হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের জীবনী জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি কি হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আজকে সমস্ত পোস্ট জুড়ে হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে।
হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পিতা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মা হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। আর ওই সময়ে ইব্রাহিমের বয়স ছিল ৮৬ বছর , শিশু বয়সে তাকে ও তার মাকে পিতা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে মক্কার বিজনভূমিতে রেখে এসেছিলেন। এবং সেখানে ইব্রাহিমের দোয়ার বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের জমজম কূপের সৃষ্টি হয়
তারপর ইয়ামনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুলহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদন ক্রমে সেখানে আবাদিক কাজ শুরু হয়। আর তখনই 14 বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরের সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর ত্যাগ ও কুরবানীর ঘটনা। পিতা ইব্রাহিম কর্তৃক পুত্র ইসমাইলকে কোরবানির উক্ত ঘটনায় শত বর্ষীয় পিতা ইব্রাহিমের ভূমিকা যাই থাকুক না কেন ১৪ বছরের তরুণ ইসমাইলের ঈমান ও আত্মত্যাগের একমাত্র নমুনা ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ না করলে পিতার পক্ষে পুত্র কোরবানির ঘটনা সম্ভব হতো কিনা তা সন্দেহ। এবং ওই সময় নবীর নাম হলেও নবীপুত্র ইসমাইলের আল্লাহ ভক্তি ও দৃঢ় ঈমানের পরিচয় ফুটে উঠেছিল তার কাজেও কর্মে। এছাড়া পিতার সহযোগী হিসেবে তিনি কাবা গৃহ নির্মাণের শরিক হন এবং কাবা নির্মাণ শেষে পিতা পুত্র মিলে যে প্রার্থনা করেন আল্লাহ পাক তার নিজ যবাবাণীতে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন (বাকারাহ ২/১২৭-১২৯)
এইভাবে ইসমাইল স্বীয় পিতার ন্যায় বিশ্বের গোটা মুমিন হৃদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেন। আল্লাহ তার প্রশংসাই সূরা মারিয়ম ৫৪ আয়াতে বলেন তিনি ছিলেন ওয়াদা রক্ষার সত্যশ্রয়ী যা তিনি যবহের পূর্বে পিতাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন- পিতা আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা কার্যকর করুন আল্লাহ চাইলে তো আপনি আমাকে সবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।
আরো পড়ুনঃ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন
এরপর কাবার নির্মাণকালে পিতা পুত্রের দোয়ার বরকতে প্রথমতঃ কাবা গৃহ যেমন হাজার হাজার বছর ধরে চলছে তাওয়াফ ও ছালাত হজ এবং ওমরাহোর ইবাদত আর্থিক তেমনি চলছে প্রকৃত ঈমানদার মানুষদের ঢল। দ্বিতীয়তঃ সেখানে সারা পৃথিবী থেকে সর্বদা আমদানি হতে ফল ফলাদির বিপুল সম্ভব। তাদের দোয়ার তৃতীয় অংশ মক্কার জনপদের নবী প্রেরণের বিষয়টি বাস্তবায়িত হয় তাদের মৃত্যুর প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে ইসমাইলের বংশে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু এর আবির্ভাবের মাধ্যমে হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আবাদকারী ইয়ামনের বনু জুরুহুম গোত্রে বিবাহ করেছিলেন। তাদেরই একটি শাখা গোত্র কুরাইশ বংশ কাবা গৃহ তত্ত্বাবধ্ধনের মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। এই মহান বংশেই আমাদের শেষ নবী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের আগমন ঘটে।
পিতার প্রতি ইসমাইলের শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টান্ত
ইসমাইল আঃ সালাম পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত ছিলেন কারণ উপরোক্ত ঘটনার মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। হাজেরার মৃত্যুর পর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন ইসমাইলকে দেখতে যান তখন তার স্ত্রীকে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলেন তিনি বললেন আমরা খুব অভাবে ও কষ্টের মধ্যে আছি। তোমার স্বামী এলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বল যে তিনি যেন দরজার চৌকাঠ পাল্টে ফেলে। এরপর যখন ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ি ফিরল তখন তার সেই ঘটনা বলল এবং তখন ইসমাইল আলাই সালাম বুঝতে পারল যে তার পিতা এসেছিলেন এবং তার পিতা যা বলেছে, তা হল তার বউকে তালাক দিতে হবে। যার ফলে ইসমাইল তার স্ত্রীকে তালাক দেন এবং অন্য স্ত্রী বিয়ে করেন।
পরে একদিন পিতা এসে একই প্রশ্ন করলে স্ত্রী বলেন আমরা ভালো ও সচ্ছলতার মধ্যে আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। এদিকে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তাদের সংসারের বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন অতঃপর তাকে বললেন তোমার স্বামী বনে থেকে ফিরলে তাকে বল যেন দরজার চৌকাঠ না পাল্টায়। তখন ইসমাইল আঃ ঘরে ফিরলে পূর্বের ঘটনা বলে এবং ইসমাইল বলেন সেই লোকটি হলো আমার পিতা এবং তোমাকে স্ত্রীতে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আর এই ঘটনার কিছুদিন পর ইব্রাহিম পুনরায়ন আসেন অতঃপর পিতা পুত্র মিলে কাবা গৃহ নির্মাণ করেন।
ইসমাইল সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেন-সর্বপ্রথম স্পষ্ট আরবি ভাষা ব্যক্ত করেন ইসমাইল। যখন তিনি ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সের তরুণ। এখানে স্পষ্ট আরবি অর্থ বিশুদ্ধ আরবি ভাষা আর এটাই ছিল কুরাইশী ভাষা। যে ভাষায় পড়ে কুরআন নাযিল হয়েছিল। অন্যান্য নবীগণের ন্যায় যদি ইসমাইল ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত পেয়ে থাকেন তাহলে বলা যায় যে ইসমাইলের নবুয়াতি মিশন আমৃত্যু মক্কা কেন্দ্রিক ছিল। তিনি বনু জুরহুম গোত্রে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ইসরাইলি বর্ণনা অনুসারে তিনি ১৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও মা হাজেরার পাশে কবরস্থ হন। কাবা চত্বরে রুকনে ইয়ামানির মধ্যে তার কবর হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে তবে মক্কাতেই যে তার মৃত্যু হয়েছিল এটা নিশ্চিতভাবে এখনো ধারণা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর বড় মহত্ব হল এই যে তিনি ছিলেন যবিহুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাহে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী এবং তিনি হলেন শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর মহান পূর্বপুরুষ। আল্লাহ তার উপরে শান্তি বর্ষণ করুন। উপরোক্ত বিষয়ে মূলত কোন মতভেদ নেই কারণ মুসলিম ও আহলে কিতাব প্রায় সকল বিদ্বান একমত পোষণ করে যে, তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেননা তিনি ইব্রাহিমের প্রথম পুত্র এবং হাজেরার গর্ভের জন্ম। তিনি মক্কাতেই বড় হয়েছিলেন সেখানেই তার বসবাস এবং অতঃপর সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কুরবানীর মহান ঘটনা মক্কাতে ঘটেছিল এবং তিনি কখনোই কেন’আনে আসেননি। তার পিতা ইব্রাহিম তাকে নিয়ে মক্কায় কাবা গৃহ নির্মাণ করেছিলেন।
এদিকে ইসহাকের জন্ম হয় কেন’ আনে বিবি সারাহর গর্ভে ইসমাইলের 14 বছর পরে। শৈশবে তিনি মক্কায় এসেছিলেন বলে জানা যায় না। তাই পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬ এবং সূরা আলে ইমরান ৮৪, নিসা ১৬৩, সুরা ইব্রাহিম ৩৯, ছাফফাত ১০০-১১৩ আয়াতগুলিতে সর্বত্র ইসমাইলের পরেই ইসহক ও ইয়াকুবের আলোচনায এসেছে। এ ব্যাপারে সকল ইসরাইলি বর্ণনায় একমত যে ইসমাইলের জন্মের সময় ইব্রাহিমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। এদিকে ইসহাক জন্মের সময় ইব্রাহিমের বয়স ছিল নূন্যতম ১০০ বছর এবং সারাহর বয়স ছিল নূন্যতম 90 বছর।
আরো পড়ুনঃ সুদ কি - সুদের ভয়াবহতা - সুদ হারাম হওয়ার কারণ জেনে নিন ২০২৩
নিঃসন্তান ইব্রাহিম বিদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট একটি নেককার সন্তান প্রার্থনা করেছিলেন তিনি এভাবে বলেছিলেন-হে আমার প্রতিপালক আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করো অতঃপর আমরা তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। আর তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান ইসমাইল অতঃপর ইসমাইলের কোরবানির ঘটনা শেষে যখন ইব্রাহিম কেন’আনে প্রত্যাবর্তন করেন তখন সেখানে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। যারা লূত এর কওমকে ধ্বংস করতে যাওয়ার পথে তার বাড়িতে যাত্রা বিরতি করেন এবং সারাহর গর্ভে ইসহাক জন্মের ও তার ঔরসে পরবর্তীতে ইয়াকুব জন্মের সুসংবাদ প্রদান করেন।
উক্ত আয়াতগুলির বর্ণনা পরস্পরায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে প্রথম সুসংবাদপ্রাপ্ত সন্তানটি ছিলেন ইসমাইল যাকে কোরবানি করা হয়। অতঃপর সুসংবাদ প্রাপ্ত সন্তান ছিলেন ইসহাক। যেমন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দোয়া করেছিলেন তা হলোঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দান করেছেন ইসমাইল ও ইসাহককে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অবশ্যই দোয়া কবুলকারী, এখানে তিনি ইসমাইলের পরে ইসাহকের নাম উল্লেখ করেছিলেন। উপরোক্ত আলোচনা এ কথা স্পষ্ট হয় যে যবীহুল্লাহ ছিলেন ইব্রাহিমের প্রথম সন্তান ইসমাইল।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url