সুদ কি - সুদের ভয়াবহতা - সুদ হারাম হওয়ার কারণ জেনে নিন ২০২৩
আপনারা সবাই কমবেশি জেনে থাকবেন যে ইসলামে সুদকে হারাম করেছে কারণ সুদের অপকারিতা অত্যন্ত মারাত্মক। আর এই সুদ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে। সুদের প্রভাবে একজন মুসলিমের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। আজকে আমি সুদ সম্পর্কিত সকল সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচীপত্রঃ সুদ কি - সুদের ভয়াবহতা - সুদ হারাম হওয়ার কারণ জেনে নিন ২০২৩
সুদের পরিচয়
সুদ একটি ফার্সি শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ হলো রিবা, কাউকে কোন ঋণের মূল্য পরিমানের ওপর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করাকে রিবা বা সুদ বলা হয়। সুদ সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর আবির্ভাবকালে এটি এক ধরনের ব্যবসায় রূপান্তরিত ছিল। এবং আরবসহ বিশ্বের অনেক সমাজে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। এবং এই সুদের প্রভাবে ধনীরা ধনী হতো এবং গরিবরা আরো পর্যায়ক্রমে নিঃস্ব হয়ে যেত।
অনেকের সুদ ও মুনাফা বা লভ্যাংশকে সমরূপ মনে করেন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অর্থে এ দুটো এক নয়। কারণ সুদে লোকসানের কোন ঝুঁকি থাকে না, কিন্তু মুনাফা বা লভ্যাংশে ঝুঁকি থাকে। সুদের সংজ্ঞা দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (যে ঋণ কোন লাভ নিয়ে আসে তাই রিবা বা সুদ)
আরো পড়ুনঃ রোজা অর্থ কি - রোজা কত প্রকার কি কি বিস্তারিত জানুন
ঋণদাতা কর্তৃক ঋণগ্রহীতা থেকে মূলধনের অতিরিক্ত কোন লাভ নেওয়াই হলো সুদ। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ১০০ টাকা এই শর্তে ঋণ দিল যে গ্রহীতা ১১০ টাকা পরিশোধ করবে। তাহলে এক্ষেত্রে বোঝা যায় যে ১০০ টাকার অতিরিক্ত যে ১০ টাকা আদায় হলো সেই ১০ টাকাকেই সুদ বলে গণ্য করা হবে কারণ এর কোন বিনিময় মূল্য নেই। যেমন- এক কেজি চালের বিনিময়ে দেড় কেজি চাল দেওয়া কিংবা এক কেজি চাল অতিরিক্ত অন্য কিছুর নেওয়া ও সুদ হবে। মহানবী (সাঃ) স্পষ্ট করে বলেছেন, সোনার বিনিময়ে সোনা, রোপার বিনিময়ে রূপা, জবের বিনিময়ে জব, আটার বিনিময়ে আটা, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, এমনিভাবে সমজাতীয় দ্রব্যের নগদ আদান-প্রদানে অতিরিক্ত কিছু নেওয়াকে সুদ বলে।
ইসলামে সুদের অবস্থান
ইসলামের সুদের চারটি অধ্যায় রয়েছে যথাঃ সুদ সম্পর্কে সতর্কীকরণ, রিবায়ে ফজল, রিবায়ে নাসিয়া, সর্বশেষ বাইয়ে ইনা। প্রিয় পাঠকগণ চলন জেনে নেওয়া যাক ইসলামে সুদের অবস্থান সমূহগুলো। সুদ সম্পর্কে সতর্কীকরণ
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন যে, যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় (কবর থেকে ) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এজন্য যে, তারা বলে বেচাকেনা সুদের মতোই। কিন্তু এক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা বেচা-কেনাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছে।
ফেরেশতা কর্তৃক গোসল করার সৌভাগ্য ধন্য হানজালা আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জেনে বুঝে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া ৩৬ বার জিনা করার চেয়েও বড় অপরাধ। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে ইসলামে সুদের অবস্থান কেমন।
আরো পড়ুনঃ আকিকা শব্দের অর্থ কি - আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন
আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন বেলাল রা. কিছু “বারনি” খেজুর নিয়ে এলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বললেন, কোথা হতে নিয়ে এলে এসব? বেলাল রা. উত্তরে বলেন আমার কাছে কিছু খারাপ খেজুর ছিল। সেগুলো ২ সা দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এর এক সা কিনেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন হায় হায় তুমি একি করেছো? এটা তো একেবারেই সুদ হয়েছে। তুমি আর কখনো এমন করবে না কারণ যখন কোন কিছু কিনতে চাইবে তখন আলাদাভাবে আগে সেটা বিক্রি করবে এরপর সেই মূল্য দিয়ে অন্যটি কিনবে।
এছাড়াও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে ছয়টি জিনিসের নির্দিষ্ট করেছেন সেগুলো হলোঃ সোনা, রুপা, গম, জব, খেজুর এবং লবণ। এ থেকে বোঝা যায় যে সুদ কি ইসলামের সুদের অবস্থান কোথায়। এবার আমরা সুদের কুফল সম্পর্কে জানব
সুদের কুফল
সুদ কি সে সম্পর্কে আগে আলোচনা করেছি এবার সুদের কুফল সম্পর্কে জানব, সুদ অত্যন্ত জঘন্ন অর্থনৈতিক অপরাধ। এর কুফল ও অপকারিতা অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ সুদ মানব সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্ম দেয়। সুদের মাধ্যমে ধনীরা বেশি ধনী এবং গরিবরা ক্রমান্বয়ে গরিব হতে থাকে। আর এর ফলে সমাজে উঁচু-নিচু শ্রেণীভেদ গড়ে ওঠে। সুদের কারণে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নত ব্যাহত হয়। কারণ সুদের প্রবঞ্চনার কারণে লোকেরা বিনিয়োগে উৎসাহী হয় না। এরফলে দেশের বিনিয়োগ কমে যায় জাতীয় উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।
সুদের কারণে মানুষের নৈতিক ও মানবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। বরং অসৎ চরিত্র ও মন্দ অভ্যাসের চর্চা শুরু করে। মানুষের মধ্যে লোভ-লালসা, অপচয় ও পাপাচারের প্রসার বৃদ্ধি ঘটে। অনেক সময় সুদের অতিরিক্ত অর্থের জন্য মানুষ নানা রূপ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাস, ছিনতায়, রাহাজানি, খুন ইত্যাদি সমাজে বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ ও ঘুষের লেনদেনকারীকে অভি শাপ করেন লানত দেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঘুষ প্রদানকারী ও ঘুষ গ্রহণকারী উভয়ের উপরে আল্লাহর অভিশাপস্বরূপ। সুদ লেনদেন করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ কারণ আল্লাহ তাআলা সুদকারীকে কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকবে। এমন কি অনেক সময় দুনিয়া তে আল্লাহ তা'আলা তাদের কঠিন আজাব দিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, কোন গ্রামে বা দেশে যখন জেনা ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপকতা লাভ করে তখন সেখানকার অধিবাসীদের উপর আল্লাহর আজাব আশা অনিবার্য হয়ে পড়ে। (মুসতাদরাকে)
সুদের পরিণতি
পরকালের সুদ ও ঘোষের লেনদেন কারীর স্থান হবে জাহান্নাম। কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি মহান শাস্তির সম্মুখীন হবে। সুদখোরদের অবস্থান বর্ণনা দিয়ে আল্লাহতালা বলেন যারা সুদ খায় তারা সে ব্যক্তির ন্যায় দন্ডায়মান হবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটার জন্য যে তারা বলে, বেচা-কেনা তোর সুদের মতই (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)
সুদ বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু সালাম আরো বলেন, সুদদাতা ও ঘুষখোর উভয়েই জাহান্নামী।(তাবারানী) সুদ কারবার বান্দাকে আল্লাহর ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ করে। আল্লাহতালা এরশাদ করেন হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ কর কেননা যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদেরও জুলুম করা হবে না।
আরো পড়ুনঃ হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩
সুদ খেলে মানুষ লালত অভিশাপের ভাগী হয়। এবং সে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায় আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হয় এবং তাকে অভিশাপ করে। সুদখোর ব্যক্তিকে মৃত্যুর পরে রক্তের নদীতে সাঁতরানোর শাস্তি দেওয়া হবে। সুদ মানুষকে ধ্বংস করে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সুদের ৭৩ টি স্তর রয়েছে তার মধ্যে সর্বনিম্ন টি হল নিজের মায়ের সঙ্গে জেনা করার মত। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা পূরণের জন্য সুদের অর্থ দিয়ে সদকা করলে সেটা গ্রহণ করেন না। কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, আল্লাহ তাআলা শুধু পবিত্র মালই গ্রহণ করেন। এছাড়াও সুদখোরদের দোয়া কবুল হয় না। বোঝা যায় যে সুদ কি সুদের ভয়াবহতা এবং সুদ কেন হারাম।
সুদ হারাম হওয়ার কারণ
শুধু মানুষের সৌহার্দ্য-সহানুভূতির চেতনাকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ ঋণী ব্যক্তির সকল সম্পদ হাতছাড়া হতে দেখেও সুদখোরের অন্তরে মায়া জাগে না। এজন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন দয়া মায়া ভালবাসা কেবল তার অন্তর থেকেই ছিনিয়ে নেয়া হয় যে আল্লাহর পথে চলে না এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ সমূহ করে থাকেন। তিনি আরো বলেন আল্লাহ তার ওপর দয়া দেখান না যে মানুষকে দয়া দেখান না। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, দয়া করেদের উপর দয়াবান-রহমান দয়া করেন। তোমরা জমিনবাসীদের উপর দয়া করো আসমান বাসি তোমাদের উপর দয়া করবেন।
সুদের আদান প্রদান হারাম এবং অবৈধ। সুদ ও ঘুষ সর্বস্থায় হারাম কারণ আমরা আগেই জেনেছি যে সুদ কিসুদের ভয়াবহতা কি এবং সুদকে কেন হারাম করা হয়েছে। আর সুদ গ্রহণ করা যেমন হারাম তেমনি সুদ দেওয়াটাকেও হারাম বলে ঘোষণা করেছে। তাই সুদ দেওয়া এবং সুদ নেওয়া উভয়টি সমান অপরাধ।
তাই আমরা সকলে এবং নেওয়া থেকে বিরত থাকবো কারণ সুদ কি সুদের ভয়াবহতা কেমন তার সকল কিছু জানতে পারলাম। সুদ মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ অবক্ষয় করে। একজন নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি কখনোই সুদের মতো জঘন্যতম হারাম কাজ করতে পারে না। তাই আমরাও জীবনে কখনো সুদ ও ঘুষের লেনদেন করবো না। এগুলো থেকে সবাই বিরত থাকবো তাহলে আল্লাহতালা খুশি হবেন।
সর্বশেষ কথা এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়াও আপনারা চাইলে আপনাদের মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদের চাহিদা মত সকল পোস্ট আপলোড করতে সক্ষম হব এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url