হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত - হজের ফরজ কাজ সমূহ
আজকে আমরা হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে জানব। কারণ বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সেতু বন্ধনের প্রধান উপায় হল হজ পালন করা। আর এই জন্যই হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যাদের আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে কেবল তাদের জন্য হজ ফরজ ইবাদত। আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ইসলামে প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর পবিত্র হজ পালন করা ফরজ। আর এক্ষেত্রে যাদের হজ পালন করার সামর্থ্য থাকা শর্তেও হজ পালন করে না তারা বড় গুনাগার হবে। আর এই ফরজ এবাদত করার প্রধান কাজ হল হজের জন্য ইহরাম বাধা। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত এবং হজের ফরজ কাজ সমূহ গুলো কি?
পোস্ট সূচিপত্রঃ হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত - হজের ফরজ কাজ সমূহ
- হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত
- হজের ফরজ কাজ সমূহ
- হজের ওয়াজিব কাজ সমূহ
- হজের সুন্নত কাজ সমূহ
- হজের সময় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ
হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত
হজ্জ করবার পূর্বে হজ ফরজ হওয়ার শর্তগুলো নিম্নোক্ত দেখানো হলোঃ
১. প্রথমত অবশ্যই মুসলিম হতে হবে
২. জ্ঞানের দিক থেকে জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে
৩. আক্কেল, বালেগ, সুস্থ সবল মুসলিম হওয়া
৪. স্বাধীন হতে হবে
৫. হজের নির্ধারিত সময়ে হজ পালন করা
৬. সাধারণ ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরে ব্যয়বহনের সামর্থ থাকা, যদি হজ্ব পালনকারী মক্কা শরীফে অবস্থান করে তবুও।
৭. যারা মক্কা শরীফের বাইরে থাকেন তাদের জন্য হজ পালনের প্রধান শর্ত হল মালিকানা বা ভাড়া সুত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্য কিছু ব্যবহারের যথাযথ সামর্থ থাকা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আমাদের দেশের হাজিরা যেমন বিমান ব্যবহার করে থাকেন। কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সবারই ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তার সামর্থ্য হিসেবে গণ্য বলে বিবেচিত হবে
৮. অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির হজ ইসলামের একটি রুকন। তবে একথা জানা আবশ্যক যে সেই ব্যক্তি মুসলিম দেশের একজন অধিবাসী।
৯. নারীর ক্ষেত্রে হজের সফরের সময় স্বামী অথবা মাহরাম থাকা আবশ্যক। যদি কোন নারীর সাথে যাওয়ার মত স্বামী অথবা মাহরাম না থাকে তবে ওই নারীর ওপর হজ আদায় করা ফরজ হবে না।
হজের ফরজ কাজ সমূহ
হজ পালনের জন্য হজের ফরজ কাজ সমূহ রয়েছে তা হল হজ সম্পাদন করার জন্য তিনটি কাজ করা অবশ্যই ফরজ যথাঃ
১. হজ করার আগে ইরাম বাধা
২. জিলহজের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে যথাযথ সময়ে অবস্থান করা
৩. এবং ১০-১১ অথবা ১২ তারিখে পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফ করা এবং জিয়ারত করা।
তাহলে আমরা ইতিমধ্যেই হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও হজের ফরজ কাজ সমূহ সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আমরা হজের ওয়াজিব কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
হজের ওয়াজিব কাজ সমূহ
১. মিকাত থেকে ইহরাম বাধা
২. জিলহজের দশ তারিখে ফরজের সময় শুরু হওয়ার পর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে মুজদালিফায় অবস্থান করা।
৩. কোরবানির দিনগুলোতে তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা
৪. সাফা-ও মারওয়ার মধ্যখানে সাতবার দৌড়ানো। সাফা থেকে দৌড়ানো শুরু করা এবং মারওয়াতে গিয়ে শেষ করা।
৫. মক্কাবাসী ছাড়া অন্য হাজীদের বিদায়ী তাওয়াফ করা
৬. প্রত্যেক তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে
৭. কোরবানির দিন তৃতীয় জামরাই কঙ্কর নিক্ষেপ করা
৮. হেরেম শরীফের ভেতরে এবং কোরবানির দিনে মাথার চুল হালাক করা
৯. ছোট-বড় উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা
১০. সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা, যেমনঃ পুরুষদের কাপড় পরিধান করা এবং মাথা ও চেহারা ঢাকা, মহিলারা চেহারা ঢাকা, যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলা, গুনাহের মতো কাজ করা, ঝগড়া বিবাদ করা, স্বীকার করা বার শিকারের প্রতি ইশারা করা এমন ইত্যাদি।
হজের সুন্নত কাজ সমূহ
হজের সুন্নত অনেক রয়েছে। ঠিক তেমনি রয়েছে হজ ফরজ হওয়ার শর্ত এর মধ্যে। হজের সুন্নত কাজ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
১. ইহরামের পূর্বে অবশ্যই গোসল করা
২. পুরুষদের সাদা রংয়ের ইহরাম কাপড় ব্যবহার করা
৩. তালবিয়াহ পাঠ করা
৪. মক্কায় অবস্থানকালে পবিত্র কাবা শরীফ বারবার তাওয়াফ করা
৫. অজুর সঙ্গে ইস্তিবাসহ তাওয়াফ করা, তাওয়াফ শুরু করার আগে ইহরামের তাদেরকে ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেচিয়ে এনে অন্য মাথাকে বাম কাঁধের ওপর রাখাকে ইস্তিবা বলে।
৬. পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে রমল করা অবশ্যই সুন্নত। রমল অর্থ হল বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাধ দুলিয়ে ঘন ঘন পা ফেলিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা।
৭. প্রতি চক্করে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা। যদি ভিড়ের কারণে কারো সম্ভব না হয় তাহলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে চলতে তাওয়াফ সম্পূর্ণ করা
৮. কুরবানীর দিনে মিনায় রাত্রি যাপন করা
হজের সময় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ
হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত এর মধ্যে হল হজের সময় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ পরিত্যাগ করা যেমন,
১. সেলাই জুতো যেকোনো কাপড় বা জুতা ব্যবহার করা
২. মস্তক ও মুখমন্ডল ইহরামের কাপড় সহ যেকোনো কাপড় দ্বারা ঢাকায় এমনকি টুপি ও পরা যাবে না
৩. পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা
৪. চুল কাটা বা ইচ্ছাকৃতভাবে ছিঁড়ে ফেলা
৫. নখ কাটা
৬. ঘাম ঘ্রাণযুক্ত তেল বা পারফিউম ব্যবহার করা
৭. স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা
৮. যৌন উত্তেজক মূলক কোনো আচরণ বা কথাবার্তা বলা
৯. শিকার করা
১০. চুল দাড়িতে চিরুনি বা আঙ্গুলী চালনা করা যাতে ছিড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
১১. শরীরে সাবান ব্যবহার করা
১২. কোন গুনাহের কাজ করা ইত্যাদি
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url