নামাজের বিবরণ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
প্রিয় পাঠক, আপনি কি নামাজের বিবরণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন কারণ আজকে নামাজের বিবরণ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হবে।আপনাদের মধ্যে অনেকেই নামাজের বিবরণ সম্পর্কে জানেন না তাই সকল সমস্যার দূর করতে নামাজের বিবরণ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা তার সাথে বান্দা হওয়ার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যমিক হিসেবে সালাত কে ফরজ করেছেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ বা সালাত। আর তাই ইসলামের শরীয়তে ঈমানের পরে নামাজের অবস্থান।
পোস্ট সূচিপত্রঃ নামাজের বিবরণ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
- নামাজের বিবরণ
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
- ফরজ নামাজের বিবরণ
- জোহর নামাজের বিবরণ
- আসর নামাজের বিবরণ
- মাগরিব নামাজের বিবরণ
- এশা নামাজের বিবরণ
- বেতের নামাজের বিবরণ
নামাজের বিবরণ
মহান আল্লাহ তায়ালা তার নৈকট্য লাভের জন্য মুসলিম জাতির উপরে নামাজ ফরজ করেছেন। নামাজের দ্বারা বান্দাহ মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা মূলক জীবন গঠনের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ ও রহমত কামনা করে থাকেন। আর এই লক্ষ্যেই মহান আল্লাহ তা'আলা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।
নামাজের বিবরণ জানতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে নামাজ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে নামাজ শব্দটি মূলত ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। আরবিতে নামাজকে সালাত বলা হয়। সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাঁকা কাঠকে আগুনে পুড়িয়ে সোজা করা, অনুগ্রহ করা, প্রার্থনা করা, গুণকীর্তন করা ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেন, সালাত শব্দটি সেলাহ্ থেকে এসেছে যার অর্থ হল মিলন বা সম্পর্ক, বান্দা ও প্রভুর মাঝে সালাত সম্পর্ক সৃষ্টি করে বলে সালাতকে সালাত হিসেবে নামকরণ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ সুদ কি - সুদের ভয়াবহতা - সুদ হারাম হওয়ার কারণ জেনে নিন ২০২৩
নামাজের বিবরণ হিসেবে শরীয়তের পরিভাষায় শরীয়তের নির্ধারিত পদ্ধতিতে কিয়াম, রুকু, এবং সিজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করাকে সালাত বলা হয়। অন্য কথায় বিশেষ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন এবং করাকে নামাজ বা সালাত বলা হয়। তাহলে আমরা জানলাম নামাজের বিবরণ কি এবার আমরা জানবো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ তিনি যে রাতে মহান আল্লাহর অসীম কুদরতে দুনিয়া থেকে সপ্তম আসমান ভ্রমণ করেন, বেহেশত দোজখ অবলোকন করেন এছাড়া মহান আল্লাহর দিদার লাভ করেন ওই রাতে মহান আল্লাহ তাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার স্বরূপ দান করেন।
আর এই জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথমে 50 ওয়াক্ত নামাজ দান করেছিলেন। এরপরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বীয় উম্মতের দুর্বলতা জনিত কারণে কমাতে কমাতে অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মঞ্জুর করে আনেন। এবং এছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণের হেকমত সম্পর্কে বলা হয়েছে। এবার আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং এর ওয়াক্ত সম্পর্কে জানব-
ফরজ নামাজের বিবরণ
মহান আল্লাহ তায়ালা যখন আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি সাল্লামকে তৈরি করলেন। এরপর প্রথম পয়গম্বর আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি সালাম যখন বেহেশ্ত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন, তখন সে সময় দুনিয়ায় রাতের গভীর অন্ধকার বিরাজ করছিলেন। মহা সংকটে পড়ে হতাশায় ভোগে এবং সারারাত কান্না করে কাটালেন।
আরো পড়ুনঃ হজ্জের ফরজ কয়টি - হজ্জের প্রকারভেদ ২০২৩
এরপর যখন রাতের অন্ধকার দূর হয়ে ভোরের আলো প্রকাশ পেল তখন তিনি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। আর এই দুই রাকাত নামাজের ফরজ নামাজ রূপে পরিগণিত হয়েছেন। তাহলে আমরা জানলাম ফরজ নামাজের বিবরণ কিভাবে মুসলিম জাতির ওপর বিদ্যমান হল।
জোহর নামাজের বিবরণ
আমরা প্রায় কম বেশি সকলেই জানি যে, মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পুত্রকে নিজে কুরবানী করতে দৃঢ়সংকল্প করেন। এবং নিজের পুত্রকে নিজে কুরবানী করতে মনোবল যেন না হারাই তার কারণে মায়া মন থেকে দূর করতে পারার কারণে এক রাকাত, পুত্রের মায়া মন থেকে দূর করতে পারার কারণে এক রাকাত, হযরত ইসমাইল মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকার কারণে এক রাকাত, হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে যাবার জন্য এক রাকাত, মোট চার রাকাত নামাজ শুকরিয়া স্বরূপ আদায় করেছিলেন। আর এই চার রাকাত নামাজে ফরজ নামাজ হিসেবে গণ্য হয়েছিল।
আসর নামাজের বিবরণ
নামাজের বিবরণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি, এবং জোহর নামাজের বিবরণ সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। এবার আমরা জানবো আসর নামাজের বিবরণ এবং আসর নামাজে কিভাবে মুসলিম জাতির উপর আবির্ভাব ঘটল। হযরত ইউনুস আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বিরাট এক সামুদ্রিক মাছের পেটে আবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং সে অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভের জন্য এক রাকাত, মাছের পেটে ঢোকার সময় গভীর রাতের অন্ধকার ছিল ওই অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভের জন্য এক রাকাত, সাগর বক্ষের পানি রাশি থেকে মুক্তি লাভের জন্য এক রাকাত, এবং মহান আল্লাহর তার অপরাধ মার্জনা করে দেওয়ার জন্য এক রাকাত। অর্থাৎ এই মোট চারটি কারণে তিনি চার রাকাত নামাজ শুকরিয়া জ্ঞাপন করার জন্য আদায় করেছিলেন। আর এই জন্যই আসর নামাজের বিবরণ হিসাবে এই চার রাকাত নামাজ আসর নামাজ হিসেবে ফরজ করা হয়েছে।
মাগরিব নামাজের বিবরণ
মাগরিব নামাজের বিবরণ হিসেবে যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজে খোদা না হওয়ার নিদর্শন স্বরূপ এক রাকাত, তার মাতা বিবি মরিয়ম আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোদার না হওয়ার নির্দেশ্বরূপ এ রাকাত, এবং একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলাকে খোদা স্বীকারের নির্দেশ স্বরূপ আরো এক রাকাত, আর এই মোট তিনটি কারণে তিনি তিন রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই তিন রাকাত নামাজ মাগরিব নামাজের ফরজ নামাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এবার আমরা এশা নামাজের বিবরণ সম্পর্কে জানব-
এশা নামাজের বিবরণ
যখন হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফেরাউনের দলবল নিয়ে আক্রমণ করে এবং মুসা আঃ সালামের সঙ্গী সাথীদের নিয়ে নীলনদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হন।
আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
এবং যখন সামনে এগোনোর পথ না পেয়ে হযরত মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য এক রাকাত, নীলনদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক রাকাত, অবাধ্য ইসরাইলদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক রাকাত, এবং সর্বশেষ ফেরাউন ও তার বাহিনী নীলনদের ডুবে ধ্বংস হওয়ার জন্য আরো এক রাকাত, এই সর্ব মোট চারটি কারণে চার রাকাত নামাজ পড়েছিলেন। আর এই চার রাকাত নামাজ এশার ফরজ নামাজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। এখন তো আমরা এশা নামাজের বিবরণ সম্পর্কে জানলাম সর্বশেষ এখন আমরা বেতের নামাজের বিবরণ সম্পর্কে জানব।
বেতের নামাজের বিবরণ
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম শবে মিরাজে যখন সফরে বের হন, তখন হযরত মুসার সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে সিদরাতুল মুনতাহাই পৌঁছে তার জন্য এক রাকাত নামাজ পড়তে অনুরোধ করেন। এবং সেইখানে পৌঁছে তিনি এক রাকাত নামাজ পড়েন। নিজের জন্য মতান্তরে পিতার জন্য আর এক রাকাত নামাজ পড়েন, এ সময় মহান আল্লাহ তাকে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি সে রাকাত ও আদায় করে ফেলেন। কিন্তু কারো মতে এই নামাজের প্রথম রাকাত ওয়াজিব, দ্বিতীয় রাকাত সুন্নত, তৃতীয় রাকাত ফরজ। আর তাই একত্রে তিন রাকাত নামাজকে ওয়াজিব রূপে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ কথা আমরা ইতিমধ্যে জানতে পারলাম নামাজের বিবরণ কি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি কিভাবে মুসলিম জাতির ওপর আল্লাহতালা নামাজকে ফরজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন আর তাই আমাদের সকলের উচিত সৎ ও সত্যের পথে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। প্রিয় পাঠক আপনারা এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url