বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী - মনীষীদের জীবনী পাঠের প্রয়োজনীয়তা
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের মাঝে এমন কিছু মনীষীর জীবনী নিয়ে আলোচনা করব যা ইতিপূর্বেই তাদের নাম সম্পর্কে জানেন কিন্তু আজকে আমি বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করব। আর এই বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানার পর তাদের জীবন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো।
আজকে আমরা এমন কিছু মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করব যা পড়ে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন। কারণ আজকে আমরা বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে সমস্ত পোস্ট জুড়ে আলোচনা করব। আমরা চাইলে এই সব বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানার পরে আমাদের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটাতে পারি। চলুন বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জেনে নেই।
গ্যালিলিও গ্যালিলি
গ্যালিলিও গ্যালিলি তার জন্ম ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ল্যাটিন ভাষায় ফাদার মন্ত্রোচ্চারন করেছিলেন। কিন্তু সবটুকু গ্যালিলি বুঝতে পারছিলেন না, এদিকে সুরটা তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করছে আজ বাদে কাল মহামানব যীশুর জন্মদিন। আজ শুরু হয়েছে ক্যারোল সংগীত। এমনটি দেখে আসছেন গ্যালিলিও সেই ছোট বেলা থেকে। সে দেখে আসছেন এবং ভাবছেন এই ধার্মিক অনুশাসনের অন্তরালে কি যুক্তি আছে? কি এমন কিছু যাকে আমরা বিজ্ঞান বলতে পারি ? নাকি এ হলো নিছকই আমাদের আজন্মলালিত বিশ্বাস মাত্র!
তিনি এ বিষয়ে ভাবতে লাগেন এবং ছটফট করতে থাকেন তখন গ্যালিলিওর বয়স ছিল মাত্র 5 বছর। কোন কিছু তার ভালো লাগে না লাগে না ধর্মের নামে অধর্মের এই উদ্ধত অহংকার। ধর্মের আফিম খাইয়ে মানুষকে ঝিমিয়ে রাখা শোষণের সীমাহীন ধারাবাহিকতা কোথায় সত্যকে কিভাবে উপলব্ধি করব? সত্যের সন্ধানে মাত্র পাঁচ বছর বয়সের বালক গ্যালিলিও গ্যালিলি ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। সাদামাটা ভাবনা নিয়ে পরিচিত প্রিয়জনরা সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন অবাক বিস্ময়ে তারা তাকিয়ে থাকেন এই বালকটির মুখের দিকে।
আরো পড়ুনঃ শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনীতি
গ্যালিলিও প্রাচীন মনীষীদের চিন্তাধারাকেও সমালোচনা করতেন। এ ব্যাপারে কোন কোনঠা ছিল না তার মনের মধ্যে। তিনি যেভাবে এবং যে ভাষায় অ্যারিস্টোটলকে আক্রমণ করেছিলেন তার শিক্ষিত সমাজকে ব্যথিত করেছিলেন। আর তখন গ্যালিলিওর বয়স ছিল মাত্র 19 বছর তিনি বলেন মহাপজ্ঞা অ্যারিস্টটলের সব সিদ্ধান্তই অভ্রান্ত নয়। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন কোন উঁচু জায়গা থেকে একই সময়ে একটি ভারী বস্তু এবং একটি হালকা বস্তু ফেললে ভারী বস্তুটি হালকা বস্তুর আগে মাটিতে স্পর্শ করবে। ওই বয়সেই গ্যালিলিও গ্যালিলি পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করলেন যে এই সিদ্ধান্ত ভুল।
অথচ হাজার হাজার বছর ধরে আমরা এই সিদ্ধান্তকে অভ্রান্ত সত্য বলে মেনেছি আর মেনেছি বলেই বিজ্ঞানের ক্ষতি করেছি। এখন থেকে এমনটি আর হতে দেওয়া চলবে না গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রমাণ করেছিলেন যে ওপর থেকে নিচে ফেলা ভারী বস্তু এবং হালকা বস্তু একই সঙ্গে নিচে পড়বে যদি না পতনকালে বায়ুমণ্ডলের দ্বারা তাদের গতি বাধা পাই।
তারা এই সিদ্ধান্ত ঘীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দারুন অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সকলে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে শুরু করেন। কি এত বড় কথা অ্যারিস্টোটলকে অনেকেই দেবতার আসনে আসিয়া ছিলেন আর তার বিরুদ্ধে কিনা এই বিদ্রোহ শেষ অব্দি গ্যালিলিও গ্যালিলিকে শক্তিশালী বিরুদ্ধে পক্ষের সামনে অসহায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। আর এই জন্য তাকে পিসা ছেড়ে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতে হয়।
আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন গণিত শাস্ত্রের পতিতার আগ্রহ বেড়ে যায়। ইউক্লিড, আর্কিমিডিস প্রভৃতি গণিত বিশারদদের গবেষণা পত্রগুলি তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে থাকতেন। আর তখন থেকেই তার মনের ভিতর একটি ধারণা জন্ম হয়েছিল তা হল আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত অর্জন করতে না পারলে কোন মানুষ জ্ঞান সম্পন্ন হবে না। আর এইজন্য পদার্থবিজ্ঞানই হয়ে দাঁড়ায় তার একান্ত প্রেম চিকিৎসার শাস্ত্রে অধ্যায়ন আবশ্য বেশিদূর আগায় না। আর্থিক কারণে মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যাই তার পড়াশোনা। কিছু দিনের মধ্যে তিনি আর্কিমিজির সূত্রের ওপর নতুন একটি আবিষ্কার করেন বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন।
তিনি এমন একটি নিক্তি আবিষ্কার করেছিলেন যা দ্বারা মিশ্রিত ধাতু সমূহের মধ্যে থেকেও যেকোনো একটি পরিমাপ নির্ণয় করা সহজেই সম্ভব। গ্যালিলিও এর পরবর্তী জীবন ছিল ঘাত প্রতিঘাতে পরিপূর্ণ তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে তিনি নিজস্ব মতবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তাকে কি ধরনের শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তিনি রক্ষণশীল চার্চের সর্বময় ধ্যান-ধারণাকে আক্রমণ করেছিলেন সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছিলেন তীব্র জিহাদ। তাই কুসক্রকারীরা তাকে বিধর্মী এবং বাইকেনবিদ্বেষী বলে ঘোষণা করেছিল।
শেষ অব্দি গ্যালিলিও এর জীবন কেটেছিল নিজ গৃহে অভ্যন্তরীণ অবস্থায় তখন তার বয়স হয়েছিল 70 বছর। সেই বন্দি অবস্থাতেও তিনি হল্যান্ড থেকে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন এই গ্রন্থে প্রতিটি শব্দের মাধ্যমে কুসংস্কারকে তিনি স্বভাবসিদ্ধ আপসহীন যুক্তিতে আক্রমণ করেছিলেন। ১৫৯২ থেকে ১৬১০ সাল পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞানের জগতে অগ্রণী বিপ্লব এনেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ জ্যোতিষ্ক বিজ্ঞানে উন্নত দূরবীনের প্রয়োগ, শনিগ্রহের বলয় আবিষ্কার, বৃহস্পতি গ্রহের তিনটি উপগ্রহের সন্ধান, একাধিক নক্ষত্রের সঠিক অবস্থান নির্ণয়, চাঁদের ভূমি অসমতল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা ইত্যাদি। তাহলে আমরা বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানতে গিয়ে গ্যালিলিওর জীবনী থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম অবশেষে তিনি 1642 খ্রিস্টাব্দে ৭৮ বছর বয়সে চিরনিদ্রার কোলে ধরে পড়েন এই মহান বিজ্ঞানী।
মাইকেল ফ্যারাডে
বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী এর মধ্যে মাইকেল ফ্যারাডে ছিলেন অন্যতম তিনি ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংল্যান্ডের নিউইংটন অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র কর্মকার আর তাই ছোটবেলা থেকেই পিতার কারখানাতেই ঘোরাফেরা করতেন মাইকেল ফ্যারাডে। তিনি দেখতেন যে কিভাবে কামাররা লোহা পেড়াচ্ছে এবং সেগুলো দেখে তিনি বিস্ময় হয়ে যায়। এবং ছোটবেলা তিনি তার বাবাকে বলেছিলেন বাবা আমি বড় হয়ে তোমার মত একজন কর্মকার হব। সেদিন তোমাকে আর টাকার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে হবে না।
আরো পড়ুনঃ এইডস কি - এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
হয়তো কর্মকার হওয়ার স্বপ্ন সফল হয়নি মাইকেল ফ্যারাডের, কিন্তু তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহল সাদরে বরণ করে নিয়েছিল। তিনি এনেছেন ডায়নামো, বিশ্বের শিল্প ক্ষেতে যা একটি বিপ্লব সংঘটিত করেছিল। মানব সভ্যতার ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে নতুন যুগের এক প্রদর্শক দিক। এদিকে বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যেই মাইকেল ফ্যারাডের ছোটবেলা কেটে যায়। স্কুলের পড়াশুনা কি তা বোঝার সুযোগ হয়ে ওঠেনি যে বয়সে ছেলেরা মন দিয়ে পড়াশুনা করে এবং অবসর সময়ে চুটিয়ে গল্প গুজব করে সে বয়সে বেচারী মাইকেল ফ্যারাডে কাজ হাতে নিয়েছিল একটি বইয়ের দোকানে। সারাদিন সে সেখানেই কাজ করতেন হাড়ভাঙ্গা খাটনি বইয়ের বান্ডিল মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। এমনকি অবসর সময়ে বই বাধাও করতে হতো মাইকেল ফ্যারাডে কে।
এভাবেই বইয়ের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসার জন্ম হয়। মনের ব্যাপ্তি ক্রমশই তার ভেতরে বাড়তে থাকে। এখানে তিনি পছন্দ মত বই পড়তে পারতেন কখনো কখনো সারারাত ধরে বই পড়তেন। বিশেষ ভালোবাসতেন বিজ্ঞান আর গণিত বিষয়ক বইগুলি। আর তাই এই দুই বিষয়ের প্রতি ছিল তার প্রবল ইচ্ছা। কিন্তু প্রথাগত কোন শিক্ষাই ছিল না তার ভেতরে। তাই বিজ্ঞানের জটিল বিষয় গুলি উপলব্ধি করতে পারতেন না পড়তে পড়তে কোথাও বাধা পেলে নিজেই ভীষণ রাগ করতেন মাইকেল ফ্যারাডে।
আর তখন তিনি ভাগ্যকেই দোষারোপ করতেন চোখ বন্ধ করে বসে থাকতেন অংকের জটিল ফর্মুলা কিছুতেই বুঝতে পারতেন না। কোথায় জ্ঞানের দেবী আপনি আমার মধ্যে আসুন আমার দ্বিতীয় চোখ খুলে দিন আমি সবকিছু বুঝবো আমি এক বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হব আকুল আহবানে তখন হয়তো এই কথাই মাইকেল ফ্যারাডে বলতেন।
আর তখন লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা আসতেন বক্তৃতা দিতে। সাধারণ মানুষের দলে দলে ভিড় করতেন সেই বক্তৃতা শুনবার জন্য সময় এবং সুযোগ পেলেও হাজির হতেন সেইখানে বক্তৃতা শুনতে। সেখানে আসতেন হামফ্রে ডেভি।, তিনি ছিলেন নামজাদা বিজ্ঞানী, ভীষণ ভালোবাসতেন বক্তৃতা শুনতে দেবীকে দেখে তার মনে হতো তিনি স্বর্গ থেকে খসে পড়া এক দেবদূত যে, কারণেই হোক না কেন ডেবির বক্তৃতা শুনতে মাইকেল এর ভীষণ ভালো লাগতো।
কিন্তু মাইকেল ফ্যারাডে বক্তৃতার সব অংশ বুঝতে পারতেন না তবু যতটা সম্ভব দুর্বোধ্য অংশগুলি বোঝার চেষ্টা করতেন। বক্তৃতা গুলি কাগজের টুকে নিয়ে আসতেন মাইকেল ফ্যারাডে ঘরে এসে রাতের পর রাত জেগে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করতেন। কখনো বামে ছোটখাটো পরীক্ষা করতেন এইভাবে দেবীর সঙ্গে তার একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ২০২৩
অজানাকে জানার আগ্রহে একদিন দুঃসাহসী হয়ে উঠেছিলেন মাইকেল ফ্যারাডে। সেই সময় তিনি ডেভিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। অশিক্ষিত ফ্যারাডের কাছ থেকে এই চিঠি পেয়ে ডেভি অবাক হয়ে গিয়েছিল। ডেভি ভেবেছিলেন লেখক বোধ হয় সাধারণ একজন দপ্তরী। তবুও তিনি এই চিঠিটাকে অবজ্ঞা করেননি। নিজের কাজে খুবই ব্যস্ত থাকতে হতো ডেভিকে, এবং তখন তিনি নামজাদা বিজ্ঞানী ছিলেন কিন্তু তারপরেও মাইকেল ফ্যারাডেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।
আর তাই আমরা জানি ডেভি আর ফ্যারাডের সাক্ষাৎকার বিশ্ব বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে রয়েছে। স্মৃতি হয়ে থাকার কারণ হলো দুজনের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আর অন্যজন হল বইয়ের দোকানের স্বল্পশিক্ষিত কর্মচারী। দুজনের মধ্যে মনের মিল হবে কেমন করে? কিন্তু বিধাতার বোধ হয় অন্যরকম অভিপ্রায় ছিল তাই দেখা গেল, প্রথম সেই সাক্ষাৎকার এই ডেভি অবাক হয়ে গেছিলেন। দেবী ভাবতে পারেনি যে ফ্যারাডের মতো অর্ধশিক্ষিত মানুষের বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে এভাবেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।
সাক্ষাৎকারে শেষে তিনি আন্তরিকভাবে মাইকেল সঙ্গে কর্মমর্দন করেছিলেন। এবং তিনি তার জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তার স্বপ্ন সফল করেছিলেন। আর তাই ডেভি তাকে সহকারীর পদে গ্রহণ করেছিলেন। তখন অবশ্য তিনি এক প্রজ্ঞা যুবকে পরিণত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিরলস গবেষণার মধ্যে মগ্ন ছিলেন এই মহান বিজ্ঞানী। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ২৫ ই আগস্ট তার জীবনাবাসন হয়। আজও মাইকেল ফ্যারাডে আমাদের কাছে একটি জীবন্ত বিস্ময়। জীবদ্দশাতেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তির মহানায়ক। আর এ কারণেই মনীষীদের জীবনী পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url