সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারীর নাম ও পরিচয় সম্পর্কে জানুন ২০২৩
ইসলাম নারীকে দিয়েছে সঠিক পথ ও উত্তম জীবন ব্যবস্থা। আর তাই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারীর নাম ও পরিচয় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে জানব। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, দুনিয়ার সব নারীর মধ্যে চারজন নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি দিয়েছেন। আজকে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারীর নাম ও পরিচয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মহানবী সাঃ গুরুত্বপূর্ণ চারজন নারীর কথা বলেছেন তারা হলেন, হযরত মরিয়ম (আ.), হযরত আছিয়া (আ.), হযরত খাদিজা (রা), হযরত ফাতেমা (রা)। আজকে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি ও নারীর নাম পরিচয় তুলে ধরবো। চলুন দেরি না করে জেনে নেয়া যাক এই চার মহিষী নারীর জীবনী সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারীর নাম ও পরিচয় সম্পর্কে জানুন ২০২৩
খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ
মহান আল্লাহ তা'আলার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার চারটি দাগ কেটে সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি জানো এগুলো কি? সাহাবীগণ তখন উত্তর দিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন-আর তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এরা হলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারী। এখন আমরা খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ এর জীবন সম্পর্কে জানব।
আবরাহা কর্তৃক কাবা আক্রমণের 15 বছর আগে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের জন্মগ্রহণ করেছিলেন খাদিজা বিনতু খুয়াইলিদ। এবং তার পিতা ছিলেন ফিজার যুদ্ধের সেনাপতি খুয়াইলিদ ইবনু আসাদ। আর খাদিজা রা. ছিলেন আরব দেশের প্রতিষ্ঠিত সফল ব্যবসায়ী। আর এই জন্য ব্যবসার কাজে বিশ্বস্ত লোক তার প্রয়োজন ছিল। এদিকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। আর তাই খাদিজা রা. তাকে তার ব্যবসার পুনর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। নবীজির চারিত্রিক মাধুর্যতায়ে তিনি মুগ্ধ হয়ে একপর্যায়ে খাদিজা নিজেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। খাদিজা রা. বিয়েতে ৫০০ স্বর্ণ মুদ্রা মোহরানার বিনিময়ে বিয়ের সংঘটিত হয়েছিল। তখন নবীজির বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর এবং খাদিজার বয়স ছিল 40 বছর।
আরো পড়ুনঃ গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় - গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়
40 বছর বয়সে নবী করিম সাঃ নবুওয়াত লাভ করেছিলেন। প্রথম ওহি লাভের পর তিনি এতটাই ভীত হয়ে পড়েন যে ঘরে প্রবেশ করে খাদিজাকে বলেন কম্বল দিয়ে যেন তার গা ঢেকে দেয়। বারবার বলতে থাকেন আমাকে আবৃত কর, আমাকে আবৃত কর। এদিকে পুরো ঘটনা শুনে খাদিজাররা নবীজির সকল কথা বিশ্বাস করে এবং তাকে নবী হিসেবে মেনে নেয়। সকল ভয়-ভীতি দূর করার জন্য মোহাম্মদকে নিয়ে খাজরা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নওফেল এর কাছে যায়। নওফেল তাকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। খাদিজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী।
নবীজির দাওয়াতী কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছিলেন খাদিজা রা. এছাড়াও খাদিজা রা. এর যত সম্পদ ছিল তার সমস্ত সম্পদ ধীরে ধীরে নবীজির দাওয়াতি কাজে ব্যয় করেছিলেন। এমনকি একসময় প্রচন্ড অর্থকষ্ট শুরু হতে থাকে। নবুওয়াতের সপ্তম বছর মক্কার কুরাইশরা মুসলিমদের বয়কট করে রাখে। এ সময় তারা সবাই মিলে শিয়াবে আবু তালিব নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। অন্যান্য মুসলমানদের সঙ্গে খাদিজা ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বসবাস করতে হয়েছিল।
আর সেই সময় তারা প্রথম বছরে তারা ছাগলের মাংস খেয়ে দিন পার করেছিলেন। এরপর গাছের পাতা খেয়েও তাদের দিন কাটাতে হয়েছে। খাদিজা তখন কুরাইশদের ওপর নিজের প্রভাব খাটিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিতেন মুসলিমদের। আর এভাবেই তার সমস্ত সম্পদ দিয়ে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবেও প্রচন্ড কষ্ট সহ্য করে দিনের জন্য সারা জীবন নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন।
আরো পড়ুনঃ ফিতরা কি - সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব ২০২৩
৬১৭ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক রমজান মাসের ১০ তারিখে ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন ইসলামের মুমিন জননী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তাহলে আমরা সর্বোচ্চ চার জন জান্নাতী নারীর নাম অপরিচয়ের মধ্যে একজনের সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আমরা ফাতেমা বিনতু মোহাম্মদ এর সম্পর্কে জানব।
ফাতিমা বিনতু মোহাম্মদ
আমরা সকলেই অবগত যে ফাতিমা রা. ছিলেন নবীজির সবচেয়ে প্রিয়তম কন্যা। আর তার মা হলেন খাদিজা রা. ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন ফাতেমা। হিজরতের সময় ফাতিমা ও নবী পরিবারের অন্যদের সঙ্গে হিজরত করেছিলেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ খলিফা মহান বীর আলী ইবনু আবু তালিবের স্ত্রী এবং সাইয়িদুনা হাসান ও হোসাইন এর জননী।
তার বদান্যতা, মহানুভবতা, এবং মমতা ছিল প্রবাদ তুল্য। হযরত ফাতিমা রা. ছিলেন অধিক পর্দশীল নারী। প্রিয় বাবা দয়ার নবীর চরিত্রের প্রতিটি গুন ছিল তার জীবনে প্রতিফলিত। তিনি ছিলেন আমানতদারি, লাজুক, নম্র, সভ্য, সত্যবাদী, সরলমনা, নির্ভীক। নবীজির মৃত্যুর কয়েক মাস পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং মদিনার বাকিতে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
আছিয়া বিনতু মুযাহিম
আছিয়া বিনতু মুযাহিম ছিলেন পৃথিবীর জঘন্য আল্লাহদ্রোহী শাসক ফেরাউনের স্ত্রী। আছিয়ার কোলেই লালিত পালিত হয়েছিলেন নবী মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এছাড়াও ফেরাউনের রাজপ্রসাদের যাবতীয় আরাম আইস কে বিসর্জন দিয়ে আসিয়া গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তাওহীদকে। তিনি একমাত্র আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতো এবং একমাত্র একত্ববাদী খোদাকে বিশ্বাস করত। ঈমান একমাত্র আল্লাহর উপর এনেছিলেন যার কারণে ফেরাউন তার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় এবং নির্মম অত্যাচার করেছিল।
আসিয়ার ওপর ফেরাউন অসহনীয় জুলুম নির্যাতন করতে থাকে। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে, বড় বড় পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল, কে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতসব অত্যাচার অমানবিক নির্যাতনের পরেও আছিয়া আল্লাহর একত্ববাদী খোদার ইবাদত থেকে একটুও পিছপা হননি। তিনি তার ঈমানের প্রতি অবিচল থেকে গেছেন। এতক্ষণ আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ চারজন জান্নাতি নারীর নাম ও পরিচয় এর তিনজন জান্নাতি নারীর নাম জেনেছি এবার আমরা সর্বশেষ জান্নাতি নারীর নাম এবং জীবনী জানবো।
মরিয়ম ইবনাতু ইমরান
মরিয়ম ইবনাতু ইমরান তিনি ছিলেন বাইতুল মুকাদ্দাসের নাশিরা শহরের একজন বাসিন্দা। পিতা মাতার ইচ্ছা অনুযায়ী বাইতুল মুকাদ্দাস এর খেদমতে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল ইমরান এবং নবী করীম জাকারিয়ার শালিকা বিবি হান্না ছিলেন তার মা।
মরিয়ম ছিলেন চিরকুমারী নারী। কিন্তু আল্লাহর আদেশে তার গর্ভে ধারণ করেছিলেন নবী ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। এছাড়াও মরিয়মকে স্বগ্রাম ও ছেড়ে যেতে হয়েছিল। আর এমন সময় বিপদাপন্ন মরিয়ম কোন আশ্রয় না পেয়ে একটি পতিত জমিতে একটি খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেই জায়গাতে নবী ইসাকে প্রসব করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে নারীর মর্যাদা - ইসলামে নারীর পর্দা ও বিধানসমূহ
পাক পবিত্র হয়ে সন্তান নিয়ে আবারও বায়তুল মুকাদ্দসে মরিয়ম ফিরে যায়। কিন্তু কোলের এই শিশু তার মায়ের নিষ্কলসতার ঘোষণা দিল। আর ভবিষ্যতে তার নবী হওয়ার ব্যাপারেও জানিয়ে দিল। মরিয়ম আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গড়ে তোলেন জ্ঞান প্রজ্ঞা ও দক্ষতা শিক্ষা দিয়ে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে ঈসা আলাইহি সালাম আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন এবং ও ইসলামের কাজের প্রচার শুরু করে। একাদা এক সময় ঈদুল ফিতরের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গিয়ে উপস্থিত নারীদের কে লক্ষ্য করে বলেন হে নারী সম্প্রদায় তোমরা দান-খয়রাত কর কেননা আমাকে জানানো হয়েছে যে দোযখের অধিকাংশ অধিবাসী তোমাদের নারী সম্প্রদায় থেকেই হবে।
অন্য এক হাদিস থেকে পাওয়া যায় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন, সব নারীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজানে রোজা রাখবে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করবে, ইসলাম শরিয়া মোতাবেক পর্দা রক্ষা ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবে, স্বামীর আনুগত করবে। এমন নারীদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজায় খুলে দেওয়া হবে। যার যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে তার ওই দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
উপসংহার
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহ সব নারীদেরকে উল্লেখিত হাদিসের আলোকে নামাজ, রোজা, সঠিক পর্দা, চরিত্র ও স্বামীর অনুগত করার তৌফিক দান করুন। জান্নাতের সবকটি দরজায় যেন তাদের ঢোকার জন্য সুনিশ্চিত থাকে সেই তৌফিক এনায়েত কর। আজকের এই পোস্টটি যদি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অন্যদের মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং নিয়মিত নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট করুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url