ছাগল পালন পদ্ধতি - দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা
আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে দেশে বিভিন্ন জেলায় পোল্ট্রি খামার এবং মৎস্য উৎপাদন দ্রুত গতিতে বাড়লেও প্রযুক্তিগত দিক ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে পানি সম্পদ তথা বিশেষ করে ছাগল পালন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে জানব। একই সাথে জানব দুগ্ধবর্তী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে।
বাংলাদেশে প্রায় ২০ মিলিয়নস ছাগলের প্রায় 93% পালন করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরনের খামারীরা। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ছাগল পালন করে যতটা লাভবান হওয়া যায় ততটা লাভবান অন্য কিছুতে সম্ভব না। তাই আসুন ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ছাগল পালন পদ্ধতি - দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা
- ঘর নির্মাণের স্থান
- ছাগল পালনের সুবিধা
- ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা
- ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
ঘর নির্মাণের স্থান
ছাগল পালন করতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন ঘরের। আর এই ঘরের এমন জায়গায় হতে হবে যেন জায়গাটা উঁচু হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস পেয়ে থাকে। তাই ছাগল পালন পদ্ধতি এর প্রধান শর্ত হলো ঘর নির্মাণ এবং ঘর নির্মাণের সঠিক স্থান নির্ধারণ করা। ঘর নির্মাণের সময় অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি এবং দক্ষিণ দিকে খোলা স্থানে নির্মাণ করা উচিত। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকেই বিভিন্ন রকম ভাবে নির্মাণ করে থাকে। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ৮-১০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
ছাগলের ঘর প্রধানত ছন, গোলপাতা, খড়, তিন বা ইটের তৈরি হয়ে থাকে। যার যেমন সামর্থ্য সে ততটুকু দিয়ে ছাউনি দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ঘরের ভেতরে বাস বা কাঠের মাথা তৈরি করে তার ওপর ছাগল রাখতে হবে। ছাগলের ঘরের দেওয়াল মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাথার উপরের অংশ এম. এম ফ্লেক্সিবল নেট হতে হবে। কারণ বৃষ্টির পানি যেন সরাসরি ঘরে প্রবেশ না করে সে যেন ছাগলের ঘরের চালা উঁচু করে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ উন্নত জাতের মরিচ চাষ পদ্ধতি - কাঁচা মরিচের উপকারিতা
শীতকালে রাতের বেলায় মাজার ওপর দেয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দেওয়া আবশ্যক এবং শীতের সময় মাচার ওপর 10 থেকে 12 সেন্টিমিটার পুরু ঘরের ব্লেডিং দিতে হবে। কেউ চাইলে একটি ঘরের ভিতরে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল পালন করতে পারবে। তবে পাঠা ছাগলকে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে যেন একটু দূরত্ব হয়।
ছাগল পালনের সুবিধা
ছাগল বাংলাদেশে অতি প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ। দরিদ্র পরিবারের জন্য ছাগল পালন প্রধান উৎস। আর এই জন্য ছাগল পালনের সুবিধা রয়েছে অনেক। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ছাগল পালন অতি জনপ্রিয় উপার্জন হয়ে পড়েছে। চলুন ছাগল পালনের সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. ছাগল মূলত ছোট প্রাণী, আর এই জন্য তুলনামূলকভাবে ছাগলের খাদ্য অনেক কম লাগে।
২. ছাগল পালন করতে অল্প জায়গার মধ্যে হয়ে যায়
৩. গবাদি পশুর চেয়ে ছাগলের রোগ বালাই কম হয়
৪. পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পায়
৫. কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে
৬. ছাগল পালনের ফলে পারিবারিক আমিষের ঘাটতি পূরণ হয়
৭. ছাগল পালনের ফলে ছাগলের চামড়া রপ্তানি করা হয়
৮. ছাগল পালনের ফলে বছরে অধিক বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম।
৯. ছাগলের দুধ মূলত যক্ষা ও হাঁপানির রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে
১০. ছাগলের মাংস সব ধর্মাবলম্বীদের প্রিয়
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগল পালনে ঘর নির্মাণের স্থান যেমন একটি ঠিক তেমনি ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছাগলের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে অবশ্যই শাল দুধ খাওয়ানো উচিত। কারণ সাল দুধ বাঁচার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল থানা সাধারণত দুই তিন মাসের মধ্যে দুধ ছেড়ে দেয়।
ছাগলের বাচ্চাকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছাগলের বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে যেমন ইপিল লিপিল পাতা, কাঁঠাল পাতা, নেপিয়ার ঘাস, ধোনচা পাতা ইত্যাদি খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া সকল ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার দিনে দুইবার ততদিক বার খাওয়াতে হবে। কেউ যদি ছাগল থেকে বেশি উৎপাদন এবং কাঙ্খিত লাভবান হতে চাই তাহলে অবশ্যই ছাগলকে সঠিক পরিমাণে খাদ্যের যোগান দিতে হবে এবং খাদ্যে যথাযথ পুষ্টিগুণ থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বেগুন চাষ পদ্ধতি - বেগুনের ঢলে পড়া রোগ সম্পর্কে জানুন
ছাগল কি অবশ্যই দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে যেমনঃ চাল, গমের ভুসি, চালের কুড়া, খেসারি ভাঙ্গা, তিল বা সরিষার খৈল, লবণ, এম বাভিট, গম ও ভুট্টা ভাঙ্গা, ছোলা, মসুরের ভুসি, শুটকির গুঁড়া, আয়োডিনযুক্ত লবণ এগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তাহলে ছাগল পালন পদ্ধতি ভালো হবে ও উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।
দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য তালিকা
দুগ্ধবর্তী ছাগল তার ওজনের সাধারণত ৫-৬ শতাংশ হারে শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে। একটি ৩-৪ বছর বয়স্ক দ্বিতীয়বার বাচ্চাদের দেওয়া ছাগীর গড় ওজন ৩০ কেজি হারে দৈনিক ১.৫-১.৮ শুষ্ক পদার্থ খায়। আর এই জন্য ১-১.৫ কেজি পরিমাণ শুষ্ক পদার্থ ঘাস থেকে বাকি শুষ্ক পদার্থ দানাদার খাদ্য থেকে দেওয়া উচিত। কারণ ছাগী বাচ্চা দেওয়ার ১.৫-২.০ মাসের মধ্যে গর্ভবতী হয় সেজন্য প্রায় একই পরিমানে খাবার গর্ভাবস্থায় ছাগলকে খেতে দেওয়া উচিত।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
ছাগল পালন পদ্ধতি এর আরেকটি পদ্ধতি হল সময় মত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ ছাগলের খামারে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে বিভিন্ন সময় ছাগলের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। আর এই জন্য প্রতিনিয়ত পিপিআর টিকা ইত্যাদি ব্যবহার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অনেকেই জানি যে ছাগলের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হল পিপিআর এবং গোটপক্সের ভ্যাকসিন জন্মের তিন মাস পরে দিতে হয়।
বছরে দুইবার কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। তাছাড়া যকৃত কৃমির জন্য ফ্যাসিনেক্স ডোভাইন ইত্যাদি ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়ে থাকে। কোন ছাগলের চর্ম রোগ দেখা দিলে তা ফার্ম থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিতে হবে। অন্যত্র যখন ছাগল নিয়ে এসে খামারে প্রবেশ করাবেন তার আগে আলাদা জায়গায় সেই ছাগলগুলো রেখে পর্যবেক্ষণ করে এরপরে খামারে প্রবেশ করাতে হবে। খামারের সকল ছাগলকে প্রতি ৩০ দিন পর পর ০.৫% মেলাথায়ন দ্রবণে ধোয়ানো উচিত। তাছাড়া ম্যাসটাইটিসসহ অন্যান্য সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url