রোজা অর্থ কি - রোজা কত প্রকার কি কি বিস্তারিত জানুন
আপনি কি জানেন রোজা অর্থ কি। রোজা কোন মাসে করা ফরজ। রোজার ফজিলত সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। রোজা অর্থ কি জানতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে রোজা কাদের ওপর ফরজ। আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন যে রোজা একমাত্র মুসলিম বান্দাদের প্রতি আল্লাহতালা ফরজ করেছেন। রোজা করার মাধ্যমে একজন মুমিনের ঈমান আরো মজবুত হয়।
এখন আমরা জানব যে রোজা অর্থ কি এবং কেন রোজা করা হয়। এবাদত সমূহের মধ্যে রোজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রোজা দ্বারা অভ্যাস অবলম্বনে দুঃখী ও গরীব অসহায়দের ক্ষুধার কষ্ট অনুভবের সুযোগ হয় এবং তা দ্বারা গরিবদের প্রতি দয়া মায়া ও ভালবাসা সৃষ্টি হয়ে দানশীলতা ও পরোপকার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রোজা অর্থ কি - রোজা কত প্রকার কি কি বিস্তারিত জানুন
- রোজা অর্থ কি
- রোজার গুরুত্ব
- রোজার ফজিলত
- রোজা ভঙ্গের কারণ
- রোজা কত প্রকার ও কি কি
- রোজার কাযা ও কাফফারা
- রোজার ফরজ
- রোজার সুন্নত
- রোজার নিয়ত
রোজা অর্থ কি
সাওম আরবি শব্দ। আর রোজা ফার্সি শব্দ। সাওম শব্দের অর্থ হল নিজেকে বিরত রাখা আত্মসমর্পণ করা বা কঠোর সাধনা করা। তাহলে এক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে যে রোজার অর্থ কি এবং কেন রোজা রাখতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে রোজা হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে নিয়তের সাথে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আহার-পানাহার কিংবা স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। রোজা হচ্ছে ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ।
আরো পড়ুনঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন তোমাদের ওপর রোজা তথা সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাকওয়াবান হতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ১৮৩ )
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটা কাজ তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দেব। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশি যা তাকে খুশি করে। যখন সে ইফতার করে সে খুশি হয়, এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।
রোজার গুরুত্ব
এবার আমরা জানব যে রোজার গুরুত্ব কেমন, কিভাবে রোজা পালন করব। রোজা অর্থ কি সেটি আমরা জেনেছি, এবং আমরা জানি ইসলামের বিধান মোতাবেক পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে রোজার স্থান চতুর্থ। রোজা করার ফলে মানুষের ধৈর্য, স্বাস্থ্য, পরোপকার, দানশীলতা, বৃদ্ধি পায়। রোজার গুরুত্ব অপরিসীম বলে রোজার দ্বারা মানুষ কর্মী, সক্রিয়, সহনশীল, নিয়মানুবর্তিতা এবং পরিশ্রমী হতে সুযোগ লাভ করে।
রোজার গুরুত্ব আরোপ করে মহান আল্লাহ পাক বলেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ রমজান মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে। রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন রমজান এমন একটি মহান মাস যাতে মানুষের হেদায়েত এবং হেদায়েত বিষয়ক প্রকাশ্য শিক্ষাপূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন।
রোজার ফজিলত
রমজান মাসে রোজা করা ফরজ প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য রোজা ফরজ। আর রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওম পালন করবে তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ আল্লাহতালা মাফ করে দেবেন। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে রোজার ফজিলত কেমন।
আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটকে রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকলো সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি।
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি দিক উল্লেখ করা যায়। যেমন
১. রোজা থাকা অবস্থায় ভুলবশত কিছু খাওয়া বা পান করার পর যদি মনে হয় রোজা ভেঙ্গে গেছে বলে ইচ্ছাকৃতভাবে আবার খেলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি বমি ভাব করে পরে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়।
৩. হস্তমৈথুন করার ফলেও রোজা ভেঙ্গে যায়।
৪. চোখে মুখে পানি দেওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে পানি গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় শরীরের কোথাও যদি কেটে যায় এবং সেই রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ে তাহলে রোজা ভেঙে যায়।
৬. মুখ খোলা রাখার কারণে বৃষ্টির পানি কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
তাহলে আমরা রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম যে কোন কোন কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়।
রোজা কত প্রকার ও কি কি
এবার আমরা জানব রোজা কত প্রকার ও কি কি তার সকল দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। রোজা মোট পাঁচ প্রকার যথাঃ
১. ফরজ রোজাঃ রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ
২. ওয়াজিব রোজাঃ সকল রোজা যারা মান্নত করে থাকে, নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে তা কাজা আদায় করা ওয়াজিব। আর কাফফারা রোজা আদায় করা ও ওয়াজিব।
৩. সুন্নত রোজাঃ মহরমের 10 তারিখের রোজা সুন্নত।
৪. নফল বা মুস্তাহাব রোজাঃ উপরোক্ত রোজাগুলো ব্যতীত সব রোজায় নফল বা মুস্তাহাব। যেমন প্রত্যেক মাসের ১৩ ১৪ ১৫ তারিখের রোজা এবং সাওয়াল মাসের 6 রোজায় ইত্যাদি।
৫. মাকরুহ রোজাঃ মাকরুহ দুই প্রকার একটি মাকরুহে তাহরীমা আর অপরটি হচ্ছে মাকরুহে তানযীহ
রোজার কাযা ও কাফফারা
আমরা প্রথমে জানলাম রোজা অর্থ কি কিভাবে রোজা পালন করতে হয় রোজার ফজিলত এবার জানব রোজার কাজা ও কাফফারা কিভাবে করতে হয়।রমজান মাসে যারা পীড়িত, যাদের দৈহিক ভীষণ দুর্বলতার কারণে রোজা পালন করা খুবই কষ্টদায়ক হয়, যারা ভ্রমণে থাকার কারণে সিয়াম পালন করতে পারে না, তাদের জন্য রোজার কাজা কাফফারা ইত্যাদি বদলা ব্যবস্থা স্থির করে ইসলামী শরীয়তে সুনির্দিষ্ট বিধি ব্যবস্থা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কলা চাষ পদ্ধতি - কলার বিভিন্ন জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
রোজার কাজা ও কাফফারা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময়ের রোজার সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা (সিয়াম )যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফর্তভাবে সৎ কাজ করে, তবে সেটা তার পক্ষে অধিকতর কল্যাণকর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে তবে বুঝতে সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণ প্রসূ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াতঃ ১৮৪ )
রোজার ফরজ
রমজানে রোজার ফরজ দুইটি যথাঃ ১. সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকা। ২. রোজার নিয়ত করা
রোজার সুন্নত
রমজানে রোজার ফরজের পাশাপাশি কিছু সুন্নত রয়েছে। রমজানে রোজার সুন্নাত সমূহ গুলো হলঃ
১. সর্বদা নেক কাজ করা
২. শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তথা হাত, পা, নাক, কান, চোখ, মুখ,জিহ্বা এবং অন্তরের রোজা পালন করা
৩. গরিবদেরকে ও মসজিদ-মাদ্রাসার দান করা
৪. সর্বদা দোয়া দরুদ তাজবি তাহলিল ও কোরআন তেলোয়াত করতে থাকা
৫. সময়মতো ইফতার করা
৬. পবিত্র রমজান মাসের মধ্যে এতেকাফ করা
তাহলে আমরা জানলাম রোজার কিছু সুন্নত সমূহ। আমরা আগেই জেনেছি রোজা কি রোজার অর্থ কি এবার জানব রোজার নিয়ত কিভাবে করতে হয়। তাহলে জেনে নেওয়া যাক রোজার নিয়ত সমূহ
রোজার নিয়ত
রমজানে রোজার জন্য শুধু নিয়াত করে নেওয়াই যথেষ্ট যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখব কিংবা দিনে (১১ টার আগে) এই নিয়ত করাই যথেষ্ট যে আজ রোজা রাখব। যদি কেউ আরবি রোজার নিয়ত করতে চাই তাহলে এরূপ ভাবে করবে
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম
বাংলায় রোজার নিয়তঃ হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানে তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
তাহলে আমরা রোজার নিয়ত সম্পর্কে আরবি এবং বাংলা নিয়ত জানলাম। সর্বশেষ কথা রোজা অর্থ কি, রোজা কত প্রকার, রোজার ফরজ, রোজার নিয়ত সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম। উপরোক্ত নিয়ম মেনে রোজা রাখলে রোজা ফরজ হবে।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url