গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় - গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়
প্রিয় পাঠকগণ, আপনি কি গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আপনি ভেতরে ভেতরে কি গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন? তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন কারণ আজকে এই পোস্ট জুড়ে গোড়া থেকে বাঁচার উপায় ও কোনা থেকে বাঁচার 10 টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
মানুষের প্রতি হিংসা ও আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে অভিশপ্ত হয়েছিলেন শয়তান। তাই আমরা আমাদের জীবনে এমন কোন গুনাহ করব না যাতে কাল কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সামনে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এইজন্য আমরা পরকালে যাতে আল্লাহর সম্মুখীন হতে না হয় সেই জন্য গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় জানব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় - গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়
- গুনাহ
- গুনাহের পরিচয়
- গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা
- গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা
- গুনাহের বিভিন্ন অপকার
- গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়
গুনাহ
গুনাহ বা পাপ ইসলামী ধর্মশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। আল্লাহর নির্দেশের পরিবর্তন হয় এমন সকল কাজকেই মুসলিমরা গুনাহ হিসেবে বিবেচনা করে এবং ধর্মীয় আইন লঙ্ঘন করাকে অধার্মিকতা হিসাবে ও বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
হলো এমন সকল কাজ যে সকল কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ইসলাম কোরআন থেকে শিক্ষা দেয়। ইসলাম ধর্মঅবলম্বীদের মধ্যে কোরআন হলো সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা। বিশ্বাস করা হয় কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রতিটি মানুষের ভালো ও মন্দ কাজের হিসাব করবেন এবং যাদের মন্দ কাজের পরিমাণ ভালো কাজের তুলনায় বেশি হবে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হবে। এবং ওই পাপী ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন।
গুনাহের পরিচয়
গুনাহ ও প্রধানত দুই প্রকার যথাঃ কবিরা গুনাহ ও সগিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে সূরা আল নিসা, আয়াত নং ৩১ হতে বর্ণনা যে সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেই সব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারো তাহলে আমি তোমাদের লঘুতর পাপ গুলো ক্ষমা করে দিয়ে দেব, এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করিয়ে দিব।
গুনাহের পরিচয় সম্পর্কে বলতে গেলে কিছু কবিরা গুনাহ হলো যে গুনাহ কঠিন ও বড় সেগুলোকে কবিরা গুনা বলা হয়। আর যে গুনাহ ছোট সেগুলোকে সগিরা গুনাহ বলা হয়। তাহলে আমরা গুনাহের পরিচয় জানতে পারলাম। আর তাই কেউ যদি কঠিনও গুরুতর পাপরাশি থেকে বিরত থাকতে পারে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তার লঘুতর পাপগুলো ক্ষমা করে তাকে তার সম্মানিত স্থান অর্থাৎ প্রবেশ করাবেন।
আরো পড়ুনঃ কোরবানীর ইতিহাস - কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত
কবিরা ও সগিরা গুনাহের পরিচয়ঃ আমরা যে গুনাহের জন্য পার্থিব জীবনে শাস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেমন-নির্দোষ মানুষকে বিনা কারণে হত্যা করা, ব্যভিচার করা, চুরি ডাকাতি অথবা যে পাপ কাজের জন্য পরকালে শাস্তি বা জাহান্নাম বাসস্থান হবে। এছাড়াও সুদ খাওয়া, মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি বিষয় হলো কবিরা গুনাহ। আর যে বাপের ব্যাপারে কোন শাস্তি আল্লাহর ক্রোধ বা অভিশাপের কথা বলা হয় নাই। কেবলমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই সব হল সগিরা গুনাহ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সেই সব গুনাহ কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে যার অনিষ্ঠ ও পরিণতি কোন কবিরা গুনাহ কিংবা তার চেয়েও অধিক।
কবিরা ও সগিরা গুনাহ এর মধ্যে পার্থক্যঃ আল্লাহ গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় ও সঠিক পথ প্রদর্শক কোরআনকে পাঠিয়েছে। আর কোরআন হলো একমাত্র মুসলিমদের জীবন ব্যবস্থা। তাই কবিরা ও সগিরা গুনাহ এর মধ্যে পার্থক্য কথা বলতে গেলে, প্রথমত-কোন গুনাহের প্রাথমিক পর্বগুলো হল সগিরা গুনাহের শামিল। আর ওই গুনাহের চূড়ান্ত পর্ব হলো গুনাহ। আর দ্বিতীয়ত হল, কোন গুনাহের অনিষ্ঠ ও পরিণতি যদি কোন কবিরা গুনাহের মত হয় তবে তা কবিরা গুনাহ অন্যথায় সগিরা গুনাহ হবে। তাহলে আমরা গুনাহের পরিচয় জানতে পারলাম।
গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা
প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিকে আখিরাতে স্বাচ্ছন্দময় জীবনযাপন করতেও আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। কেননা কবিরা গুনাহ মানুষকে আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের অন্তরায় সৃষ্টি এবং পরকালীন জীবনকে বিপর্যয় ও বাধা গ্রস্থ করে তোলে।
তওবা ছাড়া কবিরা গুনাহ মাফ হয় না এটা আমরা অনেকেই জানি। আর এই জন্য প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির উচিত অনিচ্ছাবসত বা ইচ্ছা বসত শয়তানের ধোকাই পড়ে গুনাহ হলে সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে তওবা পাঠ করা। কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে সগিরা গুনাহ গুলো নেক আমলের দ্বারা আল্লাহতালা মাফ করে দিয়ে থাকেন। যার জন্য শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তওবা না করলে জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারিত। তাই এই বিষয়ে খামখেয়ালি করার কোন সুযোগ আমাদের নেই।
আরো পড়ুনঃ ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত - ঈদুল আযহায় করণীয় ও বর্জনীয় ২০২৩
আর তাই সবচাইতে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কারো শিরক করা। সবগুলা মাপ হয় কিন্তু আল্লাহর সাথে কারো শিরক করার গুনাহ মাফ হয় না। আরো অন্য কবিরা গুনাহ হয়েছে যেমন মাতা পিতার সঙ্গে নাফরমানি করা, নামাজ ছেড়ে দেওয়া, নেশা করা, জেনা ব্যভিচারের লিপ্ত থাকা, বেপর্দা হওয়া, বেহায়াপনা করা, হত্যা করা, পরের সম্পদ লুটে খাওয়া, মিথ্যা কথা বলা, কারো পক্ষে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, সুদ ও ঘুষ নেওয়া, জাদুটোনা বা বান মারা, মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া, ইত্যাদি গুনা থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে আমরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার কিছু দিক নির্দেশনা পেলাম।
গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা
যে সকল মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর বাণী আল-কোরআন ও নবী রাসুলের দেখানো পথ অনুসরণ করবে কেবলমাত্র তারাই জান্নাত লাভ করবে। আর এই জন্য গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা অনেক বেশি। মহান আল্লাহতালা বলেন- যে এগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেই সব বড় গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারো তবে আমি তোমাদের ছোট গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেবো এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত-পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা এবং এক রামাযান থেকে আরেক রমাজান এত দু'ভাইয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপরাশির জন্য কাফফারা স্বরূপ হয়ে যায় যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
গুনাহের বিভিন্ন অপকার
মুসলিম বলতে সবারই একথা জানা উচিত যে যেমন শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং মৃত্যু দায়ক তেমনিভাবে গুনাহ হোক অন্তরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এমনকি দুনিয়া ও আখিরাতে যে যত অকল্যাণ অথবা ব্যাধি রয়েছে তার মনে রয়েছে গুনাহ ও পাপাচার। আর এই গুনাহ হওয়ার কারণে হযরত আদম ও হাওয়া জান্নাত থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছিলেন। শয়তান ইবলিশ আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়েছিল। নবী এর যুগে বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবন দেখা দেয় এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও বস্তু ছাড়া সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর এই জন্য অবশ্যই আমাদের গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এখন আমরা গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায় সম্পর্কে জানব
গুনাহ থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়
রমজান মাসে আমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কিছু গুণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করা উচিত যা আমাদেরকে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে সাহায্য করে এবং সেই সাথে অনাক্রান্তভাবে কোন গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথেই যেন তওবা করে সমাধান করতে পারে আর এই জন্য গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে ১০ টি উপায় নিম্নোক্ত আলোচনা করব।
১. দৃঢ় ইচ্ছা পোষণঃ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সিদ্ধান্তে কেউ যদি অটল না থাকতে পারে বা দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সময় বিবেকহীন কাজ বা গুনাহ করে ফেলে এবং তওবার ওপর অটল থাকতে পারেনা, যে কারণে আজ হয়তো অনুশোচনা করলেন কিন্তু কাল আবার সেই একই ভুল করলেন এবং তওবা করলেন এবং আবার ভুল করলেন এমন সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে এসে দৃঢ় সংকল্প ইচ্ছা পোষণ করতে হবে
আরো পড়ুনঃ কোরবানি কি - কোরবানির ইতিহাস - কোরবানি ঈদ ২০২৩ সম্পর্কে জেনে নিন
২. সব সময় আল্লাহর সাহায্য কামনা করাঃ আমাদের সবারই উচিত সবসময় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। নামাজের সময় সিজদায় কিংবা মোনাজাতের সময় আমরা আমাদের সকল পাপ মোচন করতে পারি আমরা যেন আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করতে পারি এবং মহান আল্লাহতালা যেন তওবা কবুল করে নেয়।
৩. খারাপ পরিবেশ এবং অসৎ সংঙ্গ পরিহার করাঃ গুনাহের কাজে প্রলুব্ধ হয়ে এমন পরিবেশ বা সঙ্গী সাথীর সংস্পর্শ থেকে বাঁচতে পারলে গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব। এজন্য কথায় আছে সৎসর্গে স্বর্গবাস অসৎসর্গে সর্বনাশ। হাদিস শরীফে এসেছে, মানুষ যে ধরনের লোকদের সাথে ওঠাবসা করবে কাল কিয়ামতের দিন ওই ধরনের লোকদের সাথে পুনরুত্থান করা হবে
৪. নৈরাশ্য ও হতাশা পরিহার করাঃ মানুষের অন্তরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে এ ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে। মুসলমানদেরও নিরাশ হওয়া নিষেধ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন বান্দা তোমরা কখনো নিরাশ হয়েও না। আর এই জন্য আমাদের উচিত কোন কিছু থেকে নিরাশ না হওয়া
৫. বেশি বেশি নেক আমলের চেষ্টা করা
৬. আল্লাহর প্রতি আন্তরিক, আল্লাহর ইবাদতের প্রতি অবশ্যই আন্তরিকতা পোষণ করা
৭. দূরবর্তী আসা পরিহার করাঃ পৃথিবীতে আমাদের জীবন খুবই অল্প সংক্ষিপ্ত সময় এবং এ বিষয়টি মাথায় রেখে খুব বেশি দূরবর্তী আসা পরিহার করা অবশ্যই উচিত। অর্থাৎ খুব বেশি দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা করে তাতে নিজেকে সম্পৃক্ততা রাখার আশা পরিহার করতে হবে।
৮. গুনাহর খারাপ পরিণতির ব্যাপারে সজাগ থাকাঃ কোন গুনাহকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। ছোট বড় সব ধরনের গুনাহকেই বিপদজনক মনে করে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করাই উত্তম।
৯. ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত থাকাঃ এই জ্ঞান হচ্ছে জান্নাতের পথ প্রশস্ত করা। জ্ঞান হচ্ছে আলো যা আল্লাহ আমাদের ও হৃদয়ের স্থান করেন আর পাপ এই জ্ঞানকে নিভিয়ে দেওয়া হয়।
১০. দ্বীনদারীর নামে জীবনকে কঠিন করে ফেলাঃ এমনভাবে দ্বীনদারী অবলম্বন করতে যে কেউ কেউ অহেতুক নিজেকে সেহরি বা খাদ্য পুষ্টি থেকে বঞ্চিত রাখে এবং জীবনকে অহেতুক কঠিনতর করে ফেলে মূলত বৈরাগ্যবাদী ধারণ থেকেই মানুষ এটি করে থাকে যদিও বৈরাগ্যবাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।
সর্বশেষ কথা, এতক্ষণ আমরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় গুনাহ থেকে বাঁচার 10 টি উপায় এবং আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম আজকের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এতক্ষন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url