মুলা চাষ পদ্ধতি - আধুনিক পদ্ধতিতে মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মুলা চাষ হয়ে থাকে। অনেকেই আছেন মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়। অনেক সময় দেখা যায় এক ফসল করতে করতে অন্য ফসল করার আগ্রহ বেড়ে যায় আর তাই আজকে মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। অনেকেই মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সেই জন্য কোন কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেইদিক বিবেচনা করে মুলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে সমস্ত ওয়েবসাইট জুড়ে আলোচনা করা হবে।
মুলা বাংলাদেশের একটি সবজি জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে শীতকালে মুলার চাষ হয়ে থাকে। আর তাই আজকে মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। একই সাথে আমরা জানব কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে মুলা চাষ করা হয়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন মুলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
মুলা চাষ পদ্ধতি
মুলা বাংলাদেশের সবজি জাতীয় একটি ফসল। এছাড়াও মুলা কাঁচা সালাত হিসাবেও খাওয়া হয়ে থাকে। মুলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহজাতীয় পদার্থ। আর তাই বাংলাদেশে দিন দিন মুলার আবাদ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে আগে দেখা যেত শীতকালীন সবজি হল মুলা। কিন্তু এখনকার সময়ে বারোমাসি বা অসময়ে মুলা চাষের দিকে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছে। আর তাই এখন আমরা জানব মূলা চাষ পদ্ধতি এর প্রধান কাজ হলো জমি ও মাটি নির্বাচন করা।
জমি ও মাটি
বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানে মুলা চাষ করা হয়ে থাকে। তবে উঁচু ও মাঝারি উচু এবং মাঝারি নিচু জমিতে বেশি মুলার চাষ হয়ে থাকে। সু নিষ্কাশিত মাটিতে মুলা চাষের জন্য উত্তম স্থান। এটেল মাটিতে মুলার চাষ তেমন ভালো ফলন হয় না। আর এই কারণে মুলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো ভাবে চাষ করা উচিত। মোলাস চাষে অধিক ফলন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ছাই ও জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে মুলার ফলন বেশি পাওয়া সম্ভব।
মুলার জাত
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন রকমের মুলার জাত পাওয়া যায়। একসময় জাপানের বিখ্যাত তাশাকি সান জাতের মুলার মাধ্যমে এদেশে উচ্চ ফলনশীল মুলার আবাদ শুরু হলেও বাংলাদেশ এখন মুলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ করা হচ্ছে। মুলা চাষের উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ গুলো হলঃ
১. বারিমুলা ১
২. বারিমুলা ২
৩. বারিমুলা ৩
৪. অ্যাভারেস্ট
৫. হোয়াইট প্রিন্স
৬. বিপ্লব ৯৪
৭. সুপার ৪০
৮. মুক্তি এফ১
৯. রকি ৪৫
১০. আনারকলি
১১. হ্যাভেন এফ১
১২. সিগমা ৪০
১৩. দুর্বার
এছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক জাতের মূলার বীজ বাজারে পাওয়া যায়। মুলা চাষ পদ্ধতি হিসেবে নিচে বিভিন্ন জাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ
বারিমুলা ১ঃ ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে এই মুলার বীজ বুনতে হয়। এবং বীজ বোনার ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর থেকেই মুলা তোলা সম্ভব। এই মুলা ধবধবে সাদা, বেলুনাকৃতি, লম্বা ও বড় হয়। এছাড়াও দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এই মোলার গড় ওজন এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশি মুলার মতো এই মুলাতে এত আঁশ নেই। এইমুলা প্রতি হেক্টরে ৬৫ থেকে ৭০ টন উৎপাদন করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ উন্নত জাতের মরিচ চাষ পদ্ধতি - কাঁচা মরিচের উপকারিতা
বারিমুলা ২ঃ এই মুলাও ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে এই মুলার বীজ বুনতে হয়। এবং বীজ বোনার ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর থেকেই মুলা তোলা সম্ভব। তবে এই মুলার রং লালচে, নলাকৃতি, এবং দৈর্ঘ্যের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার ও মধ্যাকর হয়ে থাকে। আর এই মুলার প্রতিটি ওজন ৯০০ গ্রাম। এছাড়া এই মুলাও প্রতি হেক্টরে 65 থেকে 70 টন উৎপাদন করা হয়।
বারিমুলা ৩ঃ ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে এই মুলার বীজ বুনতে হয়। এবং বীজ বোনার ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর থেকেই মুলা তোলা সম্ভব। মুলার রং সাদা, নলাকৃতির হয়। পাতার কিনারা ঢেউ খেলানোর মত হয়ে থাকে। আর এই মুলার অর্ধেক অংশ মাটির উপরেই থেকে যায়। প্রতিটি মুলার গড় ওজন ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এই মূলা প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ টন। এই মুলার জীবনকাল 40 থেকে 45 দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। রোগ পোকার আক্রমণ অত্যন্ত প্রতিরোধী। এদেশের আবহাওয়া ভালো বীজ উৎপাদন করা যায়। ১.২-১.৩ টন ব্রিজ পাওয়া সম্ভব। এবার আমরা মুলা চাষ পদ্ধতি এর বীজ বপন সম্পর্কে জানব।
বীজ বপন
মুলা চাষের জন্য আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মুলার বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বোপড়ের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সাধারণত মুলার বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়ে থাকে। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার জন্য সুবিধা হয়। কেউ যদি শাড়িতে বপন করার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে তাকে অবশ্যই সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দিতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরীর সময় সবটুকু জৈব সার যেমন টিএসপি ও অর্ধেক এমপিও সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমপিও সার সমান দুই কিস্তিতে ভাগে ভাগ করে বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে সিটিয়ে সেচ দেওয়া উত্তম। উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই হিসেবে বোরিক পাউডার বোরিক্র ব্যবহার করা উচিত। আর এইজন্য প্রতি হেক্টরে 10 থেকে 15 কেজি বরিক এসিড/বোরাক্র দিতে হবে।
জমিতে পরিচর্যা
বীজ বপণের ৭ থেকে ১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হয়। ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে একটি করে চারা রাখা উত্তম। মাটিতে রস কম থাকলে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে। জমিতে কোন প্রকার আগাছা জমতে দেওয়া যাবে না। মাটির শক্ত হয়ে গেলে বশ্যই জমিতে নিরোনি দিতে হবে এবং মাটির উপরে চড়া ভেঙ্গে দিতে হবে। আর এগুলো করার মাধ্যমে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
মুলার শক্ত হয়ে আস হওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করা উচিত। তাহলে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব, অবশ্য হাইব্রিড জাত সমূহ বাংলাদেশে আসার পরে এই সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মুলা সংগ্রহ করতে হবে। এতে করে বাজার দাম ভালো পাওয়া যায় ও সাধু ভালো থাকে। বাংলাদেশে জাত ভেদে হেক্টর প্রতিফলন হয় ৪০ থেকে ৬০ টনের মত। তাহলে আমরা খুব সহজেই মুলা চাষ পদ্ধতি এর সকল তথ্য জানতে পারলাম।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url