ইসলামে নারীর পর্দা - ইসলামে নারীর শিক্ষা
নারী হল মহান আল্লাহ তাআলার একটি প্রধান নিয়ামত। ইসলাম নারীকে দিয়েছি পর্দার বিধান, আর এই জন্য ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান ব্যাপক। মহান আল্লাহতালা নারীকে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পরিচালনা করার জন্য পারস্পারিক সহযোগী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আর তাই আজকে আমরা ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান নিয়ে আলোচনা করব। এবং ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান কিভাবে প্রতিফলিত হয় তা জানবো।
ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি বরং একে অপরের পারস্পরিক করে গড়ে তুলেছে। ইসলাম ধর্ম আগমনের পর নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারী সমাজ পেয়েছে একটি সত্যের সন্ধান। তাই আজকে আপনাদেরকে ইসলামী নারীর অধিকার ও সম্মানের পরিপূর্ণ বিষয় বস্তু তুলে ধরব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান - ইসলামে নারীর শিক্ষা
- ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান
- ইসলামে নারীর শিক্ষা
- ইসলামে নারীর পর্দা
- কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর সম্মান
- সর্বশেষ কথা
ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান
আমরা জানি যে মানুষ সামাজিক জীব, এবং সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে পছন্দ করত। আর এজন্য প্রাচীনকাল থেকে এই সমাজের সৃষ্টি। আর এই জন্য প্রত্যেকটা মানুষের জীবনধারণ করে বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক এবং সামাজিক উভয়-বিধান মেনে চলতে হয়। আর এই জন্য ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান বেশি দিয়েছে।
মানুষ যখন সমাজে বসবাস করে তখন তারা প্রাকৃতিক বিধান লংঘন করলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়। কিন্তু সামাজিক বিধান লংঘন করলে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ইসলামের মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এ নারী নামে একটি সূরা রয়েছে আর সেটি হল সূরা নিসা এর অর্থ মহিলা এবং এই শব্দটি পবিত্র কুরআনের 57 বার উল্লেখ করা হয়েছে, এবং ইমরাআহ অর্থ নারী এবং এই শব্দটি পবিত্র কুরআনে 26 বার উল্লেখিত রয়েছে। ইসলামের নারীর অধিকার ও সম্মান কতটা। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি ব্যক্তিকে সৃষ্টি করেছে তার ইবাদতের জন্য। আর তাই পুরুষের একাকীত্ব দূর করার জন্য সৃষ্টি করেছেন নারীকে। এজন্য আমাদের উচিত নারীদের কে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।
ইসলামে নারীর শিক্ষা
ইসলাম ধর্ম হল একজন ব্যক্তির প্রকৃত জীবন ব্যবস্থা। একজন প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যই উচিত পবিত্র কোরআনের ওপর জ্ঞান থাকা এর কারণ হলো কেবল কোরআন পারে একজন ব্যক্তিকে দিনদার এবং সত্যের পথ দেখাতে। এই জন্য ইসলামে নারীর শিক্ষা প্রয়োজন। কারণ পরকালে সবচাইতে বেশি জাহান্নামী হবে নারীরা। ইসলামে নারীর শিক্ষা প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে কেননা, নারীকে শিক্ষা বঞ্চিত রেখে যেমন আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনিভাবে শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য এবং পারিবারিক শিক্ষার ভিত্তি শক্ত করার জন্য মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করা আবশ্যক।
আর এইজন্য পবিত্র কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে যে, বল যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নারীদের বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক ও দৃষ্টি রাখতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নারীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামূলক ভাষণ প্রদান করতেন এবং উদার আহ্বান জানাতেন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।
ইসলাম নারীকে দিয়েছে শত সত্যের সন্ধান এবং দিয়েছে মুক্তি। ইসলামের শুরুর সময়ে আরবে মাত্র ১৭ জন লোক পড়ালেখা জানতেন আর এর মধ্যে পাঁচজন ছিল নারী। আর তাই নারীর ব্যক্তি সত্তার পরিচর্যা, আত্মিক উন্নয়ন ও নৈতিক গুণাবলী সাধনের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ্যার বাইরে ও জ্ঞান অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। আর মুসলিম পরিবারে কন্যা শিশুর শিক্ষা দীক্ষা পোশাক পরিচ্ছেদ ভরণপোষণ যাবতীয় দায়ভার পিতাকে গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে নারীর উচিত নারী যদি সম্পদশালী হয় সেক্ষেত্রে স্বামীকে সাহায্য করা। এজন্য কন্যা শিশু প্রতিপালন ও মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ফরমান করেন যে যার দুটি বা তিনটি কন্যা সন্তান আছে এবং তাদের উত্তম শিক্ষায় সুশিক্ষিত ও প্রতিপালন করে সৎপাত্রস্থ করতে পারবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে সহ অবস্থান করবে। এক্ষেত্রে বোঝা যায় যে ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান এবং ইসলামে নারীর শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী হযরত আয়েশা রা. ছাড়াও অনেকেই নারী শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর এইজন্য হযরত আয়েশা রা. কে হাদীস বর্ণনাকারী ইমাম ও অধিক জ্ঞান সম্পন্ন সাহাবীদের মধ্যে একজন ধরা হতো। বহু সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ী তার কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষা লাভ করতেন। হযরত আয়েশা রা. তার বর্ণিত ২২১০ টি হাদিসের মধ্যে ১৭৪ টি বুখারি ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে স্থান লাভ করেছে। এজন্য তিনি মুসলিম রমণীদের মধ্যে ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা সর্বোচ্চ মুফতি, সবচেয়ে জ্ঞানবতী ও বিচক্ষণা। এছাড়া তিনি ধর্ম, দর্শন বিষয়ক বিভিন্ন মাসয়ালার উদ্ভাবক ছিলেন। আর এই জন্য ইসলামের নারীর শিক্ষা প্রয়োজন।
ইসলামে নারীর পর্দা
নারীকে হাদীস শরীফে আওরত বলা হয়ে থাকে। আর আওরত শব্দের অর্থ হলো গুপ্ত বা আবৃত রাখা। এজন্য এটি নারীর নামেই বোঝা যায় আর তাই নারীর জন্য পর্দা আবশ্যকীয়। ইসলামে নারীর পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন যে তোমরা তোমাদের ঘরের ভেতরে অবস্থান করো এবং বাইরে বের হয়ো না। যেমনটা ইসলামের পূর্ব জাহিলি যুগের মেয়েরা বের হতো।
এছাড়া আল্লাহতালা আরও বলেন-হে নবী আপনি আপনার পত্নীগণকে এবং কন্যাগণকে ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন যখন কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হবে তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। যেন এটি পর্দার ফরজ লঙ্ঘন না হয়। এমনকি চেহারা ও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন তাদের বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারা কে ঢেকে অথবা আবৃত করে রাখে। এর ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
আল্লাহ তায়ালা বলেন মুমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নিচু রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের খুব পবিত্রতা রক্ষা পাবে নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত রয়েছে। আর ঈমানদার নারীদের কে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশকাম তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য কোন ভাবে প্রদর্শন করা যাবে না। এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে ঠিক তেমনি তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকার ভুক্তবাদী, যৌন কামনা মুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না। তারা যেন তাদের গোপন সাজোজা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।
আরো পড়ুনঃ ফিতরা কি - সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা কি ওয়াজিব ২০২৩
এক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারলাম ইসলামে নারীর পর্দা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এই জন ও ইসলামী নারীর অধিকার ও সম্মান ব্যাপক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে খবরদার কোন পুরুষ যেন কোন মেয়ে লোকের সাথে একাকী না থাকে। কেননা যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে একাকী হয়। আর তখনই শয়তান তাদের মাঝে তৃতীয় জন হয়ে তাদের পিছে লেগে থাকে এবং নানা ধরনের কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর সম্মান
ইসলামের পূর্ব যুগে কন্যা সন্তানের কোন মর্যাদা ছিল না। কিন্তু ইসলাম এই সমস্ত জীবন ব্যবস্থা হটিয়ে নারীদের উত্তম জীবন দান করেছেন। এবং কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর সম্মান দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে জেনেছি। পবিত্র কোরানুল কারীমে উল্লেখ আছে যে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তোমাদের খুশি হওয়া উচিত।
কন্যা সন্তানের মাধ্যমে মহান আল্লাহতালা পরিবারের সুখ শান্তি ও বরকত দান করেন। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো লক্ষ্য করা যায় যে কন্যা সন্তান হলে মন খারাপ করে বিভিন্ন কায়দার মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েদেরকে অনেক বেশি ভালবাসতেন। আর মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালী। তিনি আজীবন কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
আনাস রা. হতে বর্ণিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির দুটি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করবে, কাল কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এই দুটি আঙ্গুলের মত পাশাপাশি থাকবো। তাহলে এক্ষেত্রে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারলাম কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর সম্মান কেমন। নারীর অধিকার ও সম্মান অধিক দিয়েছেন
সর্বশেষ কথা
ইসলাম নারী ও পুরুষ কে দিয়েছে সুন্দর ও সত্যের পথ। আর এই পথে জীবন পরিচালনা করলে পরকালে পাওয়া যাবে শান্তির স্থান জান্নাত। আর তাই আমাদের সকলের উচিত নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এবং পারিবারিকভাবে নারীদের ইসলামের শরিয়া মোতাবেক পর্দা মেনে চলা। আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং নতুন নতুন পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। এতক্ষণ পাশে থাকার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url