিকেল থেকে আমরা চর্মরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানব । আরো জানব কী কী কারণে চর্ম রোগ হয়। চর্মরোগের লক্ষণগুলো কী সেগুলো সম্পর্কেও জানব। নিচে চর্মরোগের চিকিৎসা কারণ,লক্ষণ,সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
জেনেটিক কারণে যে সকল চর্ম রোগ হয়ে থাকে সে সকল চর্ম রোগ চিকিৎসা করেও তা সহজে নির্মূল করা যায় না। আর পারিপার্শ্বিক কারণে এ ধরনের রোগ হয়ে থাকলে ওষুধ, মলম, ক্রিম,জীবন ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ধরনের চর্ম রোগের চিকিৎসা করা যায়।
চর্মরোগের কারণ ও লক্ষণ
আমরা সকলেই চর্মরোগ সম্পর্কে কম বেশি জানি । অনেকে মনে করে চর্মরোগ নিদিৃষ্ট কিছু কারণে হয়ে থাকে । এ ধারণা সঠিক নয় । চর্ম রোগের ভিন্ন ধরন ও কারণ হয়ে থাকে। চর্মরোগ গুলোর ধরন নির্ভর করে সংক্রামক এজেন্টের উপর। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের কারণে ত্বকে চর্মরোগের সংক্রমন ঘটে । তাছাড়া এলার্জি জাতীয় খাবারের কারণে চর্মরোগ হয়ে থাকতে পারে । পাশাপাশি দেহে যদি অন্যান্য রোগের সংক্রমন থাকে তাহলে ইহার কারণেও চর্মরোগ হতে পারে। তাই চর্মরোগ হলে চর্মরোগের চিকিৎসা নেওয়া অতীব জরুরী।
বিভিন্ন রোগের মত চর্ম রোগের ও নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ আছে। এ লক্ষণগুলো নির্ভর করে সংক্রামক এজেন্ট এর উপর। নিচে চর্মরোগের নিদিৃষ্ট কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো।
- ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়।
- ত্বকে ব্যাথা বা চুলকানি বা জ্বালাপোড়া অনুভব হয়
- ত্বক থেকে চামড়া উঠে যায়
- ত্বকে বিবর্ণ দাগ দেখা যায়
- ত্বকে ঘা হয়ে
- অনেক সময় ঘা থেকে পানির মত তরল পদার্থ বের হয়
চর্মরোগের চিকিৎসাদি সাধারণ চর্মরোগ হয়ে থাকে তাহলে চর্মরোগের চিকিৎসা নিলে তা নিরাময় করা যায়। কিন্তু বংশগত কারণে চর্মরোগ হয়ে থাকলে তা নিরাময় করা যায় না । চর্মরোগের হওয়ার অনেক কারণ আছে । তবে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে এ ধরনের রোগ নিরাময় করা যায়। পাশাপাশি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মেনে চলার মাধ্যমে এজন্য রোগ নিরাময় করা যায়। চর্ম রোগের হলে এন্টিহিস্টামিন গ্রহণ করতে হবে। চর্ম রোগের ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।পাশাপাশি ডাক্তারেরপ্রেসক্রিপশন নিয়মিত মেনে চলতে হবে।
চর্মরোগের প্রতিরোধ
রোগ হলে চিকিৎসা করতে হবে এ বিষয়ে আমরা সকলে জানি । কিন্তু রোগ হওয়ার আগে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়তে হবে এ বিষয়ে আমরা সচেতন নই । শরীরে রোগ বাসা বাধা আগে প্রতিরোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উত্তম। নিম্নে চর্মরোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে তুলে ধরা হল।
- শরীরে শুষ্কতা দূর করার জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে । কারণ শুষ্কতার কারণে অনেক সময় চর্মরোগ হয়ে থাকে ।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে । কারণ শরীরে ভিটামিনের অভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । ফলে চর্মরোগ সহ বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে ।
- সংক্রামক রোগের টিকা নিতে হবে
- নিজের ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না। অন্যের ব্যবহৃত জিনিসপত্রে ব্যবহার করার আগে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে । ন্হলে সংক্রমন আপনার কাছে ছড়িয়ে পড়বে।
- অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে এ ধরণের রোগ হতে পারে । অতএব শারীরিক মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন ।
- এলার্জিযুক্ত খাবার পরিহার করার অভ্যাস করতে হবে ।
- ক্ষতিকর প্রসাধনীর ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
গোসলের যেসকল ভুলে হতে পারে চর্মরোগ
আমরা প্রতিদিন কম বেশী সকলে গোসল করে থাকি । গোসল করার ফলে অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর হয়, শুষ্কতা চুলকানি দূর হয় , ব্যাকটোরিয়া দূর হয় , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু দেখা যায় গোসলের ভুলের কারণে অনেক সময় চর্মরোগ হতে পারে । অত এব এ সকল বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
গোসলে সাবান ব্যবহারের সময় অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে হবে। এটাও চর্ম রোগের চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম টপিক।। অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল সাবান ক্ষতিকর ব্যাকটোরিয়া ধ্বংশ করে দেয়। যাদের ত্বকে সমস্যা আছে তাদের সুবাসযুক্ত সাবান ব্যবহার না করাটা উত্তম। সুবাসযুক্ত সাবান ব্যবহার করার ফলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।আমরা মুখমন্ডল , হাত,পা, শরীর মুছার জন্য তোয়াল ব্যবহার করি । কিন্তু তোয়ালে লেগে থাকা ব্যাকটোরিয়া কারণে ত্বকের ক্ষতে হয়। যে বিষয়ে আমরা অনেকে সচেতন নই । সপ্তাহে একদিন তোয়াল ধৌত করতে হবে। ওয়াশরুম হচ্ছে ব্রাকটোরিয়ার আতুর ঘর । সেক্ষেত্রে মাজুনি ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকত হবে।অপরিষ্কার মাজুনি ব্যবহারের কারণে শরীরে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
আমরা যেমন শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করি ঠিক গরমের সময় হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করার ফলে শরীর থেকে ব্যাকটোরিযা দুর করা সম্ভব । এর ফলে আমাদের ত্বককে ব্যাকটোরিয়রা সংক্রমণ থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
সাবান ত্বকের যে ভাবে ক্ষতি করে
আমরা জানি আমাদের ত্বকে কিছু উপকারি ব্যাকটোরিয়া আছে । এই উপকারি ব্যাকটোরিয়াগুলো ত্বককে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে । কিন্তু সাবানের ক্ষার ত্বকের উপকারি ব্যাকটোরিয়াগুলো ধ্বংস করে দেয় । ত্বকের শারীরিক পিএইচ হচ্ছে ৫.৫। আর সাবানের পিএ্ইচ ৯ এর উপরে । এর ফলে ত্বকের উপকারি ব্যাকটোরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায় । ফলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চর্মরোগসহ নানান ধরনের রোগ ত্বকে আক্রমণ করে।
চর্মরোগ ও ব্রুণ সম্পর্কে জানুন
ব্রণ ছোট ছোট লালচে গোটা প্রকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণ ভ্রুণ ত্বকে হয়ে থাকে। ত্বকে ব্রণ হয় মূলত লোমক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। ত্বকে তৈলগ্রন্থিতে বয়সন্ধিকালে তেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা যায়। একপর্যায়ে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্রণ সেখান থেকে তৈরি হয়।
ব্রণে হাত লাগানো যাবে না। অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার না করাই ভালো।দিনে দুইবার হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রণের সমস্যার সমাধান করতে হলে ত্বকের জন্য উপকারী এমন খাদ্য অভ্যাস গ্রহণ করা জরুরী। ত্বকের জন্য উপকারী খাবার গুলো হচ্ছে শাকসবজি, ফল, মাছ ,বাদাম ও শস্য জাতীয় খাবার। তাছাড়া ত্বক সুস্থ রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি ব্রুন নামক এই চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে হবে।
চর্মরোগ এনজিওমা
চুলকানি জাতীয় চর্ম রোগের মধ্যে একজিমা অন্যতম। একজিমার লক্ষণ হচ্ছে ত্বকে লালবর্ণ ধারণ করে এবং ত্বকে চুলকানি হয়। একজিমা হয়ে থাকে মূলত শরীর বিভিন্ন সন্ধি স্থলে। যে সকল কারণে একজিমা হয় তা হলো পোকার কামড়, বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর ব্যবহার,হেয়ার ডাই ব্যবহার ইত্যাদি। একজিমা হলে ত্বকের যে অংশটি লাল হয়ে যায় সে অংশটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। অনেকে জীবনুনাশক তরল ক্রিম ব্যবহার করে যা করা উচিত নয়।
অনেক শিশুদের জন্মের সময়একজিমা দেখা যায় ।মূলত এটা ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। একজিমা হওয়ার কারণে শিশুদের ত্বক লাল হয়ে যায়। একপর্যায়ে ফুসকুড়ি উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে সাবান পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে ।ত্বকের আদ্রতার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাটা ভালো। পাশাপাশি এনজিওমা নামক এই চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে হবে।
চর্মরোগ ও একজিওমা
যাদের লিভার বা যকৃতির সমস্যা আছে তাদের মূলত এই এনজিওমের নামক চর্মরোগটি বেশি দেখা যায়। এ চর্মরোগটি মাকড়ার জালের মত দেখা যায়। এ রোগটি থেকে পরিত্রানের উপায় হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার ফলে এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং এই চর্মরোগের চিকিৎসা করতে হবে।
চর্মরোগ আমবাত
আমবাত ছোট বড় সকল বয়সের মানুষের হতে পারে। ত্বকের বিভিন্ন প্রকার এলার্জির মধ্যে আমবাত অন্যতম। আমবাত কারণে ত্বক লাল লাল দাগ পড়ে যায়। একপর্যায়ে ত্বক ফুলে ওঠে এবং চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। খাদ্যের এলার্জি, বাতাস এলার্জি সংক্রমণ ,তাপ, ঘাম, অনিয়ন্ত্রণ জীবন যাপনের কারণে হতে পারে। পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে এই চর্মরোগের চিকিৎসা করতে হবে।
চর্মরোগ ইম্পোটিগো সম্পর্কে জানুন
ইম্পোটিগো এর চর্মরোগটি শিশুদের হয়ে থাকে। ইম্পোটিগো ইহা ব্যাকটোরিয়া জাতীয় চর্ম রোগ । এ রোগাটি শিশুদের নাকের নিচে, মুখমণ্ডলে হতে পারে। এম্পটিগো এই চর্মরোগটি পোকামাকড়ের কারণে হতে পারে। তাছাড়ািএটি ত্বকের কাঁটা ছেঁড়া থেকে, ত্বকের কোন ফাংগাল ইনফরমেশন এর কারণে রোগটি হতে পারে।
ত্বক শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ । যদিও আমরা ত্বকের বিষয়ে সচেতন নই । ত্বকের বিষয়ে সচেতন না হওয়ার কারণে আমাদের শরীরে চর্মরোগের মতো বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ দেখা যায় । এজন্য ছোট বড়, নারী পুরূষ সকলের ত্বকের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মনে রাখবেন রোগের জন্য চিকিৎসা নেওয়ার থেকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উত্তম।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url