নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বুঝিনা। আর তাই আমরা জেনে না জেনে প্রতিদিন নামাজ কাজা করে। আমরা যদি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতাম তাহলে কখনোই নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকতাম না।
আল্লাহতালা মানুষকে ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদতের জন্য, কিন্তু আমরা দুনিয়ার মুহে পড়ে পরকাল বা আখিরাতের কথা ভুলে গিয়েছি। আজ আমরা নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানব এবং তদ্রূপ আমল করব, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
নামাজের গুরুত্ব
নামাজের গুরুত্ব এত অধিক যে, মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য হুকুম আহকামের মতো নামাজকে জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রেরণ করেননি বরং স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে নিজের কাছে নিয়ে তা বান্দাহর মুক্তির জন্য উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছেন। নামাজের মাধ্যমে বান্দা হওয়া মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং পরকালে মুক্তি পেতে পারে, এছাড়া নামাজের মাধ্যমে জান্নাতের সুখ শান্তি লাভ করে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণা করবে, তা আল্লাহর কাছেই পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর তা প্রত্যক্ষ করেন। (সুরা বাকারা, আয়াতঃ 110) এছাড়া তিনি আরো বলেন-
হে মুমিনগণ, তোমরা রুকু করো, সিজদা কর, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত করো এবং সৎকর্ম সম্পাদন কর, তাহলে পরবর্তীতে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সুরা হাজ্জ, আয়াতঃ ৭৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, নামাজ হল বেহেস্তের চাবিকাঠি। নামাজ ছাড়া বেহেশতে ঢোকা যাবে না। সুতরাং দুনিয়া থেকে চাবি তৈরি করে না গেলে কখনো বেহেশতের দরজার তালা খোলা সম্ভব হবে না। তাই সকলেরই উচিত মহান আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যমে পরকালের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে নামাজের প্রতি যথাযথ যৎনবান হওয়া।
আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজের হুকুম - তারাবির নামাজের ফজিলত ২০২৩
আর তাই আমাদের সকলের উচিত দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই সালাত পরিত্যাগ করা যাবে না। জ্ঞান সম্পূর্ণ অসুস্থ ব্যক্তি তারও কোন অবস্থাতেই নামাজ থেকে বিরত থাকা যাবে না। কেননা ইসলামের পরিভাষায় সুস্থ ব্যক্তির জন্য যেমন নামাজের সঠিক নিয়ম রয়েছে ঠিক জ্ঞান সম্পন্ন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নামাজের নিয়ম রয়েছে। প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির জন্য ঈমান গ্রহণের পর প্রথম এবং প্রধান কাজ হল আল্লাহর এবাদত করা। কারণ পরকালে সবার আগে মুসলমানদের নামাজের হিসাব নেওয়া হবে, এবং যে ব্যক্তির নামাজের হিসাব দিতে সহজ হবে তার অন্য সবকিছুর হিসাব সহজ হয়ে যাবে।
আমরা সকলেই জানি নামাজ হলো একটি এবাদত। এবাদতের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে আন্তরিকতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখে। আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে শুধু সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। আর তাই ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ পড়া। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য তুলে ধরে মহান আল্লাহতালা বলেন-
আমার বান্দাদের বল, যারা ঈমান এনেছে তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে গোপন ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। তোমরা ওই দিন আসার আগে যেদিন কোন বেচাকিনা থাকবে না এবং থাকবে না কোন বন্ধুত্ব। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াতঃ ৩১)
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্দরভাবে জামাতের সঙ্গে আদায় করবে, তাদেরকে মহান আল্লাহ তা'আলা পাঁচটি বিশেষ পুরস্কার দান করবেন। তা হলঃ
১. সেই ব্যক্তির মৃত্যু কষ্ট দূর করে দিবেন
২. কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন
৩. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামা ডান হাতে দিয়ে দেবেন
৪. বিদ্যুতের গতিতে ফুল সিরাতের মত জায়গা পার করবেন
৫. বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ সাহায্য প্রার্থনা করো। আর তাই নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে নামাজের সময় ধনী-গরীব ফকির-মিসকিন সকল ভেদাভেদ ভুলে একই সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। সবাই আল্লাহর কাছে প্রকাশ্যে মাথা নত করতে। আর তাই এটিই হল নামাজের আসল সৌন্দর্যের প্রতিফলন।
নামাজের ফজিলত
নামাজের ঈমান বা কালেমার পরেই নির্দিষ্ট হওয়ার কারণ এই যে, নামাজের মর্যাদা বা ফজিলত অন্যান্য যে কোন ইবাদত থেকে শ্রেষ্ঠ। নামাজের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর স্রষ্টা এবং বান্দার সৃষ্টি সম্পর্ক যে রূপ পরিষ্কার ভাবে প্রতিফলন ঘটে, তা অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে দেখা যায় না। আর এ কারণেই নামাজ যাবতীয় ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। মহান আল্লাহতালা নামাজ সম্পর্কে কোরআন মাজীদে যত পরিবারে নির্দেশ দিয়েছেন তত আর কোন ইবাদত সম্পর্কে দেননি। এ থেকে বোঝা যায় যে নামাজ মুসলিম উম্মাদের জন্য কতটা কল্যাণকর।
আরো পড়ুনঃ নামাজের বিবরণ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও রহিত কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াতঃ ৪৫)। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালাকে সর্বক্ষণ স্মরণ রাখা যায়। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালাই কুরআন মাজীদে বলেছেন তোমরা আমাকে স্মরণ রাখার জন্য নামাজ আদায় করো।
রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অসংখ্য হাদিসে নামাজ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাম বর্ণনা করেছেন-যে ব্যক্তি নামাজের ইহতেমাম করে, তার জন্য নামাজ কেয়ামতের দিন নুর হবে এবং হিসাবের সময় দলিল হবে এবং নাজাতের উপায় হবেন। আর এই সময় যে ব্যক্তি নামাজের ইহতিমাম করে না, কিয়ামতের দিন নামাজ তার জন্য নূর হবে না, এবং তার নিকট কোন দলিলও থাকবে না। এমন ব্যক্তির জন্য হাশর হবে ফেরাউন, হামান, ও উবাই ইবনে খলফ এর সাথে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৫৭৬, সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৪৬৭)।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নামের ফজিলত ও আমল
এছাড়াও অন্য এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে যে, রাসুল সাঃ বলেন, বল দেখি যদি কোন ব্যক্তির দরজার সামনে একটি নহর পড়ে থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোন ময়লা বাকি থাকবে? সাহাবাগণ আরজ করেন, তারা বলে কিছুই বাকি থাকবে না। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অবস্থা ও এইরকম যে আল্লাহতালা তার বদলতে সমস্ত গুনাহ খাতা মাফ করে দেন, এবং পবিত্র করেন।
সর্বশেষ কথা নামাজের ফজিলতে উল্লেখিত কোরআন হাদিসের দলিল ছাড়া বা বিবেক বৃদ্ধি দ্বারা প্রার্থী ও দৃষ্টিতে বিচার করলে নামাজের গুরুত্ব ও নামাজের মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ দেখতে পাবো। আর তাই আমাদের সকলের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে পড়া। আমরা সকলে শত ও সত্যের পথে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো এবং আল্লাহর এবাদত করব। এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url