উন্নত জাতের মরিচ চাষ পদ্ধতি - কাঁচা মরিচের উপকারিতা
কাঁচা মরিচ খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়। কাঁচা মরিচ রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন কাঁচা মরিচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচাঁর তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সবজিতে কাঁচা মরিচের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁচা মরিচ সালাত এর সাথেও ব্যবহার করা হয়।
কাঁচা মরিচ শুধু তরকারিতে ব্যবহার করা হয় না। কাঁচামরিচ ভাতের সাথেও খাওয়া হয়ে থাকে। এতে করে খাওয়ার স্বাদ বাড়ে। প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ উন্নত জাতের মরিচ চাষ পদ্ধতি - কাঁচা মরিচের উপকারিতা
কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা
ঝালখায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । কমবেশি সকলে ঝাল খেয়ে থাকে । এছাড়াও সালাত কিংবা তরকারিতে কাঁচামরিচের ব্যবহার বেশ কদর রয়েছে । ভাতের স্বাদ বাড়াতে কাঁচামরিচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে । সকল শ্রেণী পেশার মানুষ কাঁচা মরিচ ব্যবহার করে থাকলেও, এর উপকার সম্পর্কে জানেনা । তাই মরিচের বিভিন্ন উপকারী দিক সম্পর্কে জানব।
কাঁচা মরিচের বিভিন্ন গুনাগুন
কাঁচা মরিচের বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে । যেমন ভিটামিন এ, সি , কে, থিয়ামিন, নিয়াসিন, ফলেট, পটাশিয়াম, কপার, এবং ম্যাগনেসিয়াম আর এইসব কিছু আমাদের শরীরে খুবই কার্যকরী উপাদান ।
কাঁচা মরিচ খাওয়ার মাধ্যমে শরীর ভালো থাকে । ত্বক সুস্থ রাখে । চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। হার্ট ভালো রাখে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । ডায়াবেটিস থেকে বাঁচায়, হজম শক্তি বাড়ায়, বয়স ধরে রাখে, মন ভালো রাখে, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
গ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল। এটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে কাঁচা ও পাঁকা অবস্থায় অনেক বেশি কদর রয়েছে । মরিচ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে । তাই সব মৌসুমে কাঁচামরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা খরিপ-১ খরিপ-২ ও বারি -২ নামে কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে।
জাতঃ খরিপ-১ বাংলাদেশের জয়পুরহাটে গ্রীষ্মকালীন আগাম মরিচ চাষ করে থাকে । এতে ব্যাপক ফলন হয় । এছাড়াও বারি-২ নামে একটি জাত যা বাংলাদেশের বগুড়া, লালমনিরহাট, পাবনা, সমগ্র খুলনা অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষ করে শীর্ষ পর্যায়ে জয়পুরহাট এর অবস্থান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র হতে জানা যায়। বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় ২০২০ ২১ খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন আগাম জাতের ২০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় । লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ করা হয় ১৮৫ হেক্টর জমিতে । এছাড়াও বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় শীতকালীন মৌসুমে ৩২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । এর বিপরীতে ২৮০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন মরিচ চাষ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানাই জেলা কৃষি বিভাগ।
হাইব্রিড মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ ছাড়া বাঙালির রানা কল্পনা করা যায় না। মরিচ তরকারি রান্নার উল্লেখযোগ্য মসলা । তাই মরিচ চাষ কিভাবে করব চলুন জেনে নেওয়া যাক ।জলবায়ু ও মাটিঃ মরিচ চাষের জন্য সাধারণত দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ মাটিতে ভালো চাষ হয়ে থাকে । এছাড়াও মরিচ চাষের জন্য জৈব পদার্থ মিশ্রিত উর্বর মাটিতে বেশি ভালো হয়ে থাকে । মরিচ চাষের জন্য মাটিতে পিএইচ এর পরিমাপ ৫.৫ থেকে ৭.০ এবং তাপমাত্রা ২৫.০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে । মরিচ উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া ভালো হয় । অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে মরিচের ফুল ঝরে পড়ে ও পচনজনিত রোগ দেখা দেয়।
বীজ বপণের সময়ঃ বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী একেক অঞ্চলে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন বীজভবনের উপযুক্ত সময় হল মার্চ থেকে এপ্রিল রবি মৌসুমের জন্য অক্টোবর থেকে নভেম্বর।
বীজ তলা তৈরি ও বপন পদ্ধতিঃ বীজতলায় এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে যেখানে বৃষ্টির পানি জমবে না এবং যথেষ্ট আলো বাতাস পায় । এছাড়াও প্রয়োজন মত পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে । বীজ বপনের পূর্বে রোদে ১-২ ঘন্টা রেখে দিয়ে ঠান্ডা করার পর বীজতলায় বীজ বপন করাই ভালো , এতে বীজের অঙ্করোদগম দ্রুত হয়ে থাকে । বীজ বপনের পর অতিবৃষ্টি বা প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
চারা রোপনের পদ্ধতিঃ যখন চারা প্রায় ১০ সে.মি বা ৪ ইঞ্চি উঁচু হয় তখন জমিতে 60 থেকে 70 সে.মি বা 25 থেকে 30 ইঞ্চির দূরত্বে সারিতে রোপন করতে হয় । এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ সেমি বা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি।
সঠিক পরিচর্যা ও সার প্রয়োগঃ যারা রোপণের সময় সঠিক পরিমাপে সার প্রয়োগ করতে হবে যেমন ঃ গোবর/কম্পোস্ট, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া চারা রোপনের পরে, সময়মত নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে একই সাথে মাটির ওপরে চটা ভেঙে দিতে হবে । এছাড়া জমিতে পানির প্রয়োজন হলে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে।
মরিচ গাছের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার ও লক্ষণঃ মরিচ গাছের বিভিন্ন রোগ লক্ষ্য করা যায় যেমনঃ পাতা কুঁকড়ানো রোগ, গোড়া পচা রোগ, এ ফিড বা সাদা মাছি ।
মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানোর ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় । এ রোগের কারণে ফলন কমে যায় ও ফলনের গুণগত মান কমে যায়।
মরিচ গাছের গোড়া পচা রোগের কারণে মরিচ গাছ হলুদ রঙ ধারণ করে । এ পচার রোগ গাছের গোড়া বা কান্ডে দেখা যায় । পরে গাছের গোড়ায় পচন শুরু হয় ও শিকড় নষ্ট হয়ে যায় । এর ফলে গাছ শুকিয়ে পড়ে মারা যায়।
তাই বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন পর্যন্ত সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তাহলে অধিক ফলন লাভ করা সম্ভব।
বারোমাসি মরিচ
মরিচ বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল। এটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে কাঁচা ও পাঁকা অবস্থায় অনেক বেশি কদর রয়েছে । বিভিন্ন প্রকার রান্নার কাজে কাঁচা ও পাকা মরিচ ব্যবহার হয়ে থাকে । এছাড়াও বিভিন্ন মজাদার আচার তৈরিতে কাঁচা ও পাকা মরিচের কদর রয়েছে ।
বারোমাসি বিভিন্ন মরিচের জাত ঃ বারো মাস চাষ করা যায় । এমন বেশ কয়েকটি জাত বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছে । এর মধ্যে রয়েছে , অনল ১৭০১ , মল্লিকা সিড , বারি মরিচ- ১ , বিজলী প্লাস , খরিপ- ৩ , ইত্যাদি । অন্যান্য জাত যে প্রক্রিয়ায় বোপন ও রোপন করা হয় , ঠিক একই প্রক্রিয়ায় এ সকল জাত ও বোপন থেকে শুরু করে রোপন পর্যন্ত ও ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
মরিচ চাষে লাভ
মরিচ চাষে উৎপাদন খরচ কম থাকায় বেশি লাভ করা সম্ভব । এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা । কম খরচে বেশি লাভের কারণে গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির আশেপাশে ও আঙ্গিনার কোণে মরিচ চাষ করা হচ্ছে । এছাড়াও বাংলার কৃষকরা ব্যাপক মরিচ চাষ করছে । কেউ কেউ আবার শখের বসে, বাসা বাড়ির ছাদে ও টবে মরিচ চাষ করছে । আর আমরা জানি বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ, অধিকাংশ মানুষ কিসের সাথে সম্পৃক্ত।
মরিচের বিভিন্ন জাত
মরিচা জন্য বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে । যেমন বারি-২, বারি-৩, করিপ-১, খরিপ-২, অনল ১৭০১, প্রভৃতি।
এরপর চারা বোপনের পরে চারা ১০ সেমি হয়ে গেলে রোপন করতে হবে । রোপনের পরে মরিচ উত্তোলন পর্যন্ত, সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এবং এর মাধ্যমে কম খরচে বেশি লাভ করা যায় ।
আর এইসব জাত বিভিন্ন মৌসুমে কৃষকরা চাষ করে থাকে । চারা বোপন থেকে রোপন করা পর্যন্ত সঠিক মাত্রায় সার সেচ ও নিরানী দেওয়া আবশ্যক । অনেক সময় বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক জনিত রোগ দেখা যায় । এজন্য খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন প্রকার ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ না করে।
এরপর চারা বোপনের পরে চারা ১০ সেমি হয়ে গেলে রোপন করতে হবে । রোপনের পরে মরিচ উত্তোলন পর্যন্ত, সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এবং এর মাধ্যমে কম খরচে বেশি লাভ করা যায় ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url