আকিকা শব্দের অর্থ কি - আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনারা আকিকার শব্দের অর্থ কি কমবেশি সবাই জানেন। কারণ আকিকা হল মুসলমানদের ধর্মীয় কাজ। আর এই আকিকা সন্তানদের জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসেবে পরিগণিত। সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য আকিকা করা হয়ে থাকে। আর এই আকিকা সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রত্যেক শিশুরই আকিকা করা জরুরী।
আকিকা হলো আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের একটি বড় উপায়। আর এই আকিকার মাধ্যমে সন্তানের সকল প্রকার বালা-মুসিবত দূর হয়। সন্তান জন্মের পরে প্রত্যেক পরিবারের উচিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নিয়ম অনুযায়ী আকিকা করা। এখন আমরা জানবো আকিকার শব্দের অর্থ কি ?
পোস্ট সূচিপত্রঃ আকিকা শব্দের অর্থ কি - আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন
- আকিকা শব্দের অর্থ কি
- আকিকা করার সময়
- আকিকা দেওয়ার নিয়ম
- গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
- কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
- আকিকার মাংস বিতরণের নিয়ম
আকিকা শব্দের অর্থ কি
ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্মগ্রহণ করার পরে আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশী হিসাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ও আল্লাহকে খুশি করার জন্য যে পশু জবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। তাহলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারলাম যে আকিকা শব্দের অর্থ কি।
আরো পড়ুনঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
অধিকাংশ আলেম এর মতে সন্তানের আকিকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি তার সন্তানের আকিকা করতে চায়, সে যেন উহা পালন করে। (সূনান নাসাঈ, হাঃ৪২১৩) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, প্রতিটি সন্তানই আকিকার বিনিময়ে আটকে থাকে।
আকিকা করার সময়
আকিকা করার জন্য উত্তম সময় হলো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে। কিন্তু সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা দিতে না পারলে ১৪ম দিনে, তাও না করতে পারলে ২১তম, দিনে আকিকা দিতে হবে। কিন্তু আকিকা করার সময় হল সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে, আকিকা করার পাশাপাশি সন্তানের সুন্দরতম নাম রাখা ও মাথার চুল হালাক করা এবং চুলের সমপরিমাণ ওজনের রৌপ্য ছাদকাহ করা মুস্তাহাব। (তিরমিজী,হাঃ১৫২২)
আরো পড়ুনঃ যাকাত কি - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
কিন্তু যদি কেউ কোন কারণ ছাড়া আকিকা দেওয়াতে বিলম্ব করে তাহলে সেটা সুন্নতের বিরোধিতা করার অন্তর্ভুক্ত। দারিদ্র্য বা অন্য কোন কারণে যদি পূর্ব ঘোষিত দিনে আকিকা করতে অক্ষম হয়, তাহলে সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় যখন অভাব দূর হবে তখনই আকিকা করতে হবে। এমন কি কারো পিতা-মাতা যদি আকিকা না করে, সে ব্যক্তি বড় হয়ে নিজের আকিকার নিজে করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আনাছ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) নবুয়ত পাওয়ার পর নিজের আকিকা নিজেই করেছেন। (বায়হাকী)।
আকিকা দেওয়ার নিয়ম
আকিকার ক্ষেত্রে সুন্নত হল, ছেলের সন্তান হলে দুটি দুম্বা বা ছাগল আর মেয়ে সন্তান হলে একটি দুম্বা বা ছাগল দিয়ে আকিকা করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহ (সাঃ) বলেন, ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি সমবয়সের ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা দিতে হবে। (আবু দাউদ,হাঃ২৮৩৪) তাহলে আমরা আকিকার দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম যে আকিকা কিভাবে করতে হয়।
এছাড়াও কুরবানীর ক্ষেত্রে যে বয়সের ছাগল বা দুম্বা প্রযোজ্য ঠিক তদ্রুপ পশুদিয়ে আকিকা করতে হবে। অর্থাৎ কুরবানীর পশু যে সমস্ত দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত হওয়ার শর্ত আকিকার ছাগল খাসি বা দুম্বা ও সে সমস্ত দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে। তবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষে একটি ছাগল দিয়ে সন্তানের আকিকা করা উচিত নয়। কিন্তু সন্তানের আকিকার জন্য দুটি ছাগল বা দুম্বা হওয়া জরুরি নয় বরং মুস্তাহাব।
গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
গরু, মহিষ, বা উট সাতটি ছাগলের সমান ধরে যেভাবে কোরবানি করা যায় অনুরূপ আকিকা করা যাবে। তাহলে গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। বড় পশু অর্থাৎ গরু, মহিষ, উট, ইত্যাদিতে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে। হযরত আনাস (রা.) উট দ্বারা সন্তানদের আকিকা করেছেন।
আরো পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলন - ভাষা শহীদদের নাম ও পরিচয় জেনে নিন
কোন কোন আলেম এর মতে কুরবানীর মত আকিকা ও কয়েকজনের জন্য একটি গরু বা মহিষ দ্বারা করা যাবে। গরু -মহিষ দিয়ে আকিকা করা জায়েয হলেও ছাগল দ্বারা আকিকা করাই উত্তম। কেননা ছাগল দিয়ে আকিকা করার কথা হাদীস শরীফে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা জানব যে কিভাবে কোরবানির সাথে আকিকা দেওয়া যায়।
কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
কুরবানির সাথে আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা যায় যে কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করা বৈধ বলে উল্লেখ রয়েছে। একটি পশুতে তিন শরিক কুরবানী হলে সেখানে আরো দু-এক শরিক আকিকার জন্য ও দেওয়া যেতে পারে। তদ্রূপ কোরবানির মত একই পশুতে একাধিক ব্যক্তির শরিক হয়ে আকিকা আদায় করতে পারবে।
আকিকার মাংস বিতরণের নিয়ম
আকিকার মাংস কোরবানির গোশতের মতোই বিতরণ করতে হয়। আকিকার মাংস আগে নিজে খাবে, আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়াবে পরিশেষে গরীব-মিসকিনকে ছাদকা করবে। এছাড়াও আকিকার মাংস যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় তাতেও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে, কোনক্রমেই যাতে হাদিয়া ও উপহারের আশায় শুধুমাত্র ধনী ও সম্মানী লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে দরিদ্র ও অভাবী ব্যাক্তিদেরকে প্রত্যাক্ষণ না করা। যা আমাদের দেশে অধিকাংশ সমাজে বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে হয়ে থাকে। তবে সন্তান জন্মগ্রহণের দিন কিছু মানুষ যে অনুষ্ঠান করে থাকে বা প্রতিবছর সন্তানের জন্ম দিবস পালন করে থাকে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান করে থাকে, তা সম্পূর্ণ বিদআত।
শুধু বিদআতই নয় বরং তা অমুসলিম ইহুদী-খ্রিষ্টানদের অনুসরণও বটে। তাই আকিকার মাংস বিতরণের নিয়ম জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুসরণ করবে, সে উক্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ,হাঃ ৪০৩১, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদঃ২/৫)
উপরোক্ত আলোচনা শেষে আমরা জানতে পারলাম যে আটিকা শব্দের অর্থ কি কিভাবে আকিকা দেওয়া হয় এবং আকিকা দেওয়ার উপকারিতা কি। তাই আমাদের সবার উচিত সময় মত আকিকা দেওয়া এবং আকিকার সকল নিয়ম-নীতি মেনে চলা।
সর্বশেষ কথা এমন নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন। এছাড়াও আপনারা চাইলে আপনাদের মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদের চাহিদা মত সকল পোস্ট আপলোড করতে সক্ষম হব এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
নিউ বাংলা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url