কাজা নামাজের নিয়ম - কাযা নামাজের নিয়ত ২০২৩
প্রিয় পাঠক, আপনারা কি কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আপনি কি জানেন কাজে নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকে আমি আপনাদের মাঝে কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবো।
আমরা অনেকেই জানিনা কাজা নামাজ কিভাবে কখন আদায় করতে হয়। তাই আজকের পোস্ট জুড়ে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব কিভাবে কাজা নামাজ আদায়ের করা যায় এবং কাজা নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়। চলুন দেরি না করে জেনে নেই কাজা নামাজ নিয়ম কি কি।
নামাজ মুসলিম জাতির জন্য একটি অবশ্য পালনীয় প্রধান বিধান। আর তাই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল বিবেকবান মুসলমান নর ও নারীর ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করেছেন। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সেটি কবিরা গুনাহ হবে। কিন্তু পরে তা কাজা আদায় করা ওয়াজিব। কেউ যদি কাজা নামাজ আদায় না করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এ রোগে মারা যায় আর অসুস্থ অবস্থায় লোকটি ওয়ারিশদের কে তার পক্ষ থেকে কাজা নামাজের ফেদিয়া দেওয়ার কথা বলে যায়। তাহলে এ অবস্থায় তার ওয়ারিশদের ওপর ফেদিয়া দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও আমল
আল্লাহতালা মুসলিম জাতির ওপর নামাজ ফরজ করেছেন, নামাজ আল্লাহ তাআলার কৃতিত্ব ফরজ ইবাদত। হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। তাই আমরা নামাজ ছেড়ে দেওয়ার মত এমন কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকবো। হযরত উম্মি ফারওয়াহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন মহানবী সাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল এবং বলা হলো যে সবচাইতে মর্যাদাবান আমল কোনটি? তিনি বললেন ওয়াক্তের প্রারম্ভে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাই হলো সর্বোত্তম আমল।
নামাজ যথা সময়ে আদায়ের ব্যাপারে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কর্তৃক- এত সতর্কতা ও ফজিলত বর্ণনা করার পরও বিভিন্ন কারণে মানুষের নামাজ ছুটে যায়। আর তাই, কারো কারণবশত যথাসময়ে নামাজ পড়তে না পারলে ওই নামাজ অন্য নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে আদায় করা কে কাজা বলে।
কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম সমূহ হলো পাঁচ ওয়াক্তের কম তথা অল্প কাজা নামাজ ওয়াক্তিয়া (প্রত্যেক ওয়াক্তের) নামাজের ধারাবাহিকতায় ওই ওয়াক্তের নামাজের সঙ্গে আদায় করা। আর পাঁচ ওয়াক্তের বেশি তথা ফাওয়ায়েতে কাছির বা বেশি নামাজের কাজ নামাজের আগে পড়া।
কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম হিসেবে যা লক্ষ্য রাখা উচিত তা হলঃ
কাজা নামাজ আদায়ের জন্য আপনাকে যা অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত তার নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো।
১. নামাজে কাজা আদায়ের কথা ভুলে গেলে অথবা নির্ধারিত ওয়াতের নামাজের সময় সংকীর্ণ হলে কিংবা নামাজের কাজা পাঁচ ওয়াক্তের বেশি হলে ওই নামাজের কাজা পরেও পড়া যাবে।
২. পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কম ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে তা ধারাবাহিকভাবে কাজা আদায় করতে হবে। এছাড়া আগের নামাজ আগে, পড়ে নামাজ পড়ে পড়তে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে কোন ব্যক্তির ফরজ এবং জোহরের নামাজ তরক হলে, আসরের নামাজ আদায়ের পূর্বে প্রথম ফরজের নামাজ কাজা আদায় করতে হবে। এরপর জোহরের নামাজ কাজা আদায় করতে হবে। তারপর আসরের ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করবে।
কাজা নামাজে আমাদের অবশ্যই যা জানা প্রয়োজন তা হলঃ
১. ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা ফরজ
২. ওয়াজিব নামাজের কাজা আদায় করা ওয়াজিব।
৩. আর সুন্নত বা নফল নামাজের কাজা পড়তে হয় না। কিন্তু ফরজের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ একসঙ্গে কাজা করা উত্তম।
৪. দুপুরের চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর করে নেওয়া ও যায়।
৫. জুম্মার নামাজে কাযা নেই, তবে যদি কেউ জুম্মার নামাজ কোন কারনে আদায় করতে না পারে তবে জুমার নামাজের পরিবর্তে ওই ওয়াক্তে সম্ভব হলে যোহরের চার রাকাত নামাজ পড়ে নিতে হবে। আর ওয়াক্ত চলে গেলেও চার রাকাত যোহর নামাজ কাজ আদায় করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ নামাজের বিবরণ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
৬. একমাস বা তার চেয়ে বেশি দিনের নামাজে কাজা হয়ে থাকলে এই নামাজের কাজা নির্ধারিত ওয়াক্তের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে। যেমন জীবনে যে ব্যক্তি কোনদিন নামাজই পড়ে নাই বা কত ওয়াক্ত নামাজ তরক হয়েছে সেই হিসাব নেই, ওই ব্যক্তি যখন তরক হওয়া নামাজের কাজা আদায় করতে চাই; তাহলে সেই ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের কাজে আদায় করতে থাকবে। এভাবে নামাজ পড়াকে বা আদায় করাকে ওমরি কাজা নামাজ বলে।
৭. সফরের সময় যে নামাজ ফউত হবে; ওই নামাজের কাজা আদায় মুসাফির অবস্থায় যেমন হবে মুকিম স্থায়ী হওয়ার পর সে হুকুময় থাকবে। অর্থাৎ কোন মানুষ যদি সফরের যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে তবে সে সফর এবং মুকিম অবস্থায়ও কাজা কসর আদায় করবে।
৮. আর সফর থেকে ফিরে মুকিম সীমানায় আসার পর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে ওই নামাজের কাদা আদায়ের ক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ আদায় করা উত্তম।
কাজা নামাজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আকদ্বিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাআতাই সালাতিল ফাজরিল ফায়েতাতি ফারদুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায়ঃ ফরজের দুই রাকাত ফরজ নামাজের কাজা আদায়ের জন্য কেবলামুখী হয়ে নিয়াত করলাম আল্লাহু আকবার।
তবে মুখের নিয়ত জরুরি নয়, বরং এটি মুস্তাহাব। আর তাই অন্তরের নিয়তই সর্ব শ্রেষ্ঠ নিয়ত। (বুখারী, হাদিসঃ ১,রদ্দুল মুহতারঃ ২/৩৭৭)
তবে কাজা নামাজ এবং ওয়াক্তিয়া নামাজের নিয়ত একই রকম তবে এইটুকু পার্থক্য যে কাজা নামাজের (আন উছাল্লিয়া) শব্দের জায়গায় (আল ফায়েতাতি) বলতে হবে। এখানে শুধু ফরজের কাজা নামাজের নিয়ত উল্লেখ করা হয়েছে। যদি যোহরের নামাজ কাজা হয় তাহলে যোহরের নামাজ কাজ হয় তাহলে আপনাকে যেটা করতে হবে তা হল রাকাআতাই সালাতিল ফাজরিল এর জায়গায় এর পরিবর্তে আরবা’আ রাকাআতি ছালাতিয যোহরীল; আসর হলে আসরের নামাজ হলে তার জন্য আরবা’আ রাকাআতি ছালাতিল আছরিল; মাগরিব কাজা হলে মাগরিবের জায়গায় আরবা’আ রাকাআতি ছালাতিল মাগরিবিল; এশার নামাজ কাজা হলে,আরবা’আ রাকাআতি ছালাতিল ইশায়িল; বেতেরের নামাজ কাজা হলে, ছালাছা রাকাআতি ছালাতিল বিতরিল; বলে কাজা নামাজের নিয়ত করতে হবে।
তাহলে আমরা খুব সহজে কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও কাজা নামাজের নিয়ত সম্পর্কে পুঙ্খানুপু রূপে জানতে পারলাম এবং আরবীর পাশাপাশি বাংলা নিয়ত জানতে পারলাম।
পরিশেষে, বলতে চাই কম হোক কিংবা বেশি হোক যাদের নামাজ তরক হয়েছে। তাদের জন্য অবশ্যই নামাজের কাজা আদায় করা উত্তম। আর তাই মহান আল্লাহতালা মুসলিম উম্মাহকে উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী কাজা নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url