হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩
প্রিয় পাঠক আপনি কি হজ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আপনি তাহলে ঠিক জায়গায় এসেছেন কারণ আপনি এখানে হজের সকল বিস্তারিত বিষয় জানতে পারবেন। এছাড়াও হজের ফরজ কয়টি এবং কি কি তার সকল বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। প্রিয় পাঠকগণ হজ হলো মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত কারণ হজ হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি।
হজ হল বছরের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পোশাকে কয়েকটি স্থানে অবস্থান করা ও কাবা শরীফে তাওয়াফ করা। এছাড়াও পশু কোরবানি এবং নির্দিষ্ট স্থানে পরপর তিনদিন কঙ্কর নিক্ষেপ এবং সাফা ও মারওয়ার মধ্যে হাটা। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ।হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম ও ইসমাইল আলাই সালাম কাবাঘর নির্মাণ করেন। হজের নির্ধারিত সময় আরবি জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩
- হজ্জের বিবরণ
- হজের ঐতিহাসিক পটভূমি
- হজ্জের নিষিদ্ধ কাজ সমুহ
- হজ্জের ফরজ সমূহ
- হজ্জের ওয়াজিব সমূহ
- হজ্জের সুন্নত
- হজের ধর্মীয় গুরুত্ব
- হজের সামাজিক গুরুত্ব
হজ্জের বিবরণ
হজ ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি। হজের আভিধানিক অর্থ হলো সংকল্প বা ইচ্ছা করা। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশে জিলহজ মাসের নির্ধারিত দিন সমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ জিয়ারত করাকেই হজ বলে। হজের বিবরণ সমূহ গুলো হল
আরো পড়ুনঃ আকিকা শব্দের অর্থ কি - আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন
আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত হজ্জের নির্ধারিত সময়। হজ পালনের জন্য মূলত বর্তমান মক্কা নগরী থেকে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক কারণ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাৎসরিক মুসলিম উৎসব। যিনি হজ সম্পাদনের জন্য গমন করেন তাকে বলা হয় হাজী।
হজের ঐতিহাসিক পটভূমি
কাবা ঘরে সর্বপ্রথমহজ আদায় করেন নবী হযরত আদম (আঃ) তারপর নূহ সহ অন্যান্য নবী-রাসুল এ দায়িত্ব পালন করেন। ইব্রাহিম (আঃ) এর সময় থেকে হজ ফরজ বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। হিজরী সনের ১২ তম মাস হল জিলহজ মাস। ইসলামের বর্ণনা অনুসারে এই সময়েই স্রষ্টা ইব্রাহিম (আঃ) কে হজ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
হজের ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে আরো জানা যায় যে, আদেশের পর ইব্রাহিম (আঃ) আবু কোবাইস পাহাড়ে আরোহন করে দুই কানে আঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেনঃ লোক সব,, তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহনির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর এই গৃহের হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো। এই বর্ণনায় আরো উল্লেখ আছে যে ইব্রাহিম (আঃ) এর ঘোষনা স্রষ্টার পক্ষ থেকে বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেওয়া হয়।
হজের বিভিন্ন আচার-কায়দা ইব্রাহিম (আঃ) এর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে ইব্রাহিম (আঃ) স্রষ্টার নির্দেশে তার স্ত্রী বিবি হাজেরাকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন। এবং সেখানে কাবা শরীফের অদূরে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী ও পুত্রকে রেখে আসার ফলে বিবি হাজেরা নবজাতক শিশু ইসমাইলকে নিয়ে মহা বিপদে পড়েছিলেন। তখন বিবি হাজেরা সাহায্যের জন্য কাউকে না পেয়ে তিনি পানির খোঁজের সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। কিন্তু এই ঘটনাকে স্মরণ করে হজের সময় মুসলিমদের জন্য শাফা-মারওয়া পাহাড়ির মধ্যে হাঁটার নিয়ম রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলন - ভাষা শহীদদের নাম ও পরিচয় জেনে নিন
ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে স্রষ্টা বেহেস্ত বা স্বর্গ থেকে আদম ও হাওয়াকে যখন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন এতে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কারণ পরবর্তীতে উভয়ে তারা আরাফাত ময়দানে এসে মিলিত হন। এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ হজের একটি অংশ হিসেবে মুসলিমরা আরাফাতের ময়দানে এসে উপস্থিত হয়ে স্রষ্টার কাছে কান্নাকাটি করে ইবাদতে মগ্ন থাকেন।
হজ্জের নিষিদ্ধ কাজ সমুহ
ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজের নিষিদ্ধ কাজ সমূহ গুলো হল
১. সেলাই যুক্ত যেকোনো কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এছাড়া স্পঞ্জ স্যান্ডেল এর ব্যবহার করা।
২. পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা
৩. চুল কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা
৪. নখ কাটা
৫. ঘ্রাণযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
৬. স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করা
৭. যৌন উত্তেজক মূলক কোনো আচরণ বা কোন কথা বলা।
৮. ঝগড়া বা বিবাদ করা
৯. চুল দাড়িতে চিরুনি বা আঙ্গুলি চালনা করা যাতে ছিড়ার আশঙ্কা থাকে।
১০. শরীরে সাবান লাগানো
১১. কোন প্রকার গুনাহ করা ইত্যাদি
হজ্জের ফরজ সমূহ
ইসলামী হজের ফরজ সমূহ মোট তিনটি যথাঃ
১. ইহরাম বাঁধা (আনুষ্ঠানিকভাবে হজের নিয়ত করা )।
২. ৯ই জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে যিয়রত (১০ই জিলহজ ভোর থেকে ১২ যিলহজ পর্যন্ত যে কোন দিন কাবা শরীফের তাওয়াফ করা)
হজ্জের ওয়াজিব সমূহ
হজের ফরজের পাশাপাশি কিছু ওয়াজিব কাজ সমূহ রয়েছে রয়েছে যেগুলো আমরা আজকে বিস্তারিত জানব। তাহলে দেখে নেওয়া যাক হজের ওয়াজিবসমূহ গুলো কি কি?
হজের ওয়াজিব সমূহ হলো ৭ টি যথা ঃ
১. ৯ই জিলহজ্ব দিবাগত রাতে মুজদালিফা নামক স্থানে অবস্থান করা।
২. শাফা ও মারওয়া পাহাড় এর মাঝে দৌড়ানো।
৩. ১০-১১ ও ১২ ই জিলহজ পর্যায়ক্রমে মিনায় তিনটি নির্ধারিত স্থানে ৭ টি করে কংকর বা পাথর শয়তানের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা।
৪. এরপরে কুরবানী করা
৫. মাথার চুল কামানো বা কেটে ফেলা।
৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা (এটি মক্কার বাইরের লোকজনদের জন্য ওয়াজিব)
৭. দম দেওয়া।( ভুলে বা স্বেচ্ছায় হজের কোন ওয়াজিব বাদ পড়লে তার কাফফারা হিসেবে একটি অতিরিক্ত কোরবানি দেওয়া)।
প্রিয় পাঠকগণ আমরা জানতে পারলাম হজের ফরজ কয়টি এবং ওয়াজিব সমূহ, এবার জানব হজের সুন্নত কয়টি এবং কি কি? তাহলে আর দেরি না করে আসুন জেনে নেওয়া যাক হজের সুন্নত সমূহ।
হজ্জের সুন্নত
হজের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুন্নত সমূহ গুলো হল১. ইহরামের পূর্বে গোসল করে নেওয়া
২. পুরুষদের সাদা রংয়ের কাপড় পরিধান করা
৩. ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়া
৪. মক্কায় অবস্থানকালে পবিত্র কাবা শরীফ বারবার তাওয়াফ করা
৫. পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে রোমাল করা সুন্নত। রমল অর্থ বীরের মতো মুখ ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।
৬. কুরবানীর দিনে মিনায় রাত্রি যাপন করা
হজের ধর্মীয় গুরুত্ব
ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজের ধর্মীয় গুরুত্ব বলতে আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনের সূরা হাজ্জ নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। এছাড়াও পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর হজের ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও হজের গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজের ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন
আরো পড়ুনঃ রোজা অর্থ কি - রোজা কত প্রকার কি কি বিস্তারিত জানুন
মকবুল (আল্লাহর নিকট গ্রহণীয়) হজের বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নেই। (বুখারী-মুসলিম) । হজ্জের মাধ্যমে বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে সে যেন নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায় (ইবনে মাজাহ)। যাদের সামর্থ্য থাকা সত্বেও হজ অস্বীকার করে তারা কাফির হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হজ করার ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া যেন আমরা হজ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে পারি। এবার আমরা জানবো হজের সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে
হজের সামাজিক গুরুত্ব
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “এবং মানুষের নিকট হজেরঘোষণা করে দাও তারা তোমার নিকট (মক্কায়) আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষিনকায় উটের পিঠে আহরণ করে। তারা আসবে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।” (সূরা আল-হাজ্জ আয়াত ২৭)
সর্বশেষ কথা এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়াও আপনারা চাইলে আপনাদের মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদের চাহিদা মত সকল পোস্ট আপলোড করতে সক্ষম হব এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url