শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনীতি
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এমন এক ব্যক্তির জীবনী ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করব তিনি হলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হক। অনেকেই শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আর তাই আপনাদের কথা চিন্তা করে সমস্ত পোস্ট জুড়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনীতি সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।
শেরেবাংলা একে ফজলুল হক বাংলার জীবনে বাঘ হিসেবে পরিচিত। আর তাই আজকে আমরা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এর জন্ম জেলা ও তার জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে জানব। চলুন দেরি না করে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের জীবনের রাজনীতি সম্পর্কে জেনে নিই।
শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী
বাংলার বাঘ হিসেবে সমধিক পরিচিত, বাংলার অবিসংবাদিত ও প্রাণপ্রিয় নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬ শে অক্টোবর বরিশাল জেলায় চাখাড়া (বর্তমানে সাতুরিয়া নামে পরিচিত) স্থানে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম ছিল কাজী ওয়াজেদ আলী এবং মাতার নাম ছিল বেগম সৈয়দুন নেছা। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ছোটবেলা থেকে তার পিত্রালয় চাখার গ্রামের লালিত পালিত হয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ মেধাবীর অধিকারী ছিলেন। তিনি ছাত্রাঅবস্থায় যা একবার পড়তেন সেটি তা কখনোই ভুলতেন না। তিনি বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ডিভিশনাল বৃত্তিসহ প্রবেশিকা এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এফ এ পাস করেন।
১৮৯৬ সালে তিনি আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯০০ সালে কলকাতার বিখ্যাত আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জুনিয়র হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ করেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তিনি আইন পেশার ত্যাগ করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদে চাকরি নেন। চাকরির ধরা বাধা নিয়ম তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি 6 বছরের মধ্যে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় আইন পেশায় ফিরে আসেন। তার মেধা, তেজস্বী, বক্তৃতা, বাচনভঙ্গি ও জোরালো যুক্তি অতি দ্রুত সময়ে তার জীবনে মহৎ সাফল্য এনে দেয়।
১৯১১ সালে আইন পেশার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদ এবং সর্বভারতীয় আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯১৮ সালে তিনি নিখিল ভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। অসাম্প্রদায়িক মানব নেতা হওয়ার সুবাদে ১৯১৯ সালে মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৪ সালে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।
এরপর ১৯২৯ সালে তিনি নিখিল বঙ্গপ্রজা সমিতি গঠন করেন যা ১৯৩৬ সালে কৃষক প্রজা পার্টি নামকরণ করা হয়। 1937 সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। ১৯৪০ সালে লাহোরের অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে গেলে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর তিনি ১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল বাংলার এই মহান ও অসাধারণ রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু ঘটে।
রাজনীতিতে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের অবদান
শেরেবাংলা ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার অন্যতম অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে ছিলেন অসাধারণ এবং উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। বাঙালির সত্তাকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছে। রাজনীতিতে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের অবদানের নিম্নরূপ হলঃ
১. গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানঃ ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে ১৯৩০-৩২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত তিনটি গোল টেবিল বৈঠকে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক অসাম্প্রদায়িক মনোভাব রোশন করেন এবং তার জোরালো বক্তব্য পেশ করেছিলেন।
২. হিন্দু মুসলিম স্বার্থ একত্রীকরণঃ ফজলুল হক অসাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে উত্তম ছিল সেটা আমরা সকলেই জানি। তিনি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ভূমিকা পালন করতেন। এছাড়া ১৯১৬ সালে হিন্দু মুসলমানদের স্বার্থ সমন্বয়ের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এবং ১৯১৯ সালে মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
৩. লাহোর প্রস্তাবঃ ১৯০৯ সালে মলে মিন্টো সংস্কার আইন, ১৯১৯ সালে ভারতীয় শাসন আইন ও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন মুসলমানদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আর তাই ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেসের উগ্রপন্থী সাম্প্রদায়িক নেতার কার্যকলাপে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রবল হলে মুসলমানরা পৃথক আবাসভূমির কথা ভাবতে থাকে। এরপর মূল প্রস্তাবে তিনি মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেন।
৪. যুক্তফ্রন্ট ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনঃ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের ওপর অনীহা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করে যাচ্ছিল। এমন সময় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর নেমে আসে চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার হীন চেষ্টা করা হয়। পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে পিছিয়ে দেওয়া হয়। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং শেরে বাংলা যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন।
কৃষকদের কল্যাণ সাধনে শেরেবাংলার অবদান
শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনীতি সম্পর্কে আমরা জানলাম এবার আমরা কৃষকদের কল্যাণ সাধনে শেরেবাংলার অবদান সম্পর্কে জানব-শেরেবাংলা একে ফজলুল হক সিলেট একজন উদারমন নেতা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কৃষকদের উন্নতি না হলে অর্থনৈতিক উন্নতি কখনোই সম্ভব না। আর তাই তিনি অবহেলিত কৃষকদের উন্নতির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কৃষকদের জন্য তার গৃহীত পদক্ষেপ গুলোর নিম্ন রূপ নিচে দেখানো হলোঃ
১. কৃষক প্রজা আন্দোলন পরিচালনাঃ তিনি বাংলার লক্ষ লক্ষ কৃষককে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তিদার এর জন্য কৃষক প্রজা আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন।
২. নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতিঃ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক রাজনৈতিক শক্তির উৎসাহ ছিল দেশের কৃষক সমাজ। তিনি কৃষকদের বড় বেশি ভালোবেসে ছিলেন। কৃষকের জন্য সর্বদয় তার মন কাঁদতে থাকতো। এজন্য তিনি ২৯ সালে নিখিল বঙ্গ পর্যায়ের সমিতি গঠন করেন এবং সকল ধর্ম বর্ণের লোকদের জন্য এই সমিতির দরজা খোলা ছিল।
৩. ঋণ- সালিশি বোর্ড গঠনঃ কৃষকদের দুরবস্থা, ঋণের দায়ী ও জমিদারের ও উৎপিরনের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি 1937 সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেছিলেন। তার এই উদ্যোগের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ধ্বংসস্তূপ কৃষক মুক্তি লাভ করে।
৪. প্রজাস্বত্ব আইনঃ ১৯৩৮ সালে শেরেবাংলার উদ্যোগে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাস করা হয়। এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৫০ সালে জমিদারি দখল উপজেলা সত্য আইন পাস হয় এবং জমির উপর প্রজার শতপ্রতিষ্ঠিত লাভ হয়।
শিক্ষা বিস্তারে শেরেবাংলার অবদান
শেরেবাংলা একে ফজলুল হক একজন শিক্ষানুরাগীব পন্ডিত হিসেবে পরিগণিত ছিল। কারণ তিনি বুঝেছিলেন আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতি অর্জন করতে না পারলে বাংলার মুসলমানদের কোন উন্নতি কোনক্রমেই সম্ভব হবে না। ভারতের মুসলমানরা ইংরেজ ও আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল। শিক্ষা ক্ষেত্রে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের অবদান হলোঃ
১. সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলনঃ শেরে বাংলা ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় 1906 সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন। আর এই সম্মেলনে তিনি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
২. শিক্ষা পরিকল্পনা পেশঃ শেরে বাংলাকে ফজলুল হক ১৯১৩ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদে একটি শিক্ষা পরিকল্পনা পেশ করেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল গণমুখী শিক্ষার পথ প্রশস্থ করা।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ 1921 সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪. ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ ১৯২৪ সালে তিনি বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এ সময় তিনি গরিব মুসলমান ছাত্রদের শিক্ষা বিস্তারের জন্য মুসলিম এডুকেশন ফান্ড গঠন করেন।
৫. ছাত্রাবাস নির্মাণঃ শেরেবাংলায় কে ফজলুল হক অক্লান্ত প্রচেষ্টার কারণে কলকাতার টেলর হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল ও কলকাতার ব্রেকাল হোস্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে মুসলমান ছাত্ররা বিশেষভাবে উপকৃত হতে থাকে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের জীবনী ও রাজনৈতিক সম্পর্কে জানলাম এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
Never feels boring when listening to legends life and their footsteps should be followed by everyone, I listened to his biography from Kabbik Audiobook https://kabbik.com/#/