নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
মহান আল্লাহতালা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার এবাদতের জন্য, আর তাই মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বিধান করেছেন। আজকে আমরা নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানব। নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।
নামাজ আল্লাহতালার পক্ষ হতে ইসলামী বিধান। আর তাই একজন মুসলমানের নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কেননা, নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে না জানতে পারলে সে প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি হতে পারবে না, তার ভেতরে আল্লাহর কোন ভয় থাকবে না। চলুন আমরা দেরি না করে নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিই।
নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব / নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তারই ইবাদত করার জন্য। আর এই ইবাদতের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে সালাত বা নামাজ পড়া। কাল কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা'আলা নামাজের হিসাব নিয়ে থাকবে। নামাজ না পড়া সেই দিন জাহান্নামে যাওয়ার প্রধান কারণ হবে। আর সেই জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগ করা জাহান্নামি এর কারণ হলো ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগ করা হলো কুফরি। আর এই জন্য নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব আমাদের ভিতরে আনতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কোরবানীর ইতিহাস - কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত
নামাজ একটি ফরজ ইবাদত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরিকায় আদায় করা আমাদের সুন্নাত। কিন্তু দুঃখজনক হল মুসলমানরা ইচ্ছাকৃতভাবে আজকাল নামাজের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবাদতকে ছেড়ে দিচ্ছে। আর যারা নামাজ পড়ে তারাও নিজেদের মন মতো নামাজ আদায় করে কিন্তু নবীজির তরিকায় নামাজ পড়ে না। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি বিশেষ পুরস্কার দিয়ে থাকেন। তা হলঃ
১. তার কবর থেকে মৃত্যু ও কষ্ট দূর করে দিবেন
২. কবরের আজাব থেকে তাকে মাফ করে দিবেন
৩. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমলনামা তার ডান হাতে দিয়ে দিবেন
৪. বিদ্যুতের গতিতে ফুল সিরাত পার করে দিবে
৫. বিনা হিসেবে জান্নাত প্রদান করা হবে
এজন্য আমাদের নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত জানা আবশ্যক। একই সাথে সহি ও শুদ্ধভাবে নামাজ পড়া শিখে নেওয়া আমাদের জন্য অবশ্যই জরুরী। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা'আলা জিব্রাইল এর মাধ্যমে সহিহ তরিকায় নামাজ পড়া শিখিয়েছিলেন। হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রা) রাসূল সা. কে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছেন ঠিক সেভাবে তারা নামাজ আদায় করতেন কারণ এটাই নামাজের বিশুদ্ধ তরিকা। তাহলে আমরা জানতে পারলাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ফলে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে পাঁচটি পুরস্কার দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। আর এই জন্য নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তাই আমাদের উচিত বিনা কারণে নামাজ ছেড়ে না দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সুন্নতি তরিকায় নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক আমিন।
নামাজ শিক্ষার ফজিলত / নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
মহান আল্লাহতালার নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ বা সালাত। আল্লাহ পাকের নিকট নামাজ অপেক্ষা প্রিয় ইবাদত আর কিছুই হতে পারে না। আর তাই আমাদের উচিত সুন্নতি নিয়মে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। আর যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করে তারা পরকালে বেহেশতের উত্তম স্থানের অধিকারী হবেন। আর যারা নামাজ পরিত্যাগ করেন তাদের জন্য পরকালের স্থান হবে জাহান্নামের নিকৃষ্টতম জায়গা।
অন্যত্র এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ব্যক্তি ভালোভাবে ওযু করে ভয় ও ভীতি সহকারে রীতিমতো সালাত আদায় করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাহার সগিরা গুনাহ্ মাফ করে দিবেন এবং বেহেস্তের উত্তম স্থান প্রদান করবে। আর এই জন্য আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানা। আমরা ইতিপূর্বেই জেনেছি যে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আর নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। আর সেই দিন নামাজী ব্যক্তির হাত-পা, মুখমণ্ডল কিয়ামতের দিন সূর্যের আলোর মত আলোকিত হয়ে থাকবে।
অন্যদিকে, যারা সুস্থ থাকা অবস্থায় নামাজ পরিত্যাগ করেন তাদের জন্য শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, কিয়ামতের দিনে নামাজিগণ নবী, শহীদ ও অলিগণের সঙ্গে থাকবে। একইভাবে যারা বেনামাজি তারা ফেরাউন, সাদ্দাদ, হামান, কারুনের মত বড় বড় কাফেরদের সঙ্গে থাকবে। এই জন্য আমাদের ও ফজিলত সম্পর্কে জানা জরুরী। প্রত্যেক ব্যক্তির নামাজ পড়া একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। এই নামাজ পড়ার ফলে নিজের ঈমান শক্ত ও মজবুত হয়, এবং সৎকর্মশীল হওয়া সম্ভব। নামাজ না পড়লে আখিরাতে ও দুনিয়ায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আর এই জন্য নামাজ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরজ হিসেবে ঘোষিত।
আরো পড়ুনঃ কাজা নামাজের নিয়ম - কাযা নামাজের নিয়ত ২০২৩
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কোন মুসলিম বান্দা অজু করে জামায়াতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে বলে দেন যে, আমার অমুক বান্দা নামাজ পড়বার জন্য প্রস্তুত হয়েছে কিন্তু তাহার শরীরে পূর্বের পাপরাশি সঞ্চিত রয়েছে। এছাড়া নাপাক জিনিস সাথে নিয়ে নামাজ পড়লে সেই নামাজ শুদ্ধ হয় না। এজন্য বলে তুমি উহার শরীর হতে সমস্ত পাপ তোমার মাথার ওপর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো। আর আমার বান্দা নিষ্পাপ অবস্থায় সালাত কায়েম করুক। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী উক্ত ফেরেশতা তাহার সমস্ত পাপ উঠিয়ে নিজের মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এরপরে সালাত পড়া যখন শেষ হয়ে যায় তখন ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দার নামাজ পড়ার শেষ হয়ে গেছে। তাহার পাপগুলো এখন তার শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হোক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার নাম রহমানুর রাহিম আমি বান্দার শরীর থেকে পাপের বোঝা নামিয়ে আবার যদি সেই বোঝা তাহার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তবে আমার রহমান নামের সার্থকতা থাকবে না। হে আমার ফেরেশতা, আমার এই বান্দার পাপের বোঝা নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দাও। আর এখন থেকে আমার এই বান্দা নিষ্পাপ।
একাদা কোন এক সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সাথে বসে ছিলেন, এমন এক সময় এক ইহুদি এসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন করব? আপনি যদি তার উত্তর দিতে পারেন তবে আমি বুঝবো যে আপনি সত্যিই একজন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। কেন না কোন নবী ব্যতীত আমার এই প্রশ্নের উত্তর কারো পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমার প্রশ্নটা কি? ইহুদী বললেন আপনার ও আপনার উম্মতের ওপর যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তার তত্ব কি?
আর তখন এই প্রশ্নের জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে চলে যায় তখন প্রথম আসমানে একদল ফেরেশতা আল্লাহ পাকের ইবাদতের লিপ্ত থাকে। আর ওই সময় সমস্ত আসমানের দরজা খোলা থাকে। মানুষ ও সমস্ত ফেরেস্তাদের ইবাদত আল্লাহ পাকের দরবারে সেই সময় পৌঁছানো যায়। আল্লাহর নিকট সকল ইবাদত কবুল মঞ্জুর হয়। তাহলে আমরা এখন অবশ্যই জানতে পারলাম ও বুঝতে পারলাম যে নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা তাৎপর্যপূর্ণ
আরো পড়ুনঃ নামাজের বিবরণ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
নবী করিম সা. বলেছেন যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন মনে মানে এরূপ ধারণা করতে হবে যে আমি আল্লাহ পাকের সামনে দন্ডায়মান। যদিও আমি তাকে দেখতেছি না কিন্তু তিনি আমাকে অবশ্যই দেখতেছেন। এক যুদ্ধে হযরত আলী রা. এর পায়ের তীর বিদ্ধ হয়েছিল। তিনি তীরের আঘাতে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা করেও পীরবাহীর করা সম্ভব হয় না। নামাজের সময় হযরত আলী রা. নামাজের নিয়ত করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইশারায় কয়েকজন সাহাবা সজোরে ট্রেনের তীরটি বাহির করে ফেলেন এর ফলে রক্তে জায়নামাজ ভিজে যায়। কিন্তু হযরত আলী রা. এটারকিছুই টের পেলেন না। নামাজ শেষে জায়নামাজের রক্ত দেখে হযরত আলী রা জিজ্ঞেস করলেন এটা কিসের রক্ত?
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে নামাজ শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহ পাকের নিকটতম নামাজ সাধারণত এরকমই হয়ে থাকে। নামাজের ফজিলত বলে কখনোই শেষ করা সম্ভব নয় তাই মুসলমান ভাই-বোনদের অবশ্যই উচিত প্রতিদিন ঈমানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। কারণ নামাজ ছাড়া পরকালে পার হওয়া সম্ভব না। আল্লাহ তায়ালা যেন সকল মুসলমানের ভেতরে ইসলামের ঈমানে বুজ দান করে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url