কমলা চাষ পদ্ধতি - টবে কমলা চাষ সম্পর্কে জেনে নিন
ফল খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তাই আপনাদের কথা ভেবে আজকে আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব কমলা চাষ পদ্ধতি এর সকল দিক নিয়ে। কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানিনা। আর তাই আপনি কি কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন আজকে এই সমস্ত পোস্ট জুড়ে কমলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কমলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে বাংলাদেশও এখন কিছু কিছু অঞ্চলে কমলার চাষ হয়ে থাকে। আর তাই আজকে কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব এতে করে একজন উদ্যোক্তার কমলা চাষে পরিপূর্ণ শিক্ষা পেয়ে যাবে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
কমলা চাষ পদ্ধতি
কমলালেবু অতীত সুস্বাদু একটি ফল। কমলালেবু জাতীয় ফলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। কমলালেবু অতি সুস্বাদু, সুগন্ধি, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। বর্তমানে ভুটান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এবং ব্রাজিলে অধিক পরিমাণে কমলালেবু উৎপাদিত হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে বাংলাদেশেও কিছু কিছু অঞ্চলে স্বল্প পরিশেষে কমলা চাষ পদ্ধতি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়া ও বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গাতে কমলা চাষ শুরু করেছে। আর তাই আধুনিক পদ্ধতিতে যদি কমলা চাষ করা যায় তাহলে আমাদের দেশেও উৎপাদন অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাবে। আর তার জন্য আমাদের কমলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
ভেষজ গুন
কমলা অতি সুমিষ্টি এবং ভিটামিন সি দ্বারা পরিপূর্ণ আর এই জন্য কমলালেবু বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কমলালেবু শুধু মুখরোচক হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে না। এই কমলা লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ গুণ। কমলালেবু জ্বর সর্দি ও বমি থেকে বাঁচিয়ে রাখে। এছাড়াও কমলালেবুর শুকনোসাল অম্ল রোগ ও শারীরিক দুর্বলতার নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
কমলা লেবুর জাত পরিচিতি
পৃথিবীতে এখন অনেক ধরনের কমলা লেবুর জাত দেখা যায়। কোন কোন কমলালেবু দেখতে সবুজ আবার কোন কোন টা কমলা কালার দেখা যায়। আর তাই আমরা এখন কমলা লেবুর জাত পরিচিতি জানব। কমলালেবু চাষের জন্য সবচেয়ে উন্নত জাত হলো বারি কমলা ১ঃ বারি কমলা ১ এটি একটি নিয়মিত আগাম ফল প্রদানকারী উৎসব ফলনশীল একটি জাত। আর এই কমলা লেবুর প্রতিটি গাছে ৩০০ থেকে ৪০০ টি ফল ধরতে সক্ষম। এবং এই কমলা লেবুর ফল 180 থেকে 200 গ্রাম ও অনেকটা গোলাকার হয়। হলুদ রং ধারণ করে এই কমলা লেবুতে। ফলের খোসা ঢিলা, ফল রসালো মিষ্টি হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পঞ্চগড় জেলায় চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এখন কমলা চাষ পদ্ধতি এর সঠিক জ্ঞান নিয়ে কমলা চাষ করে আসছে। এখন আমরা কমলালেবুর চারা উৎপাদন সম্পর্কে জানব।
চারা উৎপাদন
কমলালেবুর বীজ থেকে সরাসরি চারা তৈরি করা হয়। চোখ কলম ও পার্শ্ব-কলমের মাধ্যমে কলম তৈরি করে যারা উৎপাদন করা হয়। 10 থেকে 12 মাস বয়সের কমলার চারা বাডিং ওগাফটিংয়ের জন্য আদি জোড় হিসেবে ব্যবহার করার সবচেয়ে ভালো কাজ। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে চারা রোপনের জন্য সোজা ও ভালো বৃদ্ধি সম্পূর্ণ তরতাজা ছাড়া অথবা কলম বেছে নিতে হবে। এ থেকে রোপন করা ছাড়া খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাবে।
জমি তৈরি
কমলা চাষ পদ্ধতি এর প্রধান এবং অন্যতম উপাদান হলো জমি তৈরি করা। আর তাই অবশ্যই যমের আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। সমতল ভূমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে কোদালের সাহায্যে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর উভয় দিকে চার থেকে পাঁচ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার (দুই ফুট) আকারে গর্ত তৈরি করা উচিত। এরপর গড়তের মাটি তুলে পাশে রেখে দিতে হবে। কমলা চাষের জমি পাহাড়ি হলে সেখানে 35 থেকে 50 মিটার দূরতে দুই চারটি বড় গাছ অবশ্যই রাখতে হবে যেন ভূমির ধস না দেখা দেয়।
চারা রোপন
জমির প্রকার ভেদে সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তাকার এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে কমলার চারা রোপন করতে হয়। তাহলে কমলা চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে কমলা চাষ করা হয়।
রোপনের সময়
বাংলাদেশে বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ মাস কমলার চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। বর্ষার সময় লাগানো উপযুক্ত কারণ এই সময়টাই মাটি কাদাময় থাকে এবং কমলার চারা লাগালে খুব দ্রুত শিকড় গজায় এবং মাটির সাথে লেগে আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যে যেই জমিতে কমলার যারা রোপন করবেন সেই জায়গাটা যদি সেচ ব্যবস্থা থাকে তাহলে যেকোনো সময় কমলার চারা রোপন করা যায়। এছাড়া কমলার চারা রোপনের সময় পানি দিয়ে রোপন করা উচিত।
মাদা তৈরি
চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে উভয় দিকের চার থেকে পাঁচ মিটার দূরত্বে ৭৫ সেন্টিমিটার আকারে গর্ত তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি গর্তে 15 কেজি পচা গোবর,৪ থেকে ৫ কেজি ছাই, 250 গ্রাম টিএসপি সার, 250 গ্রাম এমওপি সার ও ২৫০-৩০০ গ্রাম চুন গর্তের ওপরের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করে দিতে হবে। গর্ত ভরাট করার সময় অবশ্যই ১০ থেকে ১৫ দিন পর চারা রোপন করা উত্তম।
সার ব্যবস্থাপনা
গাছের বয়স অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। কমলা চাষ পদ্ধতি হিসেবে সার ব্যবস্থাপনা অন্যতম। এছাড়া গাছের বাড়ন্ত অনুযায়ী সারের অর্ধেক ফল সংগ্রহের পর অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বাকি অর্ধেক সার ফল মার্বেল আকার ধারণ করার পর অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি শেষ দেওয়া প্রধান কাজ। কারণ সেচ প্রয়োগ করার মাধ্যমে গাছ সুন্দর ও সতেজ থাকে এবং গাছের সুস্থ সবল ফল উৎপাদন করা সম্ভব। আর এই জন্য সেচ ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করা অবশ্যই জরুরী।
অন্যান্য পরিচর্যা
কমলা গাছের চারার অবস্থান অনুযায়ী অন্যান্য পরিচর্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। গোড়া থেকে জন্মানো অতিরিক্ত মাথা গজানো কুশি পাতা সাথে সাথে কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া নিচের দিকে ছোট ছোট শাখা থেকে ছেটে ভূমি থেকে অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপর হতে কান্ডের উৎপাদনশীল শাখা বাড়তে দিতে হবে। এবং অবশ্যই মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল মাঝে মাঝে সেটে দিতে হবে ও কাটা অংশে কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি পেস্ট আকারে লাগিয়ে দিতে হবে। গাছের গঠন ছোট থেকে সুন্দর ও শক্ত করে সার প্রয়োগের মাধ্যমে বড় করতে হবে।
সাথী ফসল
কমলা চাষ পদ্ধতি জানা থাকলে কমলা চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসল করা সম্ভব। কমলার বাগানে ৫-৭ বছর সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের চাষ করা যায়। যেমনঃ শাকসবজি, ডাল, এছাড়া তেল জাতীয় ফসলের আবাদ করে বাগান থেকে অতিরিক্ত লাভ ঘরে তোলা সম্ভব। এতে কমলার ফলনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ক্ষতি দেখা দেয় না। গাছের বালাইনাশকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফসল উত্তোলন
কমলা একটি জনপ্রিয় রসালো ফল। এটি বছরের সব সময় বাজারে পাওয়া যায়। এ ফল পরিপক্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রং বদলাতে শুরু করে। গাছে কমলা ভালোভাবে পাকার পর উত্তোলন করলে অনেক মিষ্টি হয়। মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে কমলালেবু সংগ্রহ করতে হয়।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url