এইডস কি - এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ কোন না কোন ভাবে অসুস্থ। কেউবা মানসিকভাবে, আবার কেউ আছেন নানা রোগের কারণে অসুস্থ। আর ঠিক তেমনি এইডস একটি রোগ। আপনি কি জানেন এইডস কি? এইডস কিভাবে মানুষের শরীরে ধরা পড়ে। এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
আমরা অনেকেই জানিনা এইডস কি? এবং কিভাবে মানুষের শরীরে রোগ বিস্তার করে। আর তাই সকল জল্পনা কল্পনা দূর করে আপনাদের মাঝে এইডস কি এবং কিভাবে মানুষের দেহে ছড়ায় তার সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবো। আর এই জন্য আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে এইডস কি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এইডস কি - এইডস রোগের লক্ষণ প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- এইডস কি
- এইডস রোগের লক্ষণ
- এইডস রোগ বিস্তার
- এইডস এর প্রভাব / এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
- এইডস রোগের প্রতিরোধ / এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
এইডস কি
এইডস মূলত একটি মরণ ব্যাধি রোগ। আর এই এইডস এইচআইভি নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয়। এটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব সহজে কোন সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হলে খুব সহজেই মৃত্যুবরণ করে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম এইডস কি, এছাড়া পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে এইডস ইংরেজি শব্দ যার পূর্ণরূপ হলঃ Acquired Immune Deficiency Syndrome। এটি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগের নাম। আর এইডস হল একটি রোগ আর এর ভাইরাস হল এইচআইভি যার পূর্ণরূপ হলঃ Human Immunodeficiency Virus।
আরো পড়ুনঃ হস্ত মৈথুন থেকে বাচার উপায় - হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক সমাধান ২০২৩
১৯৮১ সালে এই রোগ প্রথম সনাক্তকরণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসিতে। এরপরে সর্বশেষে ১৯৮১ সালে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারি রোগের ভাইরাস সনাক্ত করেন। ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানীরা এর নাম দেন Laymphadenopathy-associated virus। এই ব্যধিটির কোনই চিকিৎসা নেই যদিও ইদানিং কালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওষুধ কোম্পানি একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা প্রচার করছে।
এই মুহূর্তে পৃথিবীতে প্রায় 40 মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে 37 মিলিয়ন নারী পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক আর ২.৫ মিলিয়ন শিশু। পৃথিবীতে যত রোগী আছে তার ৬০% এর ওপরে আছে সাব সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। আগামী প্রজন্মকে এই মরণ ব্যাধির ছোবল থেকে দূরে রাখতে হবে তা না হলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামো মারাত্মক ও হুমকির মুখে পড়বে। বেশিরভাগ এইচআইভি রোগী কোন লক্ষণ ছাড়া এই রোগ বহন করে। তবে কখনো কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার 6 থেকে 7 সপ্তাহ পরে কিছু অনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। তাহলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারলাম এইডস কি।
এইডস রোগের লক্ষণ
এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত এইডস রোগের লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১. ক্লান্তি ভাব, বিনা কারণে ক্লান্তি ভাব এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ
২. মাংসপেশী ও গিরাই ব্যথা
৩. জিহবায় ইনফেকশন, জিহ্বা ইনফেকশন দেখা দেওয়া এইচআইভি আক্রান্তের একটি লক্ষণ
৪. মুখের মধ্যে সাদা ফ্যাঙ্গাস রূপ ধারণ করা
৫. ওজন কমিয়ে যায়
৬. ব্রেন টিউমার হয়
৭. শরীরের জ্বর আসা-যাওয়া করা এবং রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এই রোগের একটি লক্ষণ
৮. মাথা ব্যাথা, এইচআইভি/এইডস রোগের একটি লক্ষণ
৯. পেটব্যথা, অযথাই পেট ব্যথা করা এইডস রোগের কারণ
১০. অতিরিক্ত কাশি, নিউমোনিয়া, ফুসফুস ও ত্বকের প্রদাহ হয়
১১. মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতা, ভাইরাস আক্রান্তদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক চাপ বাড়ে এবং মস্তিষ্কের জটিলতা সৃষ্টি হয়
তাহলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারলাম এইডস রোগের লক্ষণ সমূহ গুলো কি কি এবার আমরা জানবো এইডস রোগ বিস্তারের কারণ গুলো।
এইডস রোগ বিস্তার
এইচ আই ভি ভাইরাস বা এইডস রোগ বিস্তার সাধারণত কয়েকভাবে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়। বায়ু, পানি, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোয়ায় বা সংস্পর্শে এই এইচআইভি ছরায় না। কিন্তু এইচআইভি মানব দেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে বেশি হয়ে থাকে যেমন রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ, মুখের লালা ইত্যাদি। আর তাই এর ফলে মানবদেহে এই তরল পদার্থগুলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। যেমনঃ সুই বা সিরিঞ্জের জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার, একই সুই বা সিরিঞ্জ বারবার ব্যবহার করা বা এইডস আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত ব্যবহার ইত্যাদির কারণে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায় - গর্ভবতী হওয়ার জন্য সহবাসের নিয়ম
যৌন সম্পর্ক, ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এইডস রোগ বিস্তারের অন্যতম কারণ। এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এ রোগ বেশি ছড়ায়। কেননা এইচ আই ভি ভাইরাস যৌনলালা, পুরুষের শুক্রাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত হওয়ার কারণের মাধ্যম হল যৌন সম্পর্ক। রক্ত মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির রক্ত সুস্থ কোন ব্যক্তি শরীরে প্রবেশ করালে সেটিও এই রোগে আক্রান্ত হয়। গর্ভের সন্তান একটি শিশু তার জন্ম পূর্বকালীন সময় মায়ের গর্ভে অবস্থান করে এবং মায়ের গর্ভে তার বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। তবে এক্ষেত্রে যদি মা এইডস রোগে আক্রান্ত হয় তবে সেই শিশু এই রোগের আশঙ্কা নিয়ে বিকাশ ঘটতে পারে বা জন্মগ্রহণ করে। এমনকি আক্রান্ত মায়ের দুধ পানের মাধ্যমেও এ রোগ সরাতে পারে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও এইরকম মরণব্যাধির রোগ শরীরের বাসা বাঁধতে পারে। বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকেই শরীরে বিভিন্ন প্রতিস্থাপন করে, যেমনঃ কর্নিয়া, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, লিভার, বোনমেরো ইত্যাদি। তাই অবশ্যই প্রতিস্থাপনের সময় সতর্ক রাখা উচিত যেন কোন প্রকার এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির না হয়। যদিও বিভিন্নভাবে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হল যৌন মিলনের মাধ্যমে। তাহলে আমরা ইতিমধ্যে জানতে পারলাম এইডস কি এইডস এর লক্ষণ এইডস রোগ বিস্তার। এখন আমরা জানবো এইডস এর প্রভাব
এইডস এর প্রভাব / এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
এইডস একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। এ রোগ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে মৃত্যুর কোলে ঢলে দেয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়। তাই সবাই ঘৃণার চোখে এইডস রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে। যার ফলে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক মৃত্যুর আগেই মানসিক মৃত্যু ঘটে। এইডস ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে অক্ষম ও কর্মের জন্য অযোগ্য করে দেওয়া হয়। এ থেকে বোঝা যায় এইডস এর প্রভাব কেমন, আর তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবার সমাজ এমনকি দেশের উন্নয়নেরও অন্তরায়। মূলত এই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে অভিশাপ হয়ে আসে। এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় ও দোষী বলে মনে করে। ফলে তার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
আরো পড়ুনঃ মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - মসুর ডালের উপকারিতা ২০২৩
মানুষের শরীরে এ রোগ শ্বেত রক্তকণিকা নষ্ট করে ফেলে, এবং একসময় মৃত্যু ঘটায়। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাজ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। আর তাই এতে উৎপাদনশীলতা কমে যায় ও জাতীয় উন্নয়ন সর্বগ্রে বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু জাতীয় নয় আন্তর্জাতিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সার্বিকভাবে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য এই এইডস রোগকে দায়ী করা হয়।
এইডস রোগের প্রতিরোধ / এইডস রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ
রোগের মত মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই করনীয় যা তা হলঃ
১. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
২. কনডম ব্যবহার করতে হবে কারন বহুগামীতা ও সমকামিতা পরিহার করে একজন যৌনসঙ্গীতে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কনডম ব্যবহার করা অত্যন্ত নিরাপদ। বিশেষ করে এইডস থেকে মুক্তি পেতে এর কোন বিকল্প নেই। তাহলে এইডস কি এবং এইডস কিভাবে ছড়ায় জানতে পারলাম।
৩. ড্রাগের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস হতে পারে আর তাই এটিকে এড়িয়ে চলতে হবে
৪. নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে
৫. এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান জন্মগ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াতে হবে
৬. সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের যা করণীয়
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের করণীয়গুলো হলঃ
১. এইডস আক্রান্ত রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করা
২. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে অবহেলা না করে তার প্রতি স্নেহ ভালোবাসা প্রদর্শন করা যেন মানসিকভাবে সে শান্তি পায়
৩. কোন যৌন কর্মীর এইডস ধরা পড়লে তাকে অন্য কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া
৪. এইডস আক্রান্ত রোগীর যেকোন প্রয়োজনে এগিয়ে আসা
৫. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে অন্যদের মতো সুযোগ প্রদান করা
৬. তাদের মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করতে এবং তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে
৭. স্বাভাবিক জীবন যাপনে এইডস আক্রান্ত রোগীদের উৎসাহিত করতে হবে
৮. এবং সর্বশেষ তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ থেকে বোঝা যায়
এইডস কি, এবং কিভাবে এর সংক্রমণ বেড়ে যায় এর লক্ষণ গুলো কি।
আমাদের এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url